জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত

জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত

বিশেষ প্রতিনিধি: সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে নামে সারাদেশে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টসহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে হতাহতের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত শিবির জড়িত। এরইপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট। আর কার্যকর করবে সরকার।

সোমবার গণভবনে বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতাদের সঙ্গে বেঠক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বৈঠকে থেকে জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সারাদেশে তান্ডব চালায় বিএনপি-জামায়াত। এতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টসহ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবি সরকার মেনে নেওয়ার পরেও বিএনপি-জামায়াত এখনও আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। ফলে চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বৈঠকে বিএনপি-জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দেন ১৪ দলীয় জোট নেতারা। এই পরামর্শে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় ১৪ দলের নেতারা বলেন, খুব শিগগিরই নিষিদ্ধ করতে হবে। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার পরামর্শ দিয়েছেন। আমি গ্রহণ করলাম। এ জনই আপনাদের জরুরি ভিত্তিতে ডেকেছি। খুব শিগগিরই সরকার ব্যবস্থা নেবে। পরে ১৪ দলীয় জোট নেতারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইস্যুতে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করেন। তারা বলেন, আমলা দিয়ে দেশ চালালে এমন ঘটনাই ঘটবে। মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বাড়াবাড়ির কারণে কিন্তু পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে। এর উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, সত্যি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বেশি বাড়াবাড়ি করছে। ও এগুলো না করলেই পারতো। ও এতো উল্লাসিত কেন? আমি এ বিষয়ে কথা বলবো।

এসময় কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের নেতারা বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি একটু নিযন্ত্রণে এনে শিক্ষাঙ্গন খুলে দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে শিক্ষাঙ্গনের নিরাপদ পরিবেশ রাখতে প্রশাসনকে আরও সহনীয় হতে হবে। যেসব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলো দ্রুত নেওয়া ব্যবস্থা করার বিকল্প নেই। সেটি না হলে শিক্ষার্থীরা হতাশায় ভুগবে। আর কোনো শিক্ষার্থীকে যেন হয়রানি, নির্যাতন, অত্যাচার না করা হয়। আর কোনো শিক্ষার্থীদের ওপর যেন গুলি করা না হয়। কোনো শিক্ষার্থীকে যেন গ্রেফতার করা না হয়। আর যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা নিরাপরাধ তাধের ছেড়ে দিতে হবে। কারণ ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরকারকে নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। জনগণের মধ্যে আস্থা হীনতা তেরি হয়েছে। এই জায়গা থেকে সরকারকে বেরি এসে আস্থা তৈরি করতে হবে। এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের পরামর্শ সঠিক। পরে ১৪ দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ১৪ দলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ১৪ দলের জোটকে মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে।

বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে জঙ্গীবাদী কাজ হিসেবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জামায়াত-শিবির, বিএনপির জঙ্গীরা আজকে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে। এখানে থাবা দিয়েছে শিবির, ছাত্রদল, বিএনপি-জামায়াত। এরাই জঙ্গী। এই জঙ্গীরাই কিন্তু আজকে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে। বাংলাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, আসলে এটা কোন রাজনৈতিক কিছু না। এটা সম্পূর্ণ জঙ্গীবাদী কাজ। একেবারে জঙ্গীবাদী কাজ।

কোটা সংস্কারের দাবি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এদের উদ্দেশ্যটা এখন বোঝা যাচ্ছে যে কোটা কোনো ইস্যু না। একে একে যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সেবা দেয়, যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মানুষের জীবন মান উন্নত করে, সেটাই ধ্বংস করা। অর্থাৎ বাংলাদেশটাকেই যেন ধ্বংস করে ফেলা।

বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের নাম শুনলে সবাই সমীহ করে মন্তব্য করে টানা চার বারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশে উন্নয়ন হয়েছে, উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ আজকে বিশ্বব্যাপী একটা মর্যাদার আসন পেয়ে গেছে। বাংলাদেশের নাম শুনলে সবাই সমীহ করে চলে। সবাই সম্মানের চোখে দেখে। একটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে আমরা তুলে আনতে সক্ষম হয়েছি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে, অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে।

এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গির কবির নানক, আব্দুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বাসদ আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধে ১৪ দল একমত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্যের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী অপশক্তি নির্মূল করার জন্য ১৪ দলের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা রাশেদ খান মেনন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সারাদেশে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। এরই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের জরুরি বৈঠক হয়েছে। এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার। এখন বাকিটুকু সরকার করবে। আমরা এখন অপেক্ষায় আছি।

জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বলেন, আজ মূলত জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৪ দলীয় জোটকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলেছেন জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ১৪ দল শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সরকারকে আরও নমনীয় হওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে।

বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সারাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে জামায়াত-শিবির। তাই আমরা জোট নেত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছি, এখনই জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হোক। আমাদের পরামর্শে এ বৈঠকেও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন বাকিটুকু সরকার পদক্ষেপ নেবে।

এস/এ