আলমডাঙ্গার নতুন ওসির সঙ্গে এমপির প্রতিনিধির রুদ্ধদ্বার বৈঠকের অভিযোগ
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি ।। মাগুরার শালিখা থানা থেকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানায় সদ্য যোগদানকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারের (ছেলুন) প্রতিনিধি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সোনাহারের সাথে তিন ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন নতুন ওসি ।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিনিধি ও সমর্থকরা এ অভিযোগ করেন।
এছাড়া বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গোপন ওই বৈঠকে পরিদর্শক (তদন্ত) একরাম ও এসআই আমিনুল হক উপস্থিত ছিলেন। যুবলীগের এই নেতা ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করলেও ওসি মোশাররফ সৌজন্য সাক্ষাতের কথা স্বীকার করেছেন।
মধ্যরাতের ওই গোপন বৈঠকের কথা জানাজানির হওয়ার পর থেকে তা নিয়ে ওই আসনের সাধারণ ভোটার ও সচেতন মহলে চলছে নানা আলোচনা। তারা মনে করছেন, এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভোটের মাঠে বিশেষ সুবিধা পেতে চাইছেন এমপির সমর্থকরা।
তারা বলছেন, চুয়াডাঙ্গায় প্রশাসন নিরপেক্ষ না থাকলে নির্বাচনে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক থাকবে না।
এতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হবে। যার নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি পড়বে আওয়ামী লীগের ওপর। তাই প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার তাগিদ দিয়েছেন সুধীমহল।
তারা বলেন, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের বর্তমান এমপিকে যে কোনো উপায়ে বিজয়ী করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তার ঘনিষ্ঠ সহচর আলমডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সোনাহারের সঙ্গে ওসি মোশারেফ হোসেন আলমডাঙ্গা ডাকবাংলোতে গত শুক্রবার রাত এগারোটা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে।
স্থানীয় সচেতন সমাজ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, এটি নির্বাচনী আচরণবিধি আইনের চূড়ান্ত লঙ্ঘণ। এ ধরনের বৈঠক ভোটের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে ওসি মোশাররফ হোসেনের বক্তব্য জানার জন্য আলমডাঙ্গা থানার ওসির সরকারী মোবাইল নাম্বারে কল করা হলে, কর্তব্যরত ওসি বিপ্লব কুমার নাথ এই প্রতিবেদককে বলেন, নতুন ওসি মোশাররফ হোসেন পুলিশ সুপার (এসপি) ফয়জুর রহমান স্যারের চার্জ অর্ডার বুঝে নেওয়ার অপেক্ষায় ডাকবাংলোতে অবস্থান করছেন কথা সত্য। তবে তিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের এমপির কোন প্রতিনিধির সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন কি না তা আমার জানা নেই, তাছাড়া এ বিষয়ে থানাতে কোন অভিযোগও কেউ করেনি।
অভিযোগের বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের নেতা সোনাহার এই প্রতিবেদককে বলেন, নতুন ওসি আলমডাঙ্গা ডাকবাংলোতে আছেন বলে শুনেছি। কিন্ত ওসি সাহেবের সাথে আমার সরাসরি এখনো দেখা হয়নি।
যুবলীগের এ নেতা আরো জানান, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশে এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আমাদের দলেরই লোক, তাই তাদের ক্ষতি আমরা কখনো আশা করি না।
এ বিষয়ে ওসি মোশারেফ হোসেনকে মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, আমি মূলত: আলমডাঙ্গায় নতুন এসেছি। কাউকে চিনিও না। তবে ডাকবাংলোতে স্থানীয় কয়েকজন নেতাকর্মী জাস্ট সৌজন্য সাক্ষাৎ করার জন্য এসেছিলেন।
তারমধ্যে যুবলীগ নেতা সোনাহার নামের কেউ ছিলেন কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওদের মধ্যে একজন সোনাহার ছিলেন তবে তারা সাত আট মিনিটের মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাত শেষে তিনি ডাকবাংলো ত্যাগ করেন। আর রুদ্ধদ্বার বৈঠক প্রসঙ্গে ওসি বলেন, আমি তো চার্জ বুঝেই পাইনি তো রুদ্ধদ্বার বৈঠক করবো কিভাবে ? তাছাড়া যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষায় এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আমাদের উপরে অর্পিত দায়িত্ব আমরা এসপি স্যারের নির্দেশানুসারে অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো।
এই অভিযোগের বিষয়ে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী জানিয়েছেন, শুধু আলমডাঙ্গা নয় চুয়াডাঙ্গা সদর এলাকাতেও বিভিন্নভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার প্রচারণায় বিঘ্ন ঘটানোর অপচেষ্টা হচ্ছে। এবিষয়ে তারা আইনজীবীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে অবহিত করার কথা জানান ।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার ফয়জুর রহমানের বক্তব্য জানতে চেয়ে মোবাইলে দু’বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে ভোটের মাঠে শুরু হয়েছে নোংরা কাদা ছিটানোর মিশন। একটি বিশেষ মহল স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সম্মানহানি করতে তাদের কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কালি ছিটাচ্ছেন। প্রার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন এসব বন্ধে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশানুসারে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যে কোন আসন থেকে নৌকার বিপক্ষে ভোটযুদ্ধ করতে পারবেন বলে ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে দেশের তিনশো আসনের মধ্যে ইতিমধ্যে দুই শ’ আটষট্টি জন স্বতন্ত্রপ্রার্থী সরাসরি ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। আর এ নির্বাচনকে নিষ্কন্টক করতে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ডিসি এসপি ইউএনও ও তিন’শ আটত্রিশ ওসিকে রদবদল ও বদলী করেছে।