বেনাপোল-ভাঙ্গা মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পঅনুমোদনে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি
মনির হোসেন বেনাপোল প্রতিনিধি ।। বেনাপোল – ভাঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে একটি প্রকল্প প্রস্তাব সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
গত জুন মাসের শেষের দিকে যশোরের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। শিগগিরই ভ‚মি অধিগ্রহণ ও ‘ইউটিলিটি’ স্থানান্তরের প্রাথমিক কাজ শুরু করতে পারবে বিভাগটি।
এদিকে, বেনাপোল – যশোর সড়কের শতবর্ষী গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সড়ক বিভাগ গাছগুলো না রাখার পক্ষে। পরিবেশবাদীরা ‘হেরিটেজ’ হিসেবে এসব গাছ রেখে দিতে চান।
আদালতের আদেশও পরিবেশবাদীদের পক্ষে। এতে আটকে আছে সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন। ৬৯০টি মৃত-অর্ধমৃত ও অতিপুরাতন গাছের কারণে সড়কটি ‘ফোর লেন’ হওয়ার পথ বন্ধ রয়েছে বছরের পর বছর।
৩৮ দশমিক ২০ কিলোমিটার বেনাপোল-যশোর মহাসড়কটি সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে যাওয়া-আসা ও ভারত থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানির একমাত্র মহাসড়ক। অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক ‘ফোরলেন’-এ মহাসড়কে রূপান্তরের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। গাছ কেটে সড়ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
এতে বাধ সাধেন পরিবেশবাদীরা। সড়কের পাশের ‘বৃক্ষগুলি ঐতিহ্যবাহী ও পরিবেশ সংরক্ষণ করে’ দাবি করে পরিবেশবাদীদের পক্ষে একটি রিট পিটিশন করা হয় গাছ না কাটার জন্যে। এরপরই আদালত গাছ কাটার বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেন।
বছরের পর বছর ধরে এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তর, বিভাগ, সরকারি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর বার বার চেষ্টা করেও রিট পিটিশনের বিপরীতে স্থাগিতাদেশ বাতিল চেয়েও কোনো সুরাহা করতে পারেনি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বরে ওই মামলার শুনানি হলেও তার কোনো ফল বা পরবর্তী তারিখও জানতে পারেনি সড়কবিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যে ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর একনেকের সভায় বেনাপোল – ভাঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প পাস হয়েছে। বেনাপোল – যশোর-সড়ক বাদে অন্যান্য স্থানে কাজও শুরু হয়ে গেছে। যশোর অংশের কাজ আটকে আছে গাছে। স্থানীয় সড়ক বিভাগের কাছে এ বিষয়ে সুনিদিষ্ট কোন নির্দেশনা নেই।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের এস্টেট আইন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ খান ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেনাপোল যশোর -সড়কটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং ৮ ফেব্রæয়ারিতে দীর্ঘ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পরিদর্শনের সময় তার সঙ্গে ছিলেন, যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, সহকারী বন সংরক্ষক অমিত মণ্ডল, উপ বন সংরক্ষক আবুল কালাম ও জি এম মোহাম্মদ কবির, বিভাগীয় বৃক্ষপালনবিদ বিপ্লব কুণ্ডু, সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমানসহ অন্যান্যরা।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, এই প্রতিবেদনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, ‘কিছু গাছ সড়কের উপর ঝুঁকে আছে, বাস ট্রাক কাভার্ড ভ্যানের ঘর্ষণে বাকলসহ গাছের অর্ধেক অংশই নাই, যানবাহনগুলি সড়কের মাঝামাঝি চলাচল করে, যে কোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। অধিকাংশ গাছে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, বিভিন্ন জনসমাবেশ স্থলে মৃতগাছ রয়েছে তার ডালপালা ভেঙে বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারে।
অনেক গাছ পাকা পেভমেন্টের মধ্যে হওয়ায় মাঝে মাঝে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। অর্ধমৃত, মৃত, ঝুঁকিপূর্ণ এবং গাছে গর্তসৃষ্টি হওয়া ক্ষতিকর গাছগুলো অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে মহামান্য সুপ্রীমকোর্ট হাইকোর্ট বিভাগ রীট পিটিশন নং ৮২৩/২০১৮ মামলাটি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণকরত: খারিজ করা প্রয়োজন।’
ওই প্রতিবেদনে গাছগুলোর জন্যে বিভিন্ন সময়ে হতাহতের ঘটনা, আম্ফানে উপড়ে পড়ার পরও অপসারণ না হওয়া, গাছ ও ডাল ভেঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা, মানুষের জীবন ও সম্পদ নষ্ট হওয়ার বিষয়ও উল্লেখ করে গাছ অপসারণের পক্ষে যুক্তি ও মত দেয়া হয়। সর্বশেষ কলামে ৬৯০টি গাছ কেটে ফেলার পক্ষেও সুপারিশ করা হয়।
এর আগে যশোর জেলা প্রশাসন সড়ক বিভাগের সচিবকে বেনাপোল – যশোর মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্তকরণে সম্পর্কিত যে পত্র দেয় তাতেও মানুষের জান-মালের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে গাছ কাটা ও অপসারণের পক্ষে মতামত দেয়।
সেখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ থাকায় বর্তমানের দুই লেনের সড়কটি উন্নীতকরণ ও প্রশস্ত করণে সমস্যার রয়েছে। এতে সমস্যার বিভিন্ন দিকও চিহ্নিত করা হয়। এ সব সমস্যা সমাধানে গাছ অপসারণের বিকল্প নেই বলেও জানানো হয়।
এ বিষয়ে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া জানান, আমরা ইতিমধ্যে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটির ডিপিপি পাঠিয়েছি। যা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
উন্নয়নের স্বার্থে এবং ফোর লেন করতে এই গাছ অপসারণ প্রয়োজন বলেই বিভাগের আইন কর্মকর্তা মতামত দিয়েছেন। বিভিন্ন সভায় আমরা এ সব বিষয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছি। গত নভেম্বরেও কোর্টে এ ব্যাপারে শুনানি ছিল, আর কোনো ফল পাইনি বা জানা যায়নি।
যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, গাছগুলি ঝুঁকিপূর্ণ, বিপজ্জনক, প্রাণহানির কারণ হচ্ছে। বেশিরভাগ গাছই এখন অকেজো ও অপ্রয়োজনীয়।
সড়ক প্রশস্তকরণ, উন্নয়ন ও জানমালের নিরাপত্তায় সেগুলির অপসারণ আমরাসহ জড়িত সব পক্ষই বলছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশই সব পথ বন্ধ করে রেখেছে।
স/এষ্