তৃপ্তি

তৃপ্তি

—সুদীপ চন্দ্র হালদার

তৃপ্তি তুমি যে বড়ই অতৃপ্ত চিরদিনই,
কেন তব স্বভাব এমন থাক অতৃপ্ত?
সুখানন্দের চেয়ে বড় তুমি তাই বুঝি
গরিমা এমনি, প্রশান্তির আধার হে তুমি।

তৃপ্তি কোথায় তোমার নিবাস, কোথায় বিচরণ,
তুমি কি থাক আমার ভিক্ষুক বোনকে দেয়া পঞ্চাশ টাকাতে, যে বলেছিল খিদে লেগেছে-ভাত খাব আমি,
নাকি হাজার টাকা খচ্চার ফাস্টফুডের আড্ডাতে।

তুমি কি থাক তথাকথিত মর্যাদার ব্রান্ডের শার্টে,
নাকি শীতার্ত ভাইটির চটের ছালা বদলে দেয়া
দু’শ টাকার কম্বল আর এক’শ টাকার সোয়েটার
গায়ে জড়িয়ে হাসিমুখে বলা বড় খুশি হয়েছি তে।

তুমি কি থাক দুপুর বেলায় আমার দুয়ারে ছিন্নবস্ত্রে দাড়ানো, দুমুঠো চালের আশায় থাকা মহান
অতিথিকে অতি অযত্নে দেয়া এক প্লেট ভাতে,
নাকি মান-যশের আশায় বাড়ির বড় মহোৎসবে।

তুমি কি থাক ডাক্তার বাবুর মৃত রোগীকে আইসিইউ
রেখে উপার্জিত দশহাজার টাকায় কেনা পরকীয়ায় মত্ত বউয়ের জন্য কেনা দামী শাড়িতে, নাকি মাত্র দু’শ
টাকা ফিস মওকুপে গরীর রোগীর মুখের শুভাশীষে।

তুমি কি থাক পুলিশ কর্মকর্তার ঘুষ খেয়ে মামলা
নথিভুক্তি আর অসত্য অভিযোগ পত্র দাখিলে,
নাকি হাত ধরে বৃদ্ধার রাস্তা পারাপার আর সদ্য
ভূমিষ্ঠ মানব শিশুকে কুকুরের মুখ হতে উদ্ধারে।

তুমি কি থাক গরীবের ন্যায্য পাওনার দুইশো বস্তা চাল বেচে কেনা চেয়ারম্যানের জাপানি আরএক্স বাইকে,
নাকি ক্ষুধার্ত সন্তানের মুখে ভাত দিতে পারা অভাগিনী
বিধবা মাকে দেয়া মাত্র পাঁচ কেজি চালের পরমানন্দে।

তুমি কি থাক ‘হোয়াইট কলার ক্রাইম’ করা গ্রুপ কোম্পানির মালিককে বাঁচিয়ে ব্যারিস্টার সাহেবের
পাওয়া বিশ লাখে, নাকি অসাধু ওষুধ মাফিয়ার
শাস্তিতে সন্তান হারানো মায়ের আনন্দাশ্রু বিসর্জনে।

তুমি কি থাক বিছানায় দুশ্চিন্তায় শুয়ে শুয়ে নির্ঘুম
রাত কাটানো ক্ষমতা-পয়সাওয়ালা সচিবের হৃদয়ে,
নাকি রোদ্দুরে ধান কেটে ফেরা মোটা চালের ভাত
খেয়ে বিশ্বস্ত প্রেয়সীর পাশে কৃষকের নিশ্চিন্ত ঘুমে।

তুমি কি থাক ধনাঢ্যের সুন্দরী পতিতাকে নিয়ে বিশ
হাজারের ফ্যান্টাসিতে, নাকি অনাথ বোনকে দেয়া পরীক্ষার সামান্য ফিস, মাত্র তিনশো পঞ্চাশের এক সেট সালোয়ার কামিজ আর দেয়া দশ টাকার বাদামে।

তৃপ্তি তুমি বড় চতুর এই ভুবন মাঝারে,
জ্ঞানী-বুদ্ধিমানেরেও নিমেশে দাও ধোকা,
ডুবিয়ে সুখানন্দের ক্ষণিক মোহেতে সদা;
পরম প্রেয়সী তৃপ্তি! সুখানন্দ নহে, তুমিই দামী সর্বদা।