রাজারহাটে কমেছে পানি বাড়ছে ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি
সরকার অরুণ যদু, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) ।। রাজারহাটে বিপদ ছাড়ছে না তিস্তা পাড়ের মানুষের। ফের শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। ফলে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকায়।
তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে খিতাবখাঁ ও চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের দাড়প্রান্তে উপনীত হয়েছে। এছাড়া কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিরহাট বাজার, বুড়িরহাট বাজারসহ দুটি ইউনিয়নের ৪টি মসজিদ, দুটি মন্দির, বিভিন্ন স্থাপনা ও শত শত একর ফসলি জমি এবং সহস্রাধিক বসতভিটা ভাঙন হুমকির সম্মূখীন পড়েছে।
জানা গেছে, গত তিন দিনের মধ্যে নদী ভাঙনে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের খিতাবখাঁ, বড়দড়গা, চর খিতাবখাঁ কালিরহাট, রামহরি ও চুুতুরা মৌজায় নতুন করে ২৫টি বসতভিটেসহ কয়েকশত বিঘা ফসলি জমি ও গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এনিয়ে চলতি মৌসুমে ২ শতাধিক বসতভিটে, ফসলি জমি এবং গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভিটেমাটি হারা এসব মানুষদের অনেকে বাঁধের রাস্তাসহ অন্যের জায়গা-জমিতে কোন রকম বসতি স্থাপন করে ও অনেকে খোলা আকাশের নীচে নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
এরমধ্যে রাক্ষুসে তিস্তার প্রবল ভাঙনে রাজারহাট উপজেলার খিতবখাঁ ও চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের দাড়প্রান্তে উপনীত হয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে বিদ্যালয় দুটি আদৌ রক্ষা করা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
এদিকে তীব্র ভাঙনে খিতাবখাঁ ও চর খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সন্নিকটে এসে গেছে তিস্তা নদী। বিদ্যালয়টি রক্ষা করতে প্রাণপন চেষ্টা চালাচ্ছেন পাউবো। গত কয়েকদিন ধরে নিয়মিত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন তারা।
এরপরও শঙ্কা কাটছে না। এরমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অবস্থিত রেন্টি কড়াই সহ মূল্যবান গাছগুলো নিলামে বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধির চন্দ্র।
এই বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে চলে গেলে বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন সহ কোটি টাকার সম্পদ ও বিদ্যালয়ের হাজারো স্মৃতি চাপা পড়ে যাবে নদী গর্ভে। চর খিতাবখাঁ গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, স্কুলটা নদীত গেইলে গ্রামের ছাওয়া গুলার আর লেখাপড়া হবার নয়। মোরও একটা নাতিও আছে এই ইস্কুলোত পড়ে।
খিতাবখাঁ গ্রামের ওছিয়ত বলেন, এই তো দুই দিন আগত হ্যামার মাথা গোঁজার ঠাই কোনাও নদীত গেলো, হ্যামরা এ্যালা খালি আসমানের তলোত থাকি। বাড়িঘর গেলো-গেলো।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন মন্ডল বলেন, আশেপাশে তিন কিলোমিটারের মধ্যে আর কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এটি নদী গর্ভে বিলীন হলে এই এলাকার শতশত শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
খিতাবখাঁ গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, দেখতে দেখতেই চোখের সামনে বসতভিটা নদী গর্ভে গেলেও রক্ষা করবের পাই নাই। এখন পরিবার-পরিজন দিয়ে কোথায় যামো-কিখামো জানি না। চতুরা গ্রামের মিলন মিয়া বলেন, প্রতি বছর ভাঙনে এলাকার শত শত মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছে, তারপরও আমরা ত্রাণ চাই না। অবিলম্বে তিস্তা মহা-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক এটাই আমাদের দাবি।
খিতাবখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধির চন্দ্র বলেন, জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয়টি সহ আশেপাশের নদী ভাঙন ঠেকাতে না পারলে বিদ্যালয় সহ গ্রামের অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
স/এষ্