সাংগঠনিক দূর্বলতা নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ

সাংগঠনিক দূর্বলতা নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি: নাশকতা ঠেকাতে পাড়া মহল্লা ও অলি-গলিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হাইকমাণ্ড। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, স্থানীয় এমপি, কাউন্সিলরসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের অলি-গলিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এসময় ওবায়দুল কাদের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দলের সাংগঠনিক ব্যার্থতা নিয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে তাদের ওপর ভর করে বিএনপি-জামায়াত ও শিবির সারাদেশে যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা কিছু বুঝে উঠার আগে, তারা সারাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। কিন্তু আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা তেমন কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। এটা আমাদের সাংগঠনিক দূর্বলতা। সরকারি দল হিসেবে সবাই গা ছাড়াভাব দেখিয়েছে। আমাদের সাংগঠনিক দূর্বলতা নিয়ে খুব চিন্তিত। ঢাকার এমপি ও কাউন্সিলরদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, এমপি ও কাউন্সিলরদের কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি। এমপি ও কাউন্সিলররা সজাগ থাকলে এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই সম্ভব হতো না।

আমরা তো কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলাম না। তাহলে কি করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদে আগুন, হামলা, ভাংচূর করলো। এতোগুলো মানুষ হতাহত হলো। সম্পূর্ণ দলের সাংগঠনিক দূর্বলতা। তবে এই সময়ে সাংগঠনিক দূর্বলতা নিয়ে কথা বলতে চাই না। এখন বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পাড়া, মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আর কোনো তাণ্ডব চালাতে না পারে। এখন কারফিউ চলছে, এই কারফিউর মধ্যে অনেক মানুষ অসহায় হয়ে পেড়েছেন। কেউ কেউ খাদ্য সংকটে পড়েছেন। তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা যে যতটুকু পারেন সাহায্য সহযোগিতা করবেন। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা। আপনার এলাকায় খুজেঁ খুঁজে বের করুন। কারা কেমন আছেন। কারা কষ্টে আছেন। অনেকে কষ্টে থাকলেও মুখ ফুটে বলেন না। তাদেরকে সাহায্য করুন।

এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গির কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকার এমপিরা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, মৎস্যজীবী লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। এছাড়া কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায়, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসময় শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলনে দলের সাংগঠনিক দূর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে বলে আলোচনা করেন একাধিক নেতা। তারা বলেন, দলের মধ্যে পদ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেক ক্ষোভ রয়েছে। সেকারণে অনেক ত্যাগি নেতারা যখন বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা সারাদেশব্যাপি রাষ্ট্রীয় সম্পদে আগুন, হামলা ও ভাংচূর করেছে, তারা মাঠে ছিল না। এটি অবশ্যই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগসহ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা। এমনকি সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘর থেকে বের হতে পারেনি।

এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের ব্যর্থতা তো আছেই। আর ব্যর্থতা না থাকলে সন্ত্রাসীরা কিভাবে রাস্তায় নেমে রাষ্ট্রীয় সম্পদে হামলা করলো। এখন সাংগঠনিক দূর্বলতা নিয়ে আলোচনার দরকার নেই। ঢাকার এমপিদের কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি। এমপিরা সজাগ থাকলে এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। তাই পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হোক। জনমনে স্বস্তি আসুক। তারপর দলের সাংগঠনিক দূর্বলতা, এমপি, কাউন্সিলর ও মেয়রদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হবে। আর যাদের ব্যর্থতা আছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দলসহ সহযোগি ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পাড়া, মহল্লা ও অলি-গলিতে পাহারায় থাকতে হবে।

তারা যাতে আর কোনো ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে না পারে, তার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই আন্দোলনকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের সন্ত্রাসীরা ভর করেছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে, এই সন্ত্রাসীদের রুখতে কেউ যদি ব্যর্থ হয়, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে দল ও সরকারকে শিক্ষা নিতে হবে। যেখানে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের পাওয়া যাবে, তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপার্দ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারফিউর মধ্যে যারা অসহায় রয়েছে, তাদের সাহায্য সহযোগিতার জন্য দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই নির্দেশনা দলের নেতাকর্মীদের কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থি একাধিক আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা বলেন, বৈঠকে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দল ও সরকারের দূর্বলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত ও শিবির কৌশলে ষড়যন্ত্র করে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা ও সরকার সেটি বুঝতে পারেনি। এটি সরকার ও আওয়ামী লীগের দূর্বলতা। এটা অবশ্যই দল ও সরকারের জন্য শিক্ষা। সরকার না থাকলে দলের যে যত বড় নেতা হন। উপায় নেই। সরকার না থাকলে কেউ বাঁচবেন না। ফলে সংগঠনকে শক্তিশালী করুণ। পাড়া, মহল্লা ও অলি-গলিতে দল ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ গতে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে দলের কোন কোন নেতার সাংগঠনিক দূর্বলতা ছিল, সেটি পরবর্তীকালে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেখানে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের পাওয়া যাবে, তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপার্দ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বৈঠকে বিএনপি-জামায়াত ও শিবিরের সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রীয় সম্পদে আগুন, ভাংচূর ও হামলা করে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। জনগণের জানমালের ক্ষতি করেছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তারা সংগোপনে মানুষের যে ক্ষতি করেছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সঙ্গে সরকার বা আওয়ামী লীগের কোনো দ্বিমত ছিল না। তারপরেও এই সন্ত্রাসীরা যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেনি। তারা উন্নয়নের প্রতীকে আঘাত করেছে। এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এ জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের পাড়া, মহল্লা ও অলি-গলিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বৈঠক থেকে। তবে দলের নেতাকর্মীদের ব্যর্থতার কথা এই মুহুর্তে আলোচনা হয়নি। কারণ উদ্ভত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দলের সাংগঠনিক দূর্বলতা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আরও সাহসী ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বৈঠক আওয়ামী লীগ, মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, সহযোগি সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এমনকি দুই সিটি করপোরেশনের মেয়ররা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তবে এই মুহুর্তে দলকে সংগঠিত করে আরও সাহসী ভূমিকা রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা কারফিউর মধ্যে অসহায় তাদের খাদ্যসহ নানাভাবে সহযোগিতার জন্য হাত বাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাড়া মহল্লায় বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরকে প্রতিরোধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সন্ত্রাসীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এস/এ