লালমনিরহাটে রাসেলস ভাইপার সাপ ভেবে অন্য সাপ হত্যা
লাভলু শেখ, লালমনিরহাট থেকে।। লালমনিরহাটে রাসেলস ভাইপার ( বিষধর) সাপ ভেবে অন্য সাপ কে হত্যা। আতংকিত সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, লালমনিরহাটে যেকোনো সাপ দেখলেই রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে স্থানীয় জনগন। কেউ কেউ মেরেও ফেলছে বাস্তুতন্ত্র তথা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী এসব প্রাণী।
ভারতীয় সীমান্তবর্তী হওয়ায় লালমনিরহাট জেলাজুড়ে রাসেলস ভাইপার সাপের আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন এবং সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদায়ীত্বশীলরা।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারের কামড়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু এবং বাচ্চাসহ প্রত্যন্ত এলাকায় রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার হওয়ায় সারাদেশের ন্যায় লালমনিরহাটেও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
সেই আতংকের কারণে সাপ দেখলেই তেড়ে মারতে যাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। গত ২দিনে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম ও কালীগঞ্জ উপজেলায় ২টি সাপ রাসেলস ভাইপার ভেবে হত্যা করা হয়েছে।
২৩ জুন রোববার সন্ধ্যায় পাটগ্রামের সেটেলমেন্ট মসজিদের পাশে একটি সাপ দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে সাপটি রাসেলস ভাইপার ভেবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের বাসায় নিয়ে আসে স্থানীয় জনগন।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হন এটি রাসেলস ভাইপার সাপ নয়।
এদিকে ২৪ জুন সোমবার দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলায় রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) ভেবে নোনাডোরা সাপকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় জেলেরা। উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শৌলমারী চরাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সকালে তিস্তা নদীর একটি নালায় মাছ ধরার টেপরাই (মাছ ধরার স্থানীয় যন্ত্র) বসায় স্থানীয় জেলেরা। ওই দিন দুপুরে সেই টেপরাই তুলতে গিয়ে সেখানে একটি সাপ দেখতে পান তারা। খবর পেয়ে স্থানীয়রা ছুটে এসে বিষধর রাসেলস ভাইপার ভেবে সাপটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘শৌলমারীর চরে যে সাপটি উদ্ধার করেছে সেটি রাসেলস ভাইপার নয়। এটি নোনাডোরা সাপ। যা স্থানীয়রা মেরে ফেলেছে। এর সঙ্গে রাসেলস ভাইপারের কোনো সাদৃশ্য নেই।’
লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। রাসেলস ভাইপার সাপ লালমনিরহাটে কোথাও পাওয়ার খোঁজ এখনো আমরা পাইনি, তবে আতংকিত হয়ে অনেকে অন্য সাপ মারছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতিই এসব প্রাণির নিয়ন্ত্রক। কিন্তু আমরা মানুষেরা প্রকৃতির ওপর হস্তক্ষেপ করেছি। সাপদের বাচ্চা হবে, বংশবৃদ্ধি করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এসব প্রাণির খাদক শ্রেণির প্রাণী যেমন- বেজি, গুইসাপ, চিল, ঈগল এসব প্রাণিদের আমরা প্রায় ধ্বংস করেছি। তাই এসব বিষধর সাপদের বংশবৃদ্ধি হচ্ছে দ্রুত।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বেজি, গুইসাপ, চিল, ঈগল এসব প্রাণিদের বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক হতে হবে এবং রাসেলস ভাইপার সাপ যেহেতু আক্রান্ত হলেই কেবল ছোবল মারে সেহেতু এদের না মেরে এদের থেকে দূরে থাকাই ভালো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
স/এষ্