সংকটে পঞ্চগড়ের চা শিল্প
মো. রনি মিয়াজী, পঞ্চগড় ।। দীর্ঘদিন থেকে উৎপাদনে বাংলদেশের দ্বিতীয় চা অঞ্চল পঞ্চগড়ের চা চাষ নানামুখী সংকটে পড়েছে। কাঁচা চা পাতার দরপতন, কালোবাজারে চা বিক্রি, প্রক্রিয়াজাতকরন কারখানা মালিকদের সিন্ডিকেট এবং দালালদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা চা চাষি।
প্রশাসন ও চা বোর্ডের অভিযান এবং গুণগত মানের চা উৎপাদনে বিভিন্ন প্রদক্ষেপের পরেও কাটছে না এই শিল্পের সংকট। এমন অবস্থা থেকে উত্তরনের পথ খুঁজতে এবং চা শিল্পের উন্নয়নে অংশীজনদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৯ জুলাই) দুপুরে পঞ্চগড় চেম্বার ভবনে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া এর সহযোগীতায় স্মল টি গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এই সভার আয়োজন করেন।
স্মল টি গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল হক খোকনের সভাপতিত্বে পঞ্চগড় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান শেখ, বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্য্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন, চা চাষি, কারখানা মালিক, ব্রোকার হাউসের মালিক, বায়ার এবং বিডাররা বক্তব্য দিয়ে মতামত তুলে ধরেন।
সভায় ক্ষুদ্র চা চাষিরা জানান গত ২০২০ সাল হতে পঞ্চগড়ে কাচা চা পাতার দরপতন হয়েছে। সেই সাথে কারখানা কতৃপক্ষের নানা অজুহাতে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কর্তনে উৎপাদন খরচও মিলছেনা চাষিদের। এমন অবস্থার যদি নিরসন না হয় তাহলে ভবিষ্যতে চা বাগান উপড়ে ফেলা ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা।
বাগান মালিক ও অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা জানান বহুবার আমরা সভা করেছি কিন্ত কালোবাজারে চা অবাধে বিক্রি করছে কারখানার মালিকরা। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন, চা বোর্ড এবং জেলা কাস্টমস ভ্যাট কতৃপক্ষ এক হয়ে শক্ত হাতে প্রদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানানো হয়।
প্রয়োজনে পঞ্চগড়ের কারখানা গুলো থেকে নিলাম বাজারে চা পাঠানোর সময় অ্যাসোসিয়শনের চালান ব্যবহারের দাবি তুলেছেন তারা। এ সময় সাজেদা রফিক টি ফ্যাক্টরির মালিক আরিফুজ্জামান সুমন জানান, নিলাম বাজারে চা পাঠানো হলে নির্দিস্ট চা বিক্রি হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
তাছাড়া প্রতিদিন চা চাষিদের ক্রয়কৃত কাচা চা পাতার মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এজন্য কারখানা মালিকদের পুজি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। তিনি নিলাম বাজারে চা পাঠানোর ১৫ দিনের মধ্যে বিক্রির নিশ্চয়তার দাবি করেন।
সভায় পঞ্চগড় অনলাইন নিলাম বাজারের বায়ার বিডার এবং ব্রোকার হাউজের মালিকরা বলছেন তারা এখন গভীর সংকটে পড়েছেন। সরকারের বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন ১৬০ টাকা কেজি দরে চা ক্রয় করলে ভ্যাটসহ ১৮৫ টাকা হয়।
সে ক্ষেত্রে পঞ্চগড়ের চা সিলেট মৌলভীবাজারে ১৪০ টাকায় নিলাম ছাড়াই পাওয়া যাচ্ছে। ওয়্যার হাউজগুলোতে চা পড়ে আছে বিক্রি হচ্ছে না। দ্রুত কারখানা মালিকদের কালোবাজারে চা বিক্রি বন্ধের দাবি জানানো হয়। সকলের মতামত ও বক্তব্যের পর চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান আমাদের চা শিল্পের নানা সংকট রয়েছে তবে চা বোর্ড প্রশাসনের সহযোগিতায় সংকট উত্তরনে কাজ করে যাচ্ছে।
এ সময় তিনি জানান পঞ্চগড়ের উৎপাদিত চায়ের দাম সর্বনিম্ন ১৬০ টা ঠিক রেখে সিলেট মৌলভীবাজার এবং চট্রগ্রামের তৈরিকৃত চায়ের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব লিখিতভাবে বাংলাদেশ চা বোর্ডকে জানিয়েছেন।
সভাপতি আমিরুল হক খোকন অংশীজনদের ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষনা করেন। পরে চা চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে প্রুনিং মেশিন তুলে দেন অতিথিরা।
স/এষ্