বদলগাছীতে ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে কৃষকলীগ নেতাকে হয়রানি
বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি ।। নওগাঁর বদলগাছীতে ব্যক্তিগত আক্রোশ ও পারিবারিক শক্রতার জেরে বদলগাছী উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে ছাগল চুরির অপবাদ এনে হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন কৃষকলীগ নেতা সানাউল ইসলাম হিরো।
সানাউল ইসলাম হিরো বদলগাছী উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি। একই এলাকার জাহেরা বেগম নামে এক নারীর সাথে তার বিরোধ চলছিল। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শুক্রবার ২১ জুন তাকে বিবাদী করে থানায় ছাগল চুরির অভিযোগ দায়ের করেন ঐ নারী বলে জানান উপজেলা কৃষকলীগের এই নেতা।
ইতিমধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে এলাকায় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। তবে হয়রানির জন্যই এমন অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবি জানান ওই কৃষকলীগ নেতা।
অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, ঐ এলাকার বাসিন্দা চা দোকানি জাহেরা বেগমের সঙ্গে একই এলাকার সানাউল ইসলাম হিরোর সাথে পারিবারিক বিষয়ে মনোমালিন্য ও পূর্ব বিরোধ চলছিল।
গত শনিবার ১৫জুন দুপুরে জাহেরা বেগমের ২৬ হাজার টাকা মূল্যের একটি ছাগল (খাসি) বিবাদী হিরোর বাড়ির গেটে সামনে ঘোরাফেরা করে। চা দোকানি জাহেরা ছাগলটি কে সঙ্গে নিয়ে বদলগাছী হাসপাতাল গেটের সামনে তার দোকানে যান। কিছু পরে ছাগল হঠাৎ দোকান থেকে অন্যত্র চলে যায়।
একটা সময় ওই নারী তার ছাগলটি (খাসি) বিভিন্ন যায়গায় অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। পরে পরিকল্পিত ভাবে উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি সানাউল ইসলাম হিরোর বিরুদ্ধে সন্দেহভাজন চুরির অভিযোগ করেন বলে জানান ঐ কৃষকলীগ নেতা। ছাগল চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ ও বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর এলাকায় বিষয়টি নিয়ে মিশ্রপ্রতিক্রীয়া দেখে দেয়।
এ ঘটনায় সরেজমিনে এর কোন সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। অভিযোগে উল্লেখিত সাক্ষী ও বিবাদী কেউ ছাগল চুরির বিষয়টি স্বচক্ষে দেখেননি বলে বাদী নিজেই জানান। সন্দেহের বশবর্তী বিবাদীকে অভিযুক্ত করে থানায় অভিযোগ করেন ছাগল মালিক জাহেরা বিবি।
স্থানীয় বাসীন্দা রতন ও শাহীনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, জাহেরা বেগমের সাথে উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি সানাউল ইসলাম হিরোর সাথে বিগত ১০ বছরেরও অধিক সময় ধরে ব্যক্তিগত আক্রোশ ও পারিবারিক শক্রতা আছে। এর আগেও জাহেরা বেগম বিভিন্ন মামলা ও অভিযোগ দিয়ে কৃষকলীগের সভাপতি সানাউল ইসলাম হিরোকে হয়রানি ও মানহানি করেছে।
থানায় অভিযোগের অন্যতম সাক্ষী স্থানীয় বাসিন্দা সানজিদা জানান, আমরা ছাগল চুরির ব্যপারে কিছুই জানি না। কে বা কাহারা নিয়েছে বলতে পারছি না। শুনেছি ছাগল নাকি হারায় গেছে। আমি ছাগলটাকে হিরোর বাড়ির সামনে দেখেছিলাম এটুকুই ছাগল মালিককে বলেছি। তবে ছাগল চুরির বিষয়টি আমরা কেও নিজ চোখে দেখিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু বক্কর পলাশ বলেন, এ এলাকায় নেশাখোর বা মাদকসেবীরা প্রতিনিয়ত এসব কাজ করে। বিভিন্ন চুরিধারি করে থাকে, এটা তাদেরও কাজ হতে পারে। কিছুদিন আগে এখান থেকে টিউবওয়েলের হেড, গাড়ির ব্যাটারি, ডিসের তার চুরি হয়েছে।
কিন্তু হিরোর নামে এমন অভিযোগ আমাদের কাছে সম্পন্ন মিথ্যে মনে হচ্ছে। এছাড়া তার যে সহায় সম্পত্তি আছে তার পক্ষে সামান্য ছাগল চুরি এটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। সামাজিকভাবে তিনি সবার কাছেই সুপরিচিত। তার দ্বারা ছাগল চুরি করে বিক্রি করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
ছাগল চুরির অভিযোগের ব্যপারে জানতে চাইলে জাহেরা বেগম বলেন, সানাউল হক হিরোর সাথে ১০বছর ধরে আমার পরিবারের সাথে শত্রুতা আছে। ইতি পূর্বেও ঈদের সময় সানাউল হক হিরোর সাথে ঝামেলা ও ঝগড়া হয়। তার সাথে ঝামেলা হলেই আমার কোন না কোন জিনিসের ক্ষতি হয়।
তার সাথে মনমালিন্য হওয়ার পরপরই আমার ছাগল হারিয়েছে। ছাগলটি ২৬হাজার টাকা দামে একজনের কাছে বিক্রি করেছি সে রবিবারে আমার বাড়ি থেকে ছাগল নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তার আগেই ছাগলটি চুরি হয়ে গেল।
ছাগল চুরি করতে আপনি দেখেছেন বা আপনার সাক্ষীরা কেউ দেখেছে কিনা জানতে চাইলে জাহেরা বেগম বলেন, ছাগল চুরি করতে আমি বা যে সাক্ষীর নাম দিয়েছি অভিযোগে তারা কেহ দেখেনি। তবে আমার সন্দেহ যে হিরোই ছাগল চুরি করেছে। তার সাথে ঝগড়া হলেই এর দুদিন বাদে আমার জিনিস হারায় সে সন্দেহের বসে আমি তার নামে অভিযোগ করেছি।
অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি সানাউল ইসলাম হিরো বলেন, তাকে সামাজিকভাবে হয়রানি করার জন্যই এমন অভিযোগ করা হয়েছে। যা সাজানো নাটক।
কারণ বংশীয়ভাবে এবং ব্যবসা করে যা আয় উর্পাজন করি তা যথেষ্ট! আমার বিরুদ্ধে ছাগল চুরির মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সে আমার সম্মানহানি করছে।
প্রতিবেশী জাহেরা বেগমের সাথে আমার প্রায় এক যুগ ধরে ঝামেলা ও পারিবারিক শক্রতা রয়েছে। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন মিথ্যে অভিযোগ দিয়েছে। ঐ নারী অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির মানুষ বিভিন্ন ভাবে মানুষের নামে অভিযোগ দিয়ে তাদের হয়রানি করে।
তিনি আরো বলেন, প্রভাবশালী মহলের চক্রান্তে আমার বিরুদ্ধে চুরির এই অভিযোগ করেছে সে। এই মিথ্যে অভিযোগের ফলে আমি সহ আমার পরিবার বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। আমি চাইবো এই ঘটনার সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হোক।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, জাহেরা বেগম নামের এক নারী ছাগল চুরির ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন। যতটুকু জেনেছি তাদের মধ্যে পারিবারিক গন্ডগোল আছে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে । দ্রুতই ছাগল চুরির সঠিক কারণ জানা যাবে।
স/এষ্