লুটপাটের পরেও বাঘারপাড়া উপজেলা প্রশাসন দিশা সমাজকল্যাণ সংস্থার পক্ষেই মতামত দিয়েছেন

লুটপাটের পরেও বাঘারপাড়া উপজেলা প্রশাসন দিশা সমাজকল্যাণ সংস্থার পক্ষেই মতামত দিয়েছেন

স্টাফ রিপোর্টার, বাঘারপাড়া ।। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় কর্মসূচির শুরুতেই এনজিও ‘দিশা সমাজকল্যাণ সংস্থার’ বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থ লুটপাটের ভয়াবহ অভিযোগ উঠে।

কর্মসুচির সেকেন্ড চান্স কাজ পাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন এনজিও ‘দিশা সমাজকল্যাণ সংস্থা’ তাদের পক্ষেই মতামত দিয়েছেন। গত ২ জুলাই উপজেলা নিবার্হী অফিসার স্বাক্ষরিত পত্রে উপজেলার ৭০ টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্র যথাযথ ভাবে পরিচালিত হচ্ছে মর্মে মতামত দেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় ‘চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)’র অধীনে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই ডিসেম্বর থেকে ৮-১৪ বছর বয়সের ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এ উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ৭০টি

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনা করার জন্য দায়িত্বে রয়েছে লিড এনজিও ‘দিশা সমাজকল্যাণ সংস্থা’। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ি ২০২২ সালে ৬৪ জন, ২০২৩ সালে ৫২ জন, ২০২৪ সালে ৪২ জন ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর তথ্য পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কর্তৃপক্ষের বিধি অনুযায়ী প্রতিটি শিখনকেন্দ্রে ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে কোনো কেন্দ্রেই ৩০ জন শিক্ষার্থী নেই। অধিকাংশ শিখনকেন্দ্রে ১০-১২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা বিভিন্ন মাদ্রাসা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে শিক্ষার্থীই আসে না, ক্লাসও হয় না।

শুধু কাগজ-কলমে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখানো হয়েছে। সরকারি অর্থ লোপাটের উদ্দেশ্যেই শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন না করে তারা নামমাত্র মানুষের ঘরের বারান্দা, রান্না ঘর, আঙিনা, ঘরে সাইনবোর্ড দিয়ে এসব শিখনকেন্দ্র স্থাপন করেছে।

শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত ভাড়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেখিয়ে ও সাজসজ্জার খরচও আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য মাসিক ভাড়া ১,৫০০ টাকা এবং ডেকোরেশনের জন্য বরাদ্দ ৫,০০০ টাকা।

কার্পেটের জন্য ৫,০০০ টাকা, এ ছাড়া, টিউবলাইট, পানির জার, স্টিলের গ্লাস , স্টিলের বাসকেট, টুল, ম্যাটেরিয়াল ট্রে, শিক্ষাথর্ীদের উপকরণের অধিকাংশ সরঞ্জামই সরবরাহ করা হয়নি। কিন্তু বাস্তবে এই অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট করা হয়েছে।

শিক্ষন কেন্দ্রের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন , এই প্রকল্পে অন্তত ১০ কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। ঝরে পড়া শিশুদের জন্য এ প্রকল্পের স্কুলগুলোর বাড়ির মালিকের অনেকেই অর্ধেক ভাড়াও পাননি।

বেতন বকেয়া রয়েছে শিক্ষক ও সুপারভাইজারদের। শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে নিম্নমানের পোশাক ও ব্যাগ। নিয়োগ দেওয়া হয়নি পরিচ্ছন্নতাকর্মী, সরবরাহ করা হয়নি উপকরণ।

ব্যাংকের মাধ্যমে এসব অর্থ পরিশোধের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন খাতের টাকা দেওয়া হয়েছে হাতে হাতে। অন্যদিকে প্রকল্পের যাবতীয় বিল-ভাউচার তৈরি করে টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে।

এমনকি প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের যে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে, সেটিও নিজেদের তৈরি করা। ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরু থেকেই এই সংস্থার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
অভিযোগকারীরা আরো জানান, কার্যক্রম শুরুর আগে ঝরে পড়া শিশুর তথ্য সংগ্রহে

জরিপকারীদের ৮০ ভাগ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। স্কুলকেন্দ্রের ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা করে স্বাক্ষর করানো হলেও শুরু থেকেই দেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। সেই টাকাও অনেক কেন্দ্রের বকেয়া রয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দেখিয়ে টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ তাদের।

বাঘারপাড়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার হোসনে আরা তান্নি সাংবাদিকদের জানান , সংস্থার অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জেলা অফিসে যোগাযোগ করেন।

 

যশোর উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক হিরামন কুমার বিশ্বাস বলেন, এনজিও ‘দিশা সমাজকল্যাণ সংস্থার’ বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির সব তদন্ত দুদক যশোর খতিয়ে দেখছে।

দিশা সমাজকল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাহিমা সুলতানার মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

স/এষ্