খেলা পুরোদমে শুরু হলে বিএনপির গণজোয়ার হারিয়ে যাবে
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের রাজনীতির মাঠের খেলা এখনো সূচনা পর্বেই রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, খেলা পুরোদমে শুরু হলে বিএনপির গণজোয়ার হারিয়ে যাবে।
বুধবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে সমাবেশে এ তিনি মন্তব্য করেন।
বিএনপি এখন পথহারা পথিকের মতো দিশাহারা দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা তো এখনো শুরু করিনি। মাত্র সূচনা। খেলা যখন হবে, কোথায় যাবে এই গণজোয়ার? এখন নেতা–কর্মীরা আছে, জনগণ নাই। এখন জনগণের কথা নাই। জনগণ ভালো আছে বিএনপির মন খারাপ।
বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, হায়রে আন্দোলন! যত নেতা বাড়ে, যত জোট বাড়ে। বাড়তে বাড়তে ৫৪। জোয়ার যেটুকু ছিল, ঢেউ এসেছিল কিছু। সেই ঢেউ জোয়ার থেকে এখন ভাটা নেমে গেছে। আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, সরকার পতন, জোট গঠন-ভুয়া। সব ভুয়া মিলে ভুয়া। বিএনপি ভুয়া। তাদের কথা লোকে আর বিশ্বাস করে না।
ওবায়দুল বলেন, আমাদের জলিল ভাইয়ের (আবদুল জলিল) ট্রাম্পকার্ড দেখেছিলাম। ৩০ এপ্রিল (২০০৪)। ফখরুল মনে করেছিলেন, আমি একটা লাল কার্ড দেখাইয়া দিই। আমাদের জলিল সাহেবের ট্রাম্পকার্ডের পরিণতি কী, আমরাও জানি। তখন আপনাদের আমল। ট্রাম্পকার্ডের পরে লাল কার্ড। ফলাফল শূন্য। ভুয়া। লাল কার্ড, সরকারের পতন, ৫৪ দল, ১০ দফা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সবই ভুয়া। এরা ভুয়া নিয়েই আছে।
দেশে একদলীয় বাকশাল শাসন চলছে-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাকশালটা কী, ব্যাখ্যা করেন। বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ। বাকশাল কিন্তু একদল নয়। বাকশাল হচ্ছে জাতীয় দল। সব দলকে নিয়ে, সব মতকে নিয়েই বাকশাল।
ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, লজ্জা করে না? জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর কাছে দরখাস্ত করে বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন। প্রমাণ আছে। প্রতিষ্ঠাতা দরখাস্ত করে যে বাকশালে যোগ দেয়, সে বাকশালকে আপনি একদলীয় বলছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, কৃষক-শ্রমিক আন্দোলন করেছিল, তাদের আপনারা গুলি করে হত্যা করেছিলেন। কৃষক-শ্রমিককে বিএনপির পছন্দ নয়। কৃষক-শ্রমিকদের কোনো প্রতিষ্ঠান আপনাদের পছন্দ নয়। এই নাম শুনলেই আপনাদের অন্তর্জ্বালা। অন্তর্জ্বালায় মরে ফখরুল।
বিএনপির গণঅভ্যুত্থানের ডাকের বক্তব্যের সমালোচনা করে কাদের বলেন, এই ভূখণ্ডে গণঅভ্যুত্থান একটিই হয়েছিল। সেটা উনসত্তর সালে। নব্বইয়ের আন্দোলনকে আমি বলবো গণআন্দোলন। ওটাও গণঅভ্যুত্থান ছিল না। এরশাদের শেকড় ছিল অত্যন্ত দুর্বল, সেই জন্য গণআন্দোলনেই ভীত হয়ে পদত্যাগ করেছিল।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলো দ্রুত দিয়ে দেওয়ার জন্য তাগিদ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এক জায়গায় বসার অনুরোধ জানাচ্ছি। একজন বসবেন, আরেকজন না থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবেন। এটা হবে না। দুইজন বসে কমিটিগুলো করেন। সামনে নির্বাচন। গণসংযোগ করতে হবে। সদস্য সংগ্রহ অভিযান করতে হবে। তাই এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আওয়ামী লীগ এখনো মাঠে নামে নাই, কেবল মহড়া দিচ্ছি মাত্র, তাতেই বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ মাঠে নামলে বিএনপির কী হবে? গণ–অভ্যুত্থান করতে মানুষ লাগে। কিন্তু বিএনপির সাথে কোনো জনসম্পৃক্ততা নেই।
আগামী নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা মাঠে থাকবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপি আবারও ষড়যন্ত্র করছে, কারণ, তারা জানে এ নির্বাচনে তারা হেরে যাবে। জঙ্গিবাদ, খুন, অত্যাচারসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিল বিএনপির। তাই জনবিচ্ছিন্ন কাজের জন্যই জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।
এদিকে, বুধবার বিকেলে রাজধানীর বনানী মডেল স্কুল মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগ সংগঠিত, কিন্তু আমরা নেত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ এ বীরের দেশে বিশ্বাসঘাতকের অভাব নেই। আজকে বিএনপি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছে। বিশ্বাসঘাতকদের যোগসাজশ না থাকলে তারা কোনোদিন সফল হবে না, হতে পারে না।
তিনি বলেন, সংবিধানের বাইরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে কোনো অস্বাভাবিক সরকার আওয়ামী লীগ মানে না, মানবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন যথাসময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে।
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নাকে খত দিয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসে কি না তা দেখার অপেক্ষায় আছি। সরকারের পতন নয়, আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ আপনাদের (বিএনপি নেতাদের) পদত্যাগ দাবি করবে আপনাদের নেতাকর্মীরাই।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচিসহ বিভিন্ন স্তরের নেতারা।