নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, আর থামবে না: প্রধান উপদেষ্টা

জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ 
নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, আর থামবে না: প্রধান উপদেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধি: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মধ্যদিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর। নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটা আর থামবে না। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে এসব মতামত অনেকাংশে প্রতিফলিত হচ্ছে। তিনি বলেন, দৈনন্দিন রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি ভবিষ্যতের বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথাও ভাবতে হচ্ছে। চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় তাদের প্রতিটি মতামত সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে, ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যেই সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশমালা সরকারের কাছে পেশ করতে পারবে। তাদের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ক্রমাগতভাবে আলোচনায় বসবো। সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই আমরা সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করবো।

রোববার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ৩৪ মিনিটের এক ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। ভাষণের শুরুতেই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহিদ এবং গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সব শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন কবে হবে এই প্রশ্ন সবার মনেই আছে। আমাদের মনেও সারাক্ষণ আছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে যাবে। তারপর থেকে নির্বাচন আয়োজন করার সমস্ত দায়িত্ব তাদের উপর বর্তাবে। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হাল নাগাদসহ আরো কিছু কাজ শুরু করে দিতে পারবে যা একটি অবাধ নির্বাচনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। প্রথম বারের মত প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে লক্ষ্যেও সরকার কাজ করছে। একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিলেই নির্বাচন আয়োজনে আমাদের দায়িত্ব শেষ। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংস্কার এই সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। যে ছয়টি সংস্কার কমিশন আমরা শুরুতে গঠন করেছিলাম তারা ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আপনারা তাদের কার্যক্রমের আপডেটও দেখছেন। কয়েকটি সংস্কার কমিশন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছে। প্রথম ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে একটি হলো নির্বাচন সংস্কার কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এই কমিশনের সুপারিশমালা অত্যন্ত জরুরি।

সরকার প্রধান বলেন, নির্বাচন নিয়ে সকল বক্তব্য বিনাদ্বিধায় বলতে থাকুন। আমার অনুরোধ সংস্কারের কথাটাও একই সঙ্গে বলুন। সংস্কারকে পাশ কাটিয়ে যাবেন না। নির্বাচনের কথা বলার সঙ্গে নির্বাচন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কারের কথাটিও বলুন। সংস্কার হলো জাতির দীর্ঘ মেয়াদি জীবনী শক্তি। সংস্কার জাতিকে বিশেষ করে আমাদের তরুণ-তরুণীদের নতুন পৃথিবী সৃষ্টির সুযোগ দেবে। জাতিকে বঞ্চিত করবেন না। নির্বাচন আয়োজনে যে সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালায় রাজনৈতিক দলসমূহ এবং দেশের সব মানুষের মতামত অপরিহার্য সে কমিশন হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই সুপারিশমালার কোন অংশ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে তার ভিত্তিতে নির্বাচনী আইন সংশোধন করতে হবে। সমান্তরাল ভাবে ভোটার তালিকা হাল নাগাদ করার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। অন্তর্র্বতী সরকার সৃষ্টি হয়েছে রাজনীতিকে নীতির কাঠামোয় আনার জন্য, এবং রাজনীতির জন্য নতুন পরিবেশ সৃষ্টির নিবিড় আকাঙ্ক্ষা থেকে। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা থেকে জাতিকে বঞ্চিত করবেন না। আমরা দু’দিন পরে চলে যাবো।

তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছে। বাধ্য হয়ে তাদের অনেকেই গণহত্যায় অংশ নিয়েছেন। খুবই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা জনরোষের শিকার হয়েছেন। এতে তাদের মনোবল অনেক কমে যায়। আমরা পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে এনে তাদের আবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও কিছু নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতিতে সহায়তা করেছে। ধন্যবাদ জানাই, কঠিন এই সময়ে আপনারা সবাই অপরিসীম ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন। ধন্যবাদ জানাই দেশের রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে। তারা তাদের কর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিশোধ স্পৃহায় লিপ্ত হয়ে কেউ যাতে হানাহানিতে জড়িয়ে না পড়ে সেই আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্যাসিবাদী শক্তি ভয় দেখিয়েছিল তারা ক্ষমতা ছাড়লে দেশে লাখ লাখ লোক মারা পড়বে। টানা সাত দিন পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় থাকার পরও ব্যাপক আকারে সহিংসতা এড়ানো গেছে। আমরা সরকারের প্রথম ১০০ দিন অতিক্রম করলাম। কঠিন এক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব গণ অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট সরকার প্রধান পালিয়ে গেলে দেশ সরকার-শূন্য হয় সাময়িকভাবে। পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে উদ্বেগজনক এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরশাসনে বিপর্যস্ত দেশকে সবাইকে মিলে পুনর্গঠন করতে হচ্ছে। জুলাই-অগাস্ট বিপ্লবের পর এমন একটি দেশ হাতে পেয়েছি যার সর্বত্র ছিল বিশৃঙ্খলা। স্বৈরশাসন টিকিয়ে রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিপ্লব চলাকালে প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক জনতার শহিদি মৃত্যু হয়। সরকার প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে জোগাড় করছে। এই বিপ্লবে আহত হয়েছে ১৯ হাজার ৯৩১ জন। আহতদের ১৩টি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিনই তালিকায় নতুন শহিদের তথ্য যোগ হচ্ছে। প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবোই। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের কাজও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইবো। কেবল জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডই নয়, গত ১৫ বছরে সব অপকর্মের বিচার করবো। অসংখ্য মানুষ গুম ও খুন হয়েছে। আমরা গুমের তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছি। কমিশন প্রধান জানিয়েছেন অক্টোবর পর্যন্ত তারা ১ হাজার ৬শ’ গুমের তথ্য পেয়েছেন। তাদের ধারণা এই সংখ্যা ৩ হাজার ৫শ’ ছাড়িয়ে যাবে। আমি আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা দ্বিধাহীন চিত্তে গুম কমিশনকে আপনাদের অভিযোগ জানান।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গুম কমিশনের সদস্যদের কাছে ভুক্তভোগীদের যে বিবরণ পেয়েছি তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। ছাত্র-ছাত্রীরা শহর বন্দরের দেয়ালে-দেয়ালে তাদের মনের কথা লিখেছে। তাদেরও আগে যারা গুমের শিকার হয়েছে, প্রতিটি গোপন আস্তানার দেয়ালে-দেয়ালে তারা লিখে গেছেন, তাদের কষ্টের মর্মস্পর্শী বিবরণ। এসব কষ্টের কথা শুনে হৃদয় কেঁপে উঠেছে। এসবের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবোই। অভিযুক্ত যতই শক্তিশালী হোক, যে বাহিনীরই হোক তাকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেবল দেশে নয়, গুম, খুন ও জুলাই-আগস্ট গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের আমরা আন্তর্জাতিক আদালতেও বিচারের উদ্যোগ নিয়েছি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রধান কৌশলী করিম খানের সঙ্গে এ ব্যপারে ইতোমধ্যে কথা হয়েছে।

তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কোনো সদস্য কিংবা অন্য কেউ যাতে হত্যা, গুমসহ এ ধরনের কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে না পারে এ জন্য আমরা গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সাক্ষর করেছি। আপনারা দেখেছেন, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। জাতিসংঘ জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তারা তাদের রিপোর্ট হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অতীতের গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত কাজেও নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।

সরকার প্রধান বলেন, গণ-অভ্যুথানে সব শহিদদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। একজনও বাদ যাবে না। সব আহত শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। আহতদের দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহিদদের পরিবারের দেখা-শোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি শহিদ পরিবারকে ৩০ লক্ষ টাকা করে দেয়া হচ্ছে। যারা বুলেটের আঘাতে তাদের দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য নেপাল থেকে কর্নিয়া আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের কোন শহিদ এবং আহত ছাত্র শ্রমিক চিকিৎসা সেবা এবং পুনর্বাসন পরিকল্পনা থেকে বাদ যাবে না। শহিদদের স্মৃতি ধরে রাখতে গঠিত “জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন” বেশ পাকাপোক্তভাবে কাজ শুরু করেছে। এই ফাউন্ডেশনে সরকার ১০০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। এছাড়াও শহিদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বরাদ্দ প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছয়টি বন্যা হয়েছে। সবার সহযোগিতায় বন্যা মোকাবিলা করেছি। সশস্ত্র বাহিনী বন্যা মোকাবিলায় জনগণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। বন্যা মোকাবিলা ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান এবং স্থানীয় অনুদানের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।বন্যায় ফসলহানি হয়েছে। ব্যাহত হয়েছে পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খল। বন্যা পরবর্তী শাক-সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে আপনাদের কষ্ট হয়েছে। নিত্য পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ানোয় সাড়ে নয় কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। এজন্য শুল্ক ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। মধ্যস্বত্ব ভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে ডিমের উৎপাদনকারীরা যাতে সরবরাহ করতে পারে সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্পটে সরকারি কৃষি পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি নিম্ন আয়ের ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে ৫৭ লাখকে স্মার্ট কার্ডে রূপান্তরিত করা হয়েছে। চালের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্য সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে যাচ্ছে সরকার। মূল্যস্ফীতি রোধে উচ্চ সুদের হার নির্ধারণসহ একাধিক নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শস্য আমদানিতে এলসি সীমা অপসারণ এবং সরবরাহ চেইন সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। সামান্য হলেও জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো হয়েছে। শিল্প কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণ-শুনানি ছাড়া নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ গ্যাসের দাম না বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে। নেপাল থেকে পানিবিদ্যুত আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।

তিনি বলেন, দেশে সংগঠিত অন্যান্য অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় সহস্রাধিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টে ইতোমধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২৩ জন নতুন বিচারক। বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য সম্ভব সব ধরনের চেষ্টাই করা হচ্ছে। বিচারপতিদের নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করা হয়েছে। শুধু বিচার বিভাগই নয়, সর্বগ্রাসী দুর্নীতির হাত থেকে দেশের সব খাতকেই রক্ষা করতে সচেষ্ট রয়েছি। দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারে অভিযুক্ত প্রভাবশালী দেড়শ ব্যক্তির তালিকা তৈরি এবং ৭৯ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ, অর্থাৎ কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি কার্যক্রমকে গতিশীল করতে বিভিন্ন পর্যায়ের ১৯,০৮৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি, ১৩,৪২৯ জনকে বদলি এবং ১২,৬৩৬ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠন করা হয়েছে। কুখ্যাত সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই আইনের অধীনে হওয়া সেসব মামলা মানুষের মত প্রকাশের অধিকারের সাথে সম্পর্কিত সেগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়াও ১৩৩টি আইন, বিধিবিধান তৈরি ও সংশোধন করা হয়েছে এবং ৩৫৩টি গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে ইতোমধ্যে সরকারি চাকুরির বয়স সীমা ৩২-এ উন্নীত করা হয়েছে। আমরা জানি আমাদের কাছে আপনাদের আরো অনেক দাবি-দাওয়া আছে। প্রতিটি দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু সেজন্য সড়ক অবরোধ করে জন দুর্ভোগ সৃষ্টি করলে সকলেরই অসুবিধা হয়। আমাদের বৃহৎ রপ্তানি পণ্য গার্মেন্টস শিল্পে গত কিছু দিন ব্যাপক অস্থিরতা বিরাজ করেছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী বেশ কিছু গার্মেন্টস মালিক পালিয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অন্য অনেক কারখানায়ও শ্রমিকরা ন্যায্য বেতনসহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। শ্রমিকরা তাদের দীর্ঘ দিনের বঞ্চনার প্রতিবাদ জানাতে এবং অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পেতে রাস্তায় নেমে আসে। বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ছাড়াই আমরা শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন করতে পেরেছি। তারা আবার উৎপাদনে ফিরেছে। এতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী এই শিল্পও। নানা প্রতিকূলতা স্বত্বেও অক্টোবর মাসে আমাদের রপ্তানীতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে। গত তিন মাসে রিজার্ভে কোনো রকম হাত না দিয়েই আমরা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে পেরেছি। জ্বালানি তেল আমদানিতে পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ ৪৭৮ মিলিয়ন ডলার হতে কমিয়ে ১৬০ মিলিয়ন ডলারে আনতে পেরেছি। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ইতোমধ্যে ঋণ ও অনুদান হিসেবে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল করতে সক্ষম হবে। এরমধ্যেও জুলাইয়ের নেতিবাচক অবস্থা থেকে অক্টোবর নাগাদ রাজস্ব আদায়ে পৌনে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এর ফলে স্বৈরাচার পতনের পরবর্তী তিন মাসে পৌনে ৯ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির পরও লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৩ শতাংশের বেশি ঘাটতি থেকে যায়। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউএনডিপি ইত্যাদির প্রধানদের সঙ্গেও আমার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। তারাও বাংলাদেশকে নতুনভাবে এবং সর্বাত্মকভাবে সাহায্যের জন্য তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

সরকার প্রধান বলেন, ১০০ দিন আগে আর্থিক দিক থেকে আমরা যে লন্ডভন্ড অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম, সেটা এখন অতীত ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই একশো দিনে অর্থনীতি সবল অবস্থানে চলে এসেছে। বন্ধু রাষ্ট্রগুলি শুধু যে আমাদের বড় বড় অংকের সাহায্য নিয়ে আসছে। এই সাহায্য আসা শুরু করলে আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত মজবুত এবং আকর্ষনীয় অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও নানা রকম বিনিয়োগে উৎসাহীত হয়ে এগিয়ে আসবে। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এখন থেকে আমরা আলোচনা শুরু করে দিয়েছি। বিশ্বের রাষ্ট্রপুঞ্জের মজলিসে আমরা এখন সম্মানিত এবং প্রশংসিত দেশের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এর কারণে পরাজিত শক্তি নানা কৌশল করেও তাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না। পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন, দেশকে মুক্ত রাখুন। এমন কিছু করবেন না যা তাদেরকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। তাদেরকে সকল দিক থেকে নিরাশ করুন। বিপক্ষ শক্তি যত শক্তিশালীই হোক, নাশকতার যত রকমই উদ্ভট পরিকল্পনাই করুক, সব কিছু নস্যাৎ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন।

তিনি বলেন, পতিত সরকার ও তার দোসররা প্রতিবছর দেশ থেকে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ সম্প্রতি এই তথ্য দিয়েছে। পাচার হয়ে যাওয়া এই অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য সম্ভব সকল ধরনের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। এ কাজে সফল হতে পারলে আমাদের অর্থনীতি আরো গতি পাবে। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই বিশ্ব নেতৃবৃন্দকেও। বাংলাদেশের এই সংকটময় সময়ে তারা প্রায় সবাই সহযেগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি যখন সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেই, সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা, ইতালি, হল্যান্ড, জাতিসংঘ মহাসচিব-সহ বিশ্বের অনেক দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে আমার বৈঠক করার সুযোগ হয়। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তান-সহ প্রতিবেশী বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গেও আমার বৈঠক হয়েছে যেখানে আমি সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলেছি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২০ দেশের ২০ জন রাষ্ট্রদূত দিল্লিতে থাকেন। সাত দেশের সাত রাষ্ট্রদূত ঢাকায় আছেন। দিল্লি থেকে একসঙ্গে ২০ জন রাষ্ট্রদূতসহ মোট ২৭ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সমবেতভাবে আমার সঙ্গে বৈঠক করার জন্য আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকায় আসছেন। আগে কখনো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৭ জন রাষ্ট্রদূত একত্রিত হয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি। দিল্লী থেকে এ বিশাল সংখ্যক রাষ্ট্রদূত একসঙ্গে বৈঠক করার জন্য আসেনি। ইতোমধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রাজিল, তুরস্ক, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, লিবিয়া-সহ অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত। দ্বিপাক্ষিক নানা সহযোগিতাসহ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশ্বাস তারা দিয়েছেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও তরুণদের কর্মসংস্থানের মূলে রয়েছে বেসরকারি খাত। আমাদের বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান দুই শতাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীর সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন। নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মতবিনিময়ের অভাব, সরকারি অফিসের জটিল প্রক্রিয়া এবং সর্বোপরি দুর্নীতি, বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সমস্যায় ফেলেছে। আমরা প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করছি। আমার অনুরোধে সংযুক্ত আরব আমিরাত সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ জন সহ অন্যান্য বাংলাদেশিকে মুক্তি দিয়েছে। এসব বাংলাদেশি কারাবাসের ঝুঁকি নিয়ে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে প্রতিবাদ করেছি। কয়েকদিন আগে বাকুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট জনাব শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের জন্য যেকোন সাহায্য লাগলে আমি যেন তাকে জানাই। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। ১৮ হাজার বাংলাদেশি, যারা সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলার পরও স্বৈরাচারী সরকারের অব্যবস্থাপনার জন্য মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। তিনি তাদের জন্য মালয়েশিয়ার দ্বার আবার উন্মুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা ইতোমধ্যে আসিয়ানের সদস্য পদের জন্য আবেদন করেছি। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আমাদের আবেদন সক্রিয়ভাবে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। একই ধরনের আশ্বাস আমরা পেয়েছি ইন্দোনেশিয়া থেকেও। সৌদি আরবসহ বিশ্বের আরো অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। নতুন হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে হজের ব্যয় এক লাখ টাকারও বেশি কমিয়ে আনা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, এ বছর সরকারি খরচে কাউকে হজে পাঠানো হবেনা।

সরকার প্রধান আরও বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের দু’মাসের মাথায় দেশে দুর্গাপূজা উদ্যাপিত হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার পূজা মণ্ডপে। দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে নির্বাহী আদেশে একদিন অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করা হয় যা উৎসবের আমেজকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। দূর্গাপুজাকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুডু নেওয়ায় নির্বিঘ্নে তাদের উৎসব পালন করেছে। আমরা দায়িত্বে আসার পর যে অল্প কিছু ক্ষেত্রে তারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন আমরা তার প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করছি। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ই নয়, দেশের কোনো মানুষই যাতে কোনো রকম সহিংসতার শিকার না হয়, সেজন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।

তিনি বলেন, আমরা নতুন বাংলাদেশকে একটি পরিবেশ বান্ধব এবং জীব বৈচিত্র্যময় দেশ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। সমগ্র সচিবালয়ে প্লাস্টিকের পানির বোতল ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছি। ইতিমধ্যে সুপার শপগুলোতে পলিথিনের শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত কয়েক দশকে যে পরিমাণ নদী দূষণ হয়েছে, আমরা তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জীবনযাত্রার জন্য কীরকম হুমকি হয়ে আসছে। গত এক বছরে বাংলাদেশ প্রায় ১৫টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে। মানুষের সৃষ্ট নানাবিধ দুর্যোগের পাশাপাশি এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপক্ষেও আমাদের লড়তে হচ্ছে। আজারবাইজানে জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব, ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকার অনেক সরকার প্রধানের সঙ্গেই আমার দেখা হয়েছে। জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাব মোকাবিলাসহ গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সহযোগিতার অঙ্গীকার সবাই করেছেন।

এস/এ