কথাবার্তায় কৌশলী আওয়ামী লীগ
বিশেষ প্রতিনিধি: কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় হামলা, ভাংচূড় এবং গোলাগুলিতে শতাধিক প্রাণ হানির ঘটনা ঘটেছে। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২ টা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি। গতকাল রোববার কারফিউর মধ্যেও হাইকোর্টের রায় বাতিল করে সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ৫ শতাংশ, ১ শতাংশ প্রতিবন্ধি ও তৃতীয় লিঙ্গ এবং ১ শতাংশ ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী রেখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেছেন। ফলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও কথাবার্তায় সতর্কতা ও কৌশল অবলম্বন করেছেন। দলটির নেতারা কারফিউ জারির ইস্যুসহ বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে কেউ কথা বলতে চাইছেন না।
তারা বলেছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে আদালত যেখানে রায় দিয়েছেন, সেখানে আমাদের বলার কিছু নেই। আদালত যা ভালো মনে করেছেন, সেটি করেছেন। তবে সরকার একটি বিতর্কিত অবস্থানে ছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে। তবে যারা আন্দোলনের নামে সরকারি স্থাপনাসহ জনগণের জানমালের ক্ষতি করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করবে সরকার।
সম্প্রতি কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নামে সারাদেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে একের পর এক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। কিন্তু গত শুক্রবার রাত ১২ টা থেকে কারফিউ জারির পর থেকে দলটির শীর্ষ নেতারা অনেকটাই নিরব ভূমিকা পালন করে আসছেন। গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা বলে আসছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এমনকি গত শুক্রবারও রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে দল আয়োজিত সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতি মণ্ডলির সসদ্য জাহাঙ্গির কবির নানক, আবদুর রহমান, শাজাহান খান, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিল্পব বড়ুয়া বক্তব্য রেখেছেন। এসব বক্তব্যে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে নানা ধরণের বক্তব্য দিয়েছেন তারা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাধ্য হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। এই আন্দোলনে এখন যুক্ত হয়ে একাত্তর ও পচাঁত্তরের পরাজিত শক্তি বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। এই সন্ত্রাসীরা পুরানো প্রতিশোধ নিতে চায়। তারা আগুন লাগাচ্ছে ভাংচুর করছে। তাদের এই সব কর্মকাণ্ডকে ভয় পাওয়া যাবে না। শেখ হাসিনার কর্মীরা ভয় পায় না। জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমাদের ধৈর্য্য ধরতে ধরতে পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যারা সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাংচূড় করেছে, তাদের আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের রাজপথে প্রতিহত করা হবে। পরের দিন শনিবার সারাদেশে কারফিউ জারির পরেও রাজধানীর ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দিলেও সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।
কিন্তু গতকাল রোববার কারফিউর মধ্যেও হাইকোর্টের রায় বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা সংস্কার নিয়ে শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেছেন। সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ৫ শতাংশ, ১ শতাংশ প্রতিবন্ধি ও তৃতীয় লিঙ্গ এবং ১ শতাংশ ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী রেখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। এমনকি দলের সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন বা কোনো বিবৃতিও দেননি। তিনি অনেকটাই নিরব ভূমিকা পালন করছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম কামরুজ্জামান লিটন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা সংস্কারের যে রায় ঘোষণা করেছেন, এটিকে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি। কোটা সংস্কার নিয়ে সরকার একটি বিতর্কিত অবস্থায় ছিলো। কিন্তু এই রায়ের মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্ম ঘরে ফিরে যাবে। তারা ক্লাসে ফিরে যাবে। তবে কোটা আন্দোলনের নামে যারা সারাদেশে নৈরাজ্য করেছে, যা বলার ভাষা নেই। ফলে ভিডিও দেখে ও অডিও শুনে তাদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, কারফিউ নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। এটি দেখবে সরকার। তবে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত সশস্ত্র হামলা ও ভাংচূড় করেছে। তারা হত্যাযজ্ঞে মেতেছিল। ইতোমধ্যে কোটা আন্দোলনকারীরা বলে দিয়েছে, এই ধরণের হামলা, ভাংচূড় ও হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তার মানে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের গ্রাম থেকে ভাড়া করে এনে কোটা আন্দোলনের ব্যানারে ভাংচূড় করেছে। সরকারি স্থাপনায় আগুন দিয়েছে। তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। আমরা আশা করছি, সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করবে।
এস/এ