নড়াইলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত প্রমত্তা মধুমতি নদী ভাঙনের কবলে

নড়াইলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত প্রমত্তা মধুমতি নদী ভাঙনের কবলে

উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে ।। নড়াইলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত প্রমত্তা মধুমতি নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে লোহাগড়া উপজেলার চাঁচাই গ্রামসহ শত বছরের কবরস্থান। এর মধ্যে বেশকিছু কবর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কিছু কবরের হাড়গোড় তুলে নিয়ে অন্যত্র কবর দিয়েছেন স্বজনরা। এছাড়া এই গ্রামের বেশকিছু বসতবাড়িও নদীগর্ভে চলে গেছে।

অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে কবরস্থানসহ গ্রামের অনেকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।  স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শত বছর আগে লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের চাচই ও ধানাইড় গ্রামসহ আশেপাশের এলাকাবাসীর চেষ্টায় কবরস্থানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শত বছরে এই কবরস্থানে কয়েকটি প্রজন্মের স্বজনরা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।

এই এলাকার মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও ভালোবাসা জড়িয়ে রয়েছে কবরস্থান ঘিরে। সুযোগ পেলেই গ্রামের মানুষ কবরস্থানে গিয়ে তাদের বাপ-দাদাসহ স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং দোয়া করেন। এছাড়া দেশ-বিদেশে অবস্থানরত এই দু’টি গ্রামের লোকজনও বাড়িতে এসে ছুটে যান কবরস্থানে। তারা তাদের বাপ-দাদাসহ আপনজনদের শেষ স্মৃতি কবর দেখতে এবং জিয়ারত করে মানসিক তৃপ্তি নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন।

চাঁচাই গ্রামের বাসিন্দা আফজাল সিকদার নিশান বলেন, এই কবরস্থানটি দু’টি গ্রামবাসীর সহযোগিতায় আমার দাদা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কবরস্থানটিতে শত শত মানুষ চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় চাঁচাই কেন্দ্রীয় কবরস্থানের প্রায় ৫০০ গজ পশ্চিমে নদী শাসন প্রক্রিয়ায় জিওব্যাগ ফেলার কারণে নদীর গতিপথ কবরস্থানের দিকে ধাবিত হয়। ফলে কবরস্থান আজ বিলুপ্তপ্রায়। গ্ৰামের অনেক পরিবার তার স্বজনদের শেষ স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে হাড়গোড় ও কঙ্কাল খুঁড়ে নিয়ে অন্যত্র কবরস্থ করছেন। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি কবর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জরুরিভাবে কবরস্থানটি সংরক্ষণ করা না হলে এই এলাকার মানুষের পূর্ব-পুরুষের স্মৃতি সম্বলিত কবরগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

এই গ্রামের সন্তান বুলবুল সিকদার বলেন, আমাদের কবরস্থানটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পাশাপাশি গ্রামের বসতবাড়ি, বনাঞ্চল ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়নবোর্ড যদি দ্রুত জিওব্যাগ ফেলে প্রতিরোধ করে তাহলে কবরস্থানটি রক্ষা করা সম্ভব হবে। নদী ভাঙনের কারণে কবরস্থানের পাশের নির্মিত নতুন পাঁকা রাস্তা, ফসলি জমি ও আশেপাশের প্রায় এক হাজার জনবসতি হুমকির মুখে। ৬ নম্বর জয়পুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, এরই মধ্যে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম কবরস্থান পরিদর্শন করেছেন। আশা করছি, তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্বল কুমার সেন বলেন, লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের চাঁচাই গ্রামের শত বছরের কবরস্থানটি নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। এছাড়া গ্রামেও কিছু কিছু স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। জিওব্যাগ দিয়ে প্রাথমিকভাবে ভাঙন প্রতিরোধ করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স/এষ্