বিএনপির আন্দোলনের দিকে কড়া নজর রাখছে আওয়ামী লীগ
নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর এখন বিএনপির আন্দোলনের দিকে কড়া নজর রাখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্র বলছে, দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র করেও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে না পেরে বিএনপি এখন নতুন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিভিন্ন অপতৎপরতা শুরু করেছে। তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরকারের কর্মকাণ্ড হেয় করতে নানা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারে অপপ্রচারে ব্যস্ত রয়েছে বিএনপি। এসবেও কিছু করতে না পেরে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সহিংসতা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের আর কোনো সহিংসতা করার সুযোগ দিতে না রাজ ক্ষমতাসীন দলটি। এরইমধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি যদি কোথাও কালো পতাকা মিছিল বা যে কোনো কর্মসূচির নামে সহিংসতা করতে চায়, তাহলে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের রাজপথেই কঠোর জবাব দিতে হবে। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করতে হবে।
দলটির দাবি, বিএনপি কালোপতাকা মিছিলের নামে আবারও সহিংসতা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের মনোভাব বুঝতে পেরে সরকার কালো পতাকা মিছিলের অনুমতি দেয়নি। আর অনুমতি ছাড়া তাদের রাজপথে ফ্রি স্টাইলে কোনো কর্মসূচি পালন করার সুযোগ দেবে না। কারণ তাদের সুযোগ দেওয়া হলে, ২০১৩, ২০১৪ সাল ও গত বছরের ২৮ অক্টোবরের মতো কোনো সহিংসতা করতে পারে। তাদের এসব অবৈধ কর্মসূচি মোকাবিলায় সরকারের যা যা করণীয় তাই করবে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেন, গত মঙ্গলবার বিএনপি সরকারের অনুমতি না নিয়ে সাতটি স্থানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও দ্বাদশ সংসদ বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিল। যেহেতু তাদের কোনো অনুমতি ছিল না। তাই তাদের কোথাও দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। ভবিষ্যতেও সরকারের অনুমতি ছাড়া তাদের আর কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না। তারপরেও যদি তারা কর্মসূচির নামে মাঠে নেমে কোনো ধরণের সহিংসতা করার চেষ্টা করে তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে, সেগুলো নতুন করে সামনে আনা হবে। যেসব নেতারা মামলা মাথায় নিয়ে এখনও মাঠে থাকার চেষ্টা করছে, প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে যাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আর আওয়ামী লীগও তাদের আন্দোলনের দিকে কড়া নজর রাখছে। আমাদের নেতাকর্মীরও মাঠে থাকবে। তাদের যে কোনো সহিংস কর্মসূচি কঠোর হস্তে নেতাকর্মীরা মাঠে থেকে মোকাবিলা করবে। এখন আর তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগও সরকারের কাছে শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় আওয়ামী লীগ সমাবেশ করেনি। কারণ আওয়ামী লীগ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সরকারে আছি বলেই আন ভাঙবো সেটা হতে পারে না।
তারা বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি যদি কোথাও কালো পতাকা মিছিল বা যে কোনো কর্মসূচির নামে সহিংসতা করতে চায়, তাহলে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের রাজপথেই কঠোর জবাব দিতে হবে। কোনোভাবেই নতুন সরকারকে তারা যেন বেকায়দায় না ফেলতে পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ তারা পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া করতে চাইবে। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীদের এদিকেও দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সরকারে আছি। তাই নিজেরা যেন কোনোভাবে তাদের উস্কানিতে পা না দেই।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেও স্বতন্ত্র এমপিদের শেখ হাসিনা জানিয়ে দেন, আপনার আমার ঘরের ছেলে ঘরেই থাকবেন। আপনার আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের কোনো না কোনো পদ-পদবী ধারণ করছেন। ফলে আপনারা আমরা বাম হাত। আর যারা নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন, তারা আমার ডান হাত। বিএনপি-জামায়াত নতুন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা ধরণের ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করবে। তারা বিভিন্ন গুজব রটানোর চেষ্টা করবে। তাই আপনারা এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়ে ওই সব ষড়যন্ত্র ও গুজবের জবাব দেবেন। তারা আবার নানা কর্মসূচির নামে সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইবে। আপনার এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে থাকবেন।
এদিকে গতকাল বুধবার রাজধানীর ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অনুমতি না নিয়ে রাজপথে ফ্রি স্টাইল কর্মসূচি সরকার মেনে নেবে না। বিএনপির কালো পতাকা মিছিল অবৈধ। পুলিশ অনুমতি দেয়নি। অনুমতি ছাড়া ফ্রি স্টাইল কর্মসূচি নেওয়ার সুযোগ নেই। অনুমতি নেবে না। আর রাস্তায় ফ্রি স্টাইল কর্মসূচি করবে, আমরা মেনে নেব তা মনে করার কোনো কারণ নেই। বিএনপির নেতারা কী বক্তব্য দিচ্ছেন, এর প্রতি দেশের মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। পথ হারা পথিকের মতো দিশেহারা বিএনপি।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেছে। তারা বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্র করেও নির্বাচন বানচাল করতে পারেনি। তাই দ্বাদশ সংসদ বাতিলের জন্য বিএনপির কর্মসূচি ফালতু। মূলত, তাদের নেতাকর্মীদের উজ্জীবীত করতেই এসব কর্মসূচি দিচ্ছে। তাদের কর্মসূচিকে আমরা কোনো গুরুত্ব দিচ্ছি না। তারপরেও আমরা কড়া নজর রাখছি তারা কি করছে। তারা যদি কর্মসূচির নামে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বসে আঙুল চুষবে না। নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া আছে, বিএনপি কর্মসূচির নামে সহিংসতা করতে চাইলে রাজপথে তাদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনকি সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, বিএনপি দ্বাদশ সংসদ বাতিলের দাবিতে কালো পতাকা কর্মসূচি দিয়েছে। এই কর্মসূচির সঙ্গে দেশের জনগণ নেই। তাদের নেতাকর্মীরা যাতে হাতাশা কাটিয়ে উঠতে পারে সেই চেষ্টা করছে। এ জন্যই তাদের কর্মসূচি। কিন্তু তাদের এসব কর্মসূচিকে আওয়ামী লীগ গুরুত্ব দিচ্ছে না। তবে কর্মসূচির নামে তারা অগ্নিসন্ত্র, সহিংসতা বা জঙ্গিবাদ করতে চায় তাহলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে মাঠে থেকে মোকাবিলা করবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র করে বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে পারেনি। এখন আবার দ্বাদশ সংসদ বাতিলের দাবিতে তারা কালো পতাকা কর্মসূচি দেয়। কিন্তু এ কর্মসূচিতে সরকারে কোনো অনুমতি ছিল না। কারণ সরকারে এখন আশঙ্কা রয়েছে, তাদের কর্মসূচি পালনের কোনে সুযোগ দিলে তারা গত বছরের ২৮ অক্টোবরের মতো আবার সহিংসতার দিকে যেতে পারে। তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু নতুন সরকার সেই সুযোগ আর দেবে না। তারা সহিংসতার পথ বেছে নিলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। আর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা কর্মসূচি নামে কোনে ধরণের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে তার রাজপথেই কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।
এস/ এ