আওয়ামী লীগ ফিনিক্স পাখির মতো ভস্ম থেকে জেগে ওঠে: প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। একটি দলের কাজ হচ্ছে জনগণের সেবা করা। বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এসে কিভাবে দেশ চলবে সেই দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। কারণ জনগণ সবসময় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতারা গণমানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বারবার আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। বারবার দলের উপরে আঘাত এসেছে। খণ্ড-বিখণ্ড করা হয়েছে। সেই আইয়ুব খানের মার্শাল ল থেকে শুরু, তবু এ সংগঠনের কেউ ক্ষতি করতে পারেনি। ফিনিক্স পাখির মতো, পুড়িয়ে ফেলার পরও ভস্ম থেকে জেগে ওঠে, আওয়ামী লীগও সেভাবেই জেগে উঠেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন। জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন করার সংগঠন। ২০০৭ সালের চেষ্টা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার। কিন্তু তৃণমূলের মানুষ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী মাথানতো করেনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাথা নত করে না।
রোববার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভাপতির বক্তব্য দিতে শেখ হাসিনা মাইকের সামনে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে। তিনি নিজেও স্লোগান ধরেন। এরআগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে সভামঞ্চে আসেন। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়।
এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। পরে প্রায় ঘন্টাব্যাপি চলে সাংস্কৃতিক আয়োজন। এতে গান, নৃত্য ও নানা পরিবেশনায় ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে দলটির নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতা অর্জন, পঁচাত্তর পরবর্তী পেক্ষাপট, ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার ফিরে আসা, দলকে সু-সংগঠিত করা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন-অর্জন তুলে ধরা হয়। আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আয়োজনে দলটির সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন দেশবরেণ্য শিল্পীরা। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভা শুরু হওয়ার আগে পবিত্র কোরআনসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রস্থ থেকে পাঠ করা হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাঙালির প্রতিটি অর্জনই এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। জন্ম থেকে আওয়ামী লীগের প্রতিটি পদক্ষেপের কারণেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সবসময় মানুষের সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে ছিল আওয়ামী লীগ। জনগণের শক্তি অপরিসীম। আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। সংগঠন শক্তিশালী হলে আর জনসমর্থন থাকলে যতই ষড়যন্ত্র হোক কেউ কিছু করতে পারবে না। আর যেকোনো সময় মৃত্যু আসতে পারে। কিন্তু আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। যতক্ষণ শ্বাস আছে ততক্ষণ দেশের জনগণের ভাগ্যে পরিবর্তনে কাজ করে যাব। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমার বাবার যে চিন্তা-চেতনা তা বাস্তবায়ন করে এদেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দিবো। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করে গড়ে তোলার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটাই আবেদন থাকবে, আমাদের সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মীর কাছে, সংগঠনকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। যেকোনও একজন রাজনীতিবিদের জীবনে সংগঠনটা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী। যদি সংগঠন শক্তিশালী হয় আর দেশের গণমানুষের সমর্থন পাওয়া যায়, যতই ষড়যন্ত্র হোক, তারা সফল হতে পারবে না।
দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রত্যেক নেতাকর্মীকে এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বলবো, আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন, এই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কত কষ্ট করেছে। বার বার আঘাত এসেছে। পরিবারগুলো কষ্ট করেছে। কিন্তু এই সংগঠন ধরে রেখেছে। কাজেই যেমন সংগঠন করতে হবে, সেই ভাবে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস, যেটা আমাদের মূল শক্তি সেই আস্থা-বিশ্বাসটা অর্জন করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সেই আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি বলেই বার বার জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। বার বার ক্ষমতায় এসে, দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৯ থেকে এই ২০২৪ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যহত আছে। আর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যহত আছে বলেই আজকে আর্থ-সামাজিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশ আজকে বিশ্ব দরবারে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বে আজকে মাথা উঁচু করে চলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই এটাকে (আস্থা-বিশ্বাস) ধরে রেখেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ২১০০ সাল পর্যন্ত আমরা ডেল্টা প্লান রূপকল্প ঘোষণা করেছি। অনেক বয়স হয়েছে, ততদিন হয়তো বেঁচে থাকবো না। কিন্তু আজকে যারা নবীন, যারা আমার স্মার্ট বাংলাদেশের মূল সৈনিক হবে। আমরা স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে তুলবো, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তুলে, এই বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্লাটিনাম জুবলীতে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। আমি মৃত্যুকে পরোয়া করি না। মৃত্যু যে কোনো সময় সবার হতে পারে। যেকোন সময় মৃত্যু আসতে পারে। তার জন্য আমি কোন দিন ভীত না। কখনো ভয় পাইনি, পাবো না। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আঁশ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমার বাবার যে চিন্তা-চেতনা তা বাস্তবায়ন করে এদেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দিবো। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরের ইতিহাসও তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা সন্ত্রাসবাদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি, দুর্নীতি করেছে। তারা জনগণের শক্তি ভুলে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। বাঙালির যতটুকু অর্জন, এই অর্জনগুলো আওয়ামী লীগের দ্বারাই। কিন্তু বারবার এ দলের উপর আঘাত এসেছে। বারবার এ দলকে খন্ড-বিখন্ড করা হয়েছে। বারবার এ দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ’৫৮ সালে সেই আইয়ুব খানের মার্শাল ল থেকে শুরু করে বারবার আঘাত এসেছে।
যারা আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে গেছে তারা আর জ্বলেনি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, হয়ত কখনো কখনো নেতারা ভুল করেছেন। কেউ মনে করেছেন আওয়ামী লীগে থাকলে তারাই হয়তো বড় নেতা। দলের থেকে নিজেকে বড় মনে করেন, কেউ দল ছেড়ে গিয়ে অন্য দল করেছেন। তারা ভুল করেছেন। আকাশে মিটি মিটি তারা জ্বলে, তারা আলোকিত হয় কার দ্বারা? সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়। যেসব নেতারা আওয়ামী লীগ ছেড়েছিলেন তারা ভুলে গিয়েছিলেন দলের কথা। অথচ তারা আলোকিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন বলেই। চলে যাওয়ার পর ওই তারা আর জ্বলেনি। অনেকেই কই নিভে গেছেন। কেউ ভুল বুঝে ফিরে এসেছে, আমরা নিয়েছি। আবার কেউ কেউ এখনো আওয়ামী লীগের ও সরকারের পতন কল্পনা করে যাচ্ছে।
সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভায় জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ইতালি, সৌদি আরব, ডেনমার্ক, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, স্পেন, মিয়ানমার, অস্টেলিয়া, নেদারল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সুইডেন, ওমান তুরস্কসহ ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভামঞ্চে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ঢাকা সিটি মেয়র, ঢাকার দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
এস/এ