মানবিকতা
সুদীপ চন্দ্র হালদার
আহার-নিদ্রা-মৈথুনের জৈব প্রবৃত্তিতে মত্ত পশু,
বিবেকবোধে মনুষ্যত্বের বিকাশে শুভ চিন্তায় হয় মানুষ।
মানুষের কল্যাণে, সমাজের মঙ্গলে, সৃষ্টির সুরক্ষায়,
হৃদয়বৃত্তির সুকোমল ভাবনার বহিঃপ্রকাশরূপ কর্ম হয় মানবিকতা।
খররোদ্রের গরমে মাটির পাত্রে থাকত জল পথিকের তরে পথে ঘাটে,
পাখির জন্য ছড়িয়ে দিত শস্যদানা,
নেমন্তন্ন বাড়ির উচ্ছিষ্ট থাকত অভুক্ত পশুর খাবার,
আমরা থেকে হয়ে গেলাম ব্যস্ত আমি, পুষে দানবিকতা।
সরকারি হাসপাতালের দরকারী ওষুধ হয় বিক্রি,
কার্বাইড চলে যায় সত্ত্বগুনময় ফলের অভ্যন্তরে,
পচা মাছ তাজা হয়ে যায় ফরমালিনের গুনে,
চা-চিনি-চাউল দামী হয় কেমিক্যালের ম্যাজিকে।
শুনতে চাই পাখির কিচিরমিচির, এয়ারগানের নিশানায় রাখি পাখি!
পেতে চাই নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু, বাড়ির গাছ কেটে করছি সাবাড়!
খেতে চাই বুড়ি পাগলী ধানের ভাত, ইটভাটাতে ক্ষেত করছি ধ্বংস!
প্রকৃতিকে করতে চাই বন্ধু, যত অত্যাচার-অনাচার সব প্রকৃতির ওপর!
হৃদয়ে পুষি পশু প্রবৃত্তি, কর্ম দানবিকতাময় ব্যক্তিকেন্দ্রিক,
বড্ড আহাম্মকের ন্যায় খুঁজি পরিশুদ্ধ আনন্দময়তা আর শান্তি।
বউ হবে একদম লক্ষ্মী, ডেটিংয়ে যাবে হট জিন্সের অপ্সরী!
বর হবে সৎ-চরিত্রবান, রসাত্মক চ্যাটিং হবে গভীর রাতে বন্ধুর সাথে!
মানবিকতায় হৃদয় হয় প্রশান্ত, দানবিকতায় বাড়ে আমিত্বের ঐশ্বর্য,
ঐশ্বর্যের মরীচিকার পিছে ছুটে, হৃদয়ে দানবিকতা পুষে,
খুঁজছি দিগ্বিদিক প্রশান্তিময় আনন্দ, আহা!
দানবিকতা পোষা অশান্ত হৃদয়-অতৃপ্ত মন, হয় কি কভু প্রশান্তময়?
দোর্দন্ড প্রতাপশালী মাফিয়ার হুমকিতে যে শির নাহি টলে,
সুদর্শনার টলমলে যৌবনের মহাকর্ষনে যে শির নাহি হয় বিভ্রান্ত,
প্রাচুর্যময়তার প্রলোভন মুহুর্তে যে শির জানায় টা টা,
সেই শির শ্রদ্ধায় অবনত হয় ট্যাক্সিচালকের মানবিকতায়!
ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার নিষ্ঠুরতায় মানুষ হয় দানবিক, হারায় শান্তি,
আমির প্রসারতায় আমরা চেতনায় মানুষ হয় মানবিক,
সর্বজনীন কল্যাণময় ভাবনার সার্বজনীন কর্মে মানবিকতার প্রকাশ,
পরিপূর্ণ আনন্দ-তৃপ্তি-প্রশান্তময়তার আধার মানবিকতাময় হৃদয়।
এস/এ