সন্তুষ্ট হয়ে ফিরলেন ১৪ দলের শরিকরা

 

সন্তুষ্ট হয়ে ফিরলেন ১৪ দলের শরিকরা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস পর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল গুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতারা, তাদের পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ, অভাব-অনুযোগ ও কষ্টের কথা তুলে ধরেন জোট নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। ‌ এরই প্রেক্ষিতে জোট নেত্রী শরিক দলগুলোর নেতাদের আশ্বস্ত করেন, আপনাদের অভাব অনুযোগ, ক্ষোভ, হতাশার কথা সবই শুনলাম। আপনারা হতাশ হবেন না। যে কোন প্রয়োজনে আমাকে বলবেন। আমি দেখব। তবে আপনারও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা করুন। আমাকে জানান। সেই হিসেবে আমি ব্যবস্থা নেব। কারণ ১৪ দল থাকবে। ১৪ দল আমাদের প্রয়োজন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জোট নেতারা। মূলত প্রধানমন্ত্রীর কথায় সন্তুষ্ট হয়ে ঘরে ফিরলেন শরিক নেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় গণভবনে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকটি রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত চলে। এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জোট নেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী সূচনা বক্তব্যের পর কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। পরে বক্তব্য রাখেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতারা।

 

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকের শুরুতে ১৪ দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা এসেছেন। আমি খুব খুশি হয়েছি। নির্বাচন পরবর্তী নানা ইস্যুতে আমি ব্যস্ত ছিলাম। তাই আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। আপনাদের সঙ্গে কথা বললে আমার ভালো লাগে। কারণ ১৪ দল হল একটি আদর্শিক জোট। এই জোট অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জোট। তাই ১৪ দলীয় জোট আছে, থাকবে। কারণ চোদ্দ দল আমাদের প্রয়োজন। আগামীতে সাম্রাজ্যবাদ, বিএনপির জামায়াত ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনকে আমাদের জোরদার করতে হবে। এ সময় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ১৪ দলীয় জোট আদৌ কি আছে? আমরা যখন ১৪ দলীয় জোট গঠন করেছিলাম ২৩ দফার ভিত্তিতে, তখন কিন্তু বলা ছিল, নির্বাচন, আন্দোলন ও সরকার গঠন একসঙ্গে করব। আমি মন্ত্রী ছিলাম, এমপি ছিলাম, এখন এমপি আছি। আমরা সরকারি দলের সঙ্গে থেকেও নেই। এখন আর কেউ ১৪ দলীয় সরকার বলেনা । সবাই বলে আওয়ামী লীগ সরকার। ফলে এই থাকা না থাকা কোন মানে আছে কি? রাশেদ খান মেননের সঙ্গে সুর মেলান জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। তারাও বলেন, ১৪ দলের নেতাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। এভাবে কি ১৪ দল চলতে পারে? তখন ১৪ দলের শরিক নেতারাও তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। ‌ এরিপ্রেক্ষিতে জোট নেত্রী শেখ হাসিনা হেসে দিয়ে বলেন, আপনারা দলকে দৃশ্যমান করুন। ‌ সুসংগঠিত করুন, যেখানে যা প্রয়োজন হয়, আমাকে বলুন। আমি দেখব। তখন হাসানুল হক ইনু বলেন, কি আর বলব, স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের কথা শোনে না, ডিসি, এস পি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা আমাদের কথা শোনেন না। আমাদের নেতাকর্মীদের কোন ধরনের পাত্তা দেন না। আমাদের নেতা কলেজে কোন কাজ নেই। যখন আমরা ১৪ দলীয় জোট করেছিলাম, তখন কিন্তু আওয়ামী লীগ জানতো আমাদের ভোটব্যাংক নেই। আর ভোট ব্যাংক নেই বলেই তো আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলাম। ‌ ১৪ দলীয় জোট করেছিলাম। তখন জোটনেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোথাও কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। আমি দেখব। তখন জোট নেতারা বলেন, আমাদের অফিস ভাড়া দিয়ে চলতে হয়। যখন আমরা ১৪ দলের সঙ্গে ছিলাম না, তখন চাঁদা দিয়ে পার্টি চালাতাম। অফিস ভাড়া দিতাম। এখন সরকারি দলের সঙ্গে আছি। কারো কাছে চাঁদা চাইতে পারি না। কেউ দেয়ও না। আমাদের এই দুঃখের কথা কেউ শোনেন না। আমরা না আছি সরকারি দলে। না আছি বিরোধী দলে। আপনি তো আওয়ামী লীগ ভবন করেছেন। ‌ আমাদের তো ভাড়া দিয়ে অফিস চালাতে হয়।। এভাবে কি চলা যায়। আপনি প্রয়োজনে ১৪ দলের একটি ভবন করে দেন। প্রত্যেক ফ্লোরে ফ্লোরে আলাদা করে ১৪ দলের শরীকদের অফিস থাকবে। যেটি মালয়েশিয়ার মাহাতি মহম্মদ করেছেন। ‌এর প্রেক্ষিতে জোট নেত্রী হেসে দেন। পরে জোট নেত্রী বলেন, সবকিছু একদিনে হবে না। আপনারা ধৈর্য ধরুন সময় মত সবকিছু হবে। এ সময় দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আমাদের জোটের কি এখন কোনো অস্তিত্ব আছে? দেশে কোন রাজনীতি আছে। আমার কাছে তো মনে হয় সেটি নেই। ১৪ দলীয় জোট আছে কিনা আপনি সুনির্দিষ্ট করুন। দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। ব্যাংক লুট হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আস্ফলন। আপনি কি করবেন আমাদের স্পষ্ট করুন। তখন নেত্রী বলেন, আপনাদের ক্ষোভ আছে। আপনাদের হতাশা আছে। ভয় নেই। কোন সমস্যা থাকলে আমাকে বলবেন। আপনিও তো সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। আপনি সবকিছু জানেন বুঝেন। ১৪ দল আছে, থাকবে।

 

বৈঠক সূত্র আরো জানায়, ১৪ দলের শরিক নেতাদের বক্তব্য শোনার পর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা দলকে জোরদার করুন। দলকে দৃশ্যমান করুন। কিন্তু দেশে কিছু অতি বাম, অতি ডান মিলে আমাকে প্রতিদিন গালাগালি করে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নাম ধরে বলেন, মেনন সাহেব আপনার সঙ্গে ছিলেন সাইফুল হক। সাইফুল হক ওয়ার্কার্স পার্টি ভেঙে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি করেছেন। এখন বিএনপির সঙ্গে মিলে গেছেন। তিনি সকাল বেলা উঠেই আমাকে গালাগালি করেন। এছাড়া সিপিবি র মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তারাও এখন অতিবাম হয়ে গেছেন। এটাই আমার বড় কষ্ট। জুনায়েদ সাকি তিনি এখন বিএনপির সঙ্গে মিলে গেছে। প্রতিদিন সকালে আমাকে গালাগালি করে। আপনার তাদের গালাগালির প্রতিবাদে কি করেন। তাদের কি শক্তভাবে কিছু বলেছেন। বলতে পারেন নি। যাক ওসব কথা বলবো না। আপনারা ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করুন। আমাদের দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমুর সঙ্গে আপনারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। ঘনঘন বৈঠক করুন। সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ও বিএনপি জামাতের ষড়যন্ত্র চক্রান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, সেই কর্মপরিকল্পনা ঠিক করুন। ‌ হাসানুল হক ইনু সাহেব আপনি আপনি তো ইঞ্জিনিয়ার মানুষ। আপনি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেন। আপনাদের আমার প্রয়োজন রয়েছে। আপনাদের ছাড়া আওয়ামী লীগের চলবে না।

 

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল গুলোর সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা তাদের কিছু ক্ষোভের কথা বলেছেন। ‌ তাদের মধ্যে কিছু হতাশা ছিল। ‌ কিছু দুঃখ ছিল। নেত্রী শেখ হাসিনা ধৈর্য সহকারে শুনেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করেছেন, আগামীতে ১৪ দলীয় জোট আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে কিভাবে মোকাবেলা করা যাবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিরুদ্ধে কর্মপরিকল্পনা জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। নেত্রী প্রয়োজনে আবারও তাদের সঙ্গে বসবেন। ১৪ দল থাকা উচিত। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

 

বাসদ আহবায়ক রেজাউল রশিদ খান বলেন, ১৪ দলীয় জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমরা তার কাছে আমাদের মধ্যে কিছু ক্ষোভ ছিল সেগুলো বলেছি। নেত্রী ধৈর্য সহকারে শুনেছেন। তিনি বলেছেন ১৪ দল আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। অনেকটা আশা নিয়ে চোদ্দ দলীয় জোটের শরিক নেতারা ফিরেছেন। আমাদেরকে তিনি দলগুলো দৃশ্যমান করার কথা বলেছেন। দলকে সু সংগটিত করার কথা বলেছেন। তিনি অসুস্থ করেছেন, আমাদের যদি কোন প্রয়োজন থাকে আমরা জানালে, তিনি বিষয়টা দেখবেন।

এসব/এ