জীবনের এই প্রথম এক সঙ্গে ৩হাজার টাকা পেলাম

জীবনের এই প্রথম এক সঙ্গে ৩হাজার টাকা পেলাম

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি, সমীর রায়: ‘মানুষদের কাছে হাত পেতে একটি দুটি করে টাকা চেয়ে নিয়েছি। সারাদিন মানুষদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে যা পেয়েছি তা দিয়ে বাজার করে জীবিকা নির্বাহ করেছি। কোন দিন এক সঙ্গে ৩হাজার টাকা গুনে দেখেনি। জীবনের এই প্রথম এক সঙ্গে ৩হাজার টাকা পেলাম। আমরা যারা এখানে কাজ করছি তারা সবাই এই টাকা পেয়ে খুশি’- এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চৌরখুলী গ্রামে নির্মিত প্যাকেজিং ফ্যাক্টারী ‘অবলম্বনে’ কাজ করা শ্রমিক সোনামতি বেগম(৫৫)।

 

এই ফ্যাক্টারীতে চাকুরী নেওয়ার আগে সোনমতি বেগম ভিক্ষা করতেন। সোনামতি বেগমের মতো এই ফ্যাক্টারীতে চাকুরি পেয়েছেন আরো ৪৩ ভিক্ষুক।

গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই ৪৩জন ভিক্ষুকের হাতে তাদের কর্মজীবনের প্রথম মাসের বেতন তুলে দেন।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমান, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাকিবুল হাসান শুভসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত মে মাসের ১তারিখে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ফিতা কেটে এলাকার ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থানের জন্য নির্মিত প্যাকেজিং ফ্যাক্টারী ‘অবলম্বন’ এর উদ্বোধন করেন।

জানা গেছে,গত ডিসেম্বর মাস থেকে কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের চৌরখুলী গ্রামে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়ণে এ প্যাকেজিং ফ্যাক্টারীর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে এ ফ্যাক্টারীর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই ফ্যাক্টারীতে ৪৩জন ভিক্ষুককে চাকুরী দেওয়া হয়। চাকুরী পাওয়ার পরে ৪৩ জন ভিক্ষুকের হাত হয়ে উঠে কর্মজীবীর হাত।

কুশলা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম বাদল বলেন, কুশলা ইউনিয়নের চৌরখুলী গ্রামের ৪৩ নারী-পুরুষ জন্ম-জন্মান্তরে ভিক্ষাবৃত্তি পেশার সাথে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে এ পেশা থেকে উত্তরণের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছিল। কিন্তু কখনোই তাদেরকে এ পেশা থেকে নিবৃত করা যায়নি। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারি অর্থায়নে ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যেগে চৌরখুলী গ্রামে এ প্যাকেজিং ফ্যাক্টরী নির্মাণ করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগকে এলাকাবাসী স্বাগত জানিয়েছে। এলাকার ভিক্ষুকরা এখন ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে এ প্যাকেজিং ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করছেন।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম মাহফুজুর রহমান বলেন, কোটালীপাড়ায় প্যাকেজিং ফ্যাক্টারীতে উৎপাদিত কাগজের প্যাকেটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ কারণে সরকারি অর্থায়নে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ ফ্যাক্টারীর নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা আধুুনিক মেশিনপত্র ক্রয়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে আরো ১০ লক্ষ টাকা পেয়েছি। গত ১মাস ধরে এই ফ্যাক্টারীতে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকরা কাজ করছেন। আজকে আমরা তাদের প্রথম মাসের বেতন দিলাম। এখানে কাজ করার আগে সকল শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, এই ফ্যাক্টারীতে যে ৪৩ জন ভিক্ষুক কাজ করছেন তাদের প্রতিমাসে ৩হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হবে । এছাড়াও এই ফ্যাক্টারীতে উৎপাদিত কাগজের তৈরী প্যাকেট বিক্রির লভ্যাংশের একটি অংশ তারা পাবেন। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের এ উদ্যোগ সফল হলে পরিবর্তন হবে চৌরখুলীসহ গোটা কোটালীপাড়া। এভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। একদিনেই এটা হয়তো সম্ভব হবে না, তবে একদিন হবেই নিঃসন্দেহে!

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ভিক্ষা নয় এখন থেকে কর্মময় হলো ৪৩জন ভিক্ষুকের জীবন। এই ভিক্ষুকরা এখন কাজ করে তাদের সংসার চালাতে পারবেন। এটি আমাদের একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এ ধরনের উদ্যোগ দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে। আমাদের দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত ও উন্নত সমৃদ্ধ হবে। এ ক্ষুদ্র উদ্যোগটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেশকে ভিক্ষুক মুক্ত করতে সহায়তা করবে বলে আমার বিশ্বাস। এস/এ