আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়: নানক

আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়: নানক

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, নির্বাচন পরাজয় ও আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। এটাই তাদের রাজনীতি। মহামারী করোনার মধ্যেও জীবন-জীবিকা সমন্বয় করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি বাস্তব সম্মত বাজেট প্রকাশ করা হয়। সেখানেও বিএনপি নামক একটি দল পানি ঘোলা করার চেষ্টা করেছে।

বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক বক্তব্যের সমালোচনা করে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, তিনি আবার যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচন ও আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন নির্বাচন বয়কট করে মূলত গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। যারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় তারা ভীতু ও অগণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রয়াত জননেতা মোহাম্মদ নাসিমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণ সভায় তিনি একথা বলেন। ঢাকাস্থ সিরাজগঞ্জ সাংবাদিক সমিতি এই স্মরণ সভার আয়োজন করে।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। আজও হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরদর্শন নেতৃত্বের কারণে শুধু দেশের রাজনীতিতে নয়, বিশ্ব রাজনীতিতে তিনি আদর্শপ্রিয় নেতা পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা বিশ্ব রাজনীতিতে একটি আদর্শ পর্যায় পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্ব যখন মহামরি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, বাংলাদেশে বাদ যায়নি। তখন শেখ হাসিনার সুযোগ্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তার কারণে বাংলাদেশে বহুগুণে রক্ষা পেয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তছনছ হয়ে গেছে, সেখানে আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশর পরিস্থিতি বহুগুণে স্বাভাবিক রয়েছে।

মোহাম্মদ নাসিম বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্য নিবেদিত ছিলেন উল্লেখ করে নানক বলেন, আমাদের মুরব্বি বলতে নাসিম ভাই ছিলেন। আমাদের ভাই বলতে নাসিম ভাই ছিলেন। আমাদের নেতা বলতে একটি আস্থার ঠিকানা ছিল মোহাম্মদ নাসিম। যার সঙ্গে আমরা রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা করতে পারতাম সাবলীলভাবে। বন্ধু সুলভভাবে, ভাই সমতুল্য হিসাবে আমরা সকল বিষয়গুলি নিদ্বিধায় আলোচনা করতে পারতাম। সদা হাস্বোজ্জল এই মানুষটি সদালাপী এই মানুষটি অত্যন্ত প্রাণো”ছলভাবে সমস্ত বিষয়গুলি তিনি আলোচনা করতেন।

মোহাম্মদ নাসিমের রাজনৈতিক দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও একজন জনবান্ধব নেতার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকের রাজনৈতিক অঙ্গণে বা আওয়ামী রাজনৈতিক অঙ্গণে আসলে একজন আরেকজনের সঙ্গে দেখা হলে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দল নিয়ে, সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা এটি এখন খুব ছোট্ট হয়ে গেছে, এটা এখন অকল্পনীয় হয়ে গিয়েছে। সেই পরিস্তিতিতে নাসিম ভাইয়ের মতো মানুষের না ফেরার দেশে চলে যাওয়া। নেত্রী সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এক বিশ^স্ত কাণ্ডারীকে হারিয়েছেন। হারিয়েছেন তার এক আপনজনকে। এই শূন্যতা পূরণ হবার নয়। আমরা হারিয়েছি একজন সংগ্রামী বীর মানুষকে এবং শেখ হাসিনার শতভাগ বিশ^স্ত এক কান্ডারীকে। যিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রশ্নে কোনদিন আপোষ করেননি, কোনদিন তা থেকে বিচ্যুত হননি। সেই মানুষটির রাজনৈতিক জীবন আমাদের কাছে পাথেয়, আমাদের কাছে শিক্ষণীয়।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানি সম্পাদক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামূল হক শামীম বলেছের, মোহাম্মদ নাসিম তার বাবা মনসুর আলীর মতোই সাহসী আওয়ামী লীগের জন্য নির্ভীক সৈনিক ছিলেন। কোনোদিন কারো সঙ্গে আপোষ করেনি। তিনি ছিলেন আপোষহীন নেতা।

তিনি বলেন, মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগ ও দেশের মানুষের কাছে থেকে চলে গেছেন। তার চলে যাওয়ায় জাতীয় রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাছে তিনি ছিলে বিশস্ত নেতা। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা থাকবে, ততদিন মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এনামূল শামীম বলেন, মোহাম্মদ নাসিম একজন পরিশ্রমি নেতা ছিলেন। তিনি সব নেতাকর্মীদের আগলিয়ে রাখার চেষ্টা করতেন। বিএনপি’র আমলে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলীয় থাকাকালীন সময়ে সকল আন্দোলন সংগ্রামে তার ভূমিকা ছিল অপরিহার্য।

মোহাম্মদ নাসিমের পরিবারের কখনও বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি উল্লেখ্য করে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, বলেন, ৭৫’এ ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারের হত্যা হওয়ার পর ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বঙ্গবন্ধু রক্তের উপর পা রেখে অনেক বড় হতে পারতেন। কিন্তু তিনি বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। পিতার মতোই বিশ্বাসঘাতকতা করেনি মোহাম্মদ নাসিম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি, বঙ্গবন্ধুর রক্ত সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে আশার পর মোহাম্মদ নাসিম তার পাশে থেকে আওয়ামী লীগকে সু-সংগঠিত করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জননেত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্ব নিয়ে কখনোই প্রশ্ন করেননি। শেখ হাসিনার প্রতি মোহাম্মদ নাসিমের অবাধ বিশ্বাস ও আস্থা ছিলো।

 

সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বাবার স্মৃতি স্মরণে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, গণমাধ্যম কর্মীরা এবং আমাদের নিয়েই ছিল আমার বাবা মোহাম্মদ নাসিমের পরিবার। কিন্তু তিনি নিজের পরিবার থেকে সব সময় নেতাকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের মূল্যায়ন করতেন।

 

ঢাকাস্থ সিরাজগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি তৈমুর ফারুক তুষারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রনির সঞ্চলনায় স্মরণ সভায় আরও বক্তব্যে রাখেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মণ্ডল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের কোষাধক্ষ্য শাহেদ চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজিদ রাসেল, ঢাকাস্থ সিরাজগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি শাহনেওয়াজ দুলাল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য মানিক লাল ঘোষ প্রমুখ।