করোনাকালের বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে: অর্থমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ঝুঁকি তৈরির পাশাপাশি অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্ত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কোভিড মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা বাড়ানো ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় রোধের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর মোকাবিলা করে যেতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জীবন ও জীবিকায় প্রাধ্যান্য দিয়ে আমরা দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এবারের বাজেটে দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও তাদের জীবন জীবিকাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার সংসদে দেওয়া বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যের খুব সামান্য অংশই পাঠ করেন। এর বড় একটি অংশ তিনি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ভিডিও আকারে উপস্থাপন করেন। অর্থমন্ত্রীর অনুরোধে তার ১৯২ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তব্য পঠিত বলে সংসদে গ্রহণ করা হয়। এর আগে বিকাল ৩টায় বাজেট অধিবেশন শুরু হয়।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় বাজেটে সাধারণত আমরা সুসংহতভাবে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার উন্নয়ন রূপরেখা প্রণয়ন করে থাকি। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এবছরও সকল তথ্য-উপাত্ত পরিপূর্ণভাবে আমাদের সামনে নেই। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে কোভিড-১৯ এর প্রাথমিক অভিঘাত মোকাবিলা করে বাংলাদেশ যখন অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক উত্তরণের পথে এগিয়ে চলছিল, তখনই সারাবিশ্বে দ্বিতীয়, কোথাও তৃতীয় অভিঘাত শুরু হয়। যার প্রভাব সর্বত্রই প্রবল। এজন্য আমাদের এবারের বাজেটেও দেশ ও জাতির উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাধিকার পাচ্ছে দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষ— প্রান্তিক জণগোষ্ঠী ও তাদের জীবন জীবিকা।’
স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, ‘গত ৫ দশকে অনেকদিন থেকে বাংলাদেশ বদলে গেলেও বঙ্গবন্ধুর চিরঞ্জবীব আদর্শ ও জাতির জীবনে সর্বক্ষেত্রে তার সজীব উপস্থিতি। তাঁর নির্দেশিত পথেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। এ বছরই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মবার্ষিকীর দুই বলিষ্ঠ প্রবাহের মিলনমেলায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ। এর হাত ধরেই বিশ্বসভায় বাংলাদেশ স্থান পেয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়।’
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও অর্থনৈতিক পুররুদ্ধারে নেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে প্রায় ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পেয়েছি। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পেতে যাচ্ছি। এর পাশাপাশি করোনা টিকা কেনার জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হতে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ভ্যাকসিন সাপোর্ট পেতে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপির হার কম থাকা ও সার্বিকভাবে ঋণ সক্ষমতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কোনও সংশয় না থাকায়, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া অনেকটাই সহজ হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।
করোনা প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ঝুঁকি তৈরি করছে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্ত করেছে। ফলে আমাদের এখন স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা বাড়ানো ও অর্থনৈতিকব বিপর্যয় রোধের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর মোকাবিলা করে যেতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জীবন ও জীবিকায় প্রাধ্যান্য দিয়ে আমরা দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘গত ১২ বছরে ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ দরিদ্র্য দূর করে ও স্বল্পোন্নত দেশের তলিকা হতে বেরিয়ে একটি উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে যাত্রা করেছে। কিন্তু জাতীয় জীবনের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে করোনভাইরাসজনিত সংকট আমাদের জাতীয় অর্থনীতির প্রাণচাঞ্চল্য, দারিদ্র বিমোচন ও অন্যান্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিববর্ষ ও উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বছরটি বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে স্বর্ণক্ষরে লেখা বছর হিসেবে বিবেচিত হবে উল্লেখ করে অর্থ মন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্শতবার্ষিকী উদযাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতা সবর্স্ব নয়, এই উদযাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’