যুবমহাসমাবেশ আজ, নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবে যুবলীগ
বিশেষ প্রতিনিধি: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগি সংগঠন যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবমহাসমাবেশ আজ শুক্রবার। করোনা সংক্রমণের পরে এই প্রথম কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে অন্তত ১০ লাখ নেতাকর্মী সমাগম হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে সারাদেশ থেকে বাস, লঞ্চ, ট্রাক, পিকাআপ ভ্যানসহ বিভিন্নভাবে জনস্্েরাত এখন রাজধানী ঢাকায়। এ যুব সমাবেশের মধ্য দিয়েই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
এদিকে, যুবলীগ বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রস্তুতি সভা করেছে। ওইসব সভার নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশ থেকে বাস, লঞ্চ, ট্রাক পিকআপ ভ্যান নিয়ে ঢাকায় এসে ইতোমধ্যে পৌছেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। কেউ কেউ আজ সকালে এসে পৌছেবেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ফলে রাজধানী ঢাকাও বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই ছিলো ব্যাপক যানজট। এছাড়া অনেকে ঢাকা এসে পৌছে আবাসিক হোটেলগুলোতে উঠেছেন। ফলে আবাসিক হোটেলগুলোর কোথাও সিট ফাঁকা নেই। পাশাপাশি কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাসায়ও উঠেছেন। এছাড়া ছোট ছোট পিকআপ ভ্যানে সারাদিনই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশে পাশে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে গান বাজিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের। পাশাপাশি পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্তর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, টিএসসি, জাতীয় জাদুঘর, শাহবাগ মোড়, রমনা পার্ক, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটিশন, কাকরাইল, বাংলামোটরসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় ছেয়ে গেছে ব্যানার, ফেস্টুনে। এছাড়াও, উদ্যানের বিভিন্ন গেট ও ভেতরে টহলে রয়েছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, আনসার, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
যুবলীগ সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তীতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় যুব মহাসমাবেশ করবে যুবলীগ। এ সমাবেশের মাধ্যমে সরকারবিরোধীদের নিজেদের শক্তি জানান দেবে সংগঠনটি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ ছাড়বে না যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এ লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা করছে। প্রস্তুতি সভা করেছে দেশের সব জেলা-উপজেলায়। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুবলীগ প্রস্তুতি সভা করেছে।
আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন, আজ ১১ নভেম্বর যুবলীগের প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরে মহাসমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনসমুদ্রে পরিণত হবে। ১১ নভেম্বর থেকে যুবলীগের দখলে থাকবে রাজপথ। আন্দোলন-সংগ্রামের নামে বিএনপি-জামায়াত যদি জানমালের ক্ষতি করলে রাজপথেই তাদের সমুচিত জবাব দেবে যুবলীগ। আগামী ২৪ সালের জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত যুবলীগ মাঠে থাকবে। এই যুব মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে রচিত হবে স্বাধীনতাবিরোধীদের জন্য ইস্পাত-কঠিন ভিত্তি। যা বিএনপি-জামায়াতের কাছে অজেয়, দুর্লঙ্ঘনীয়। যুবলীগের একজন নেতাকর্মী বেঁচে থাকতেও বিএনপি-জামায়াতের খায়েশ পূরণ হবে না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সব শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে আজকের যুব মহাসমাবেশ।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। আজ ১১ নভেম্বর আবারও প্রমাণ হবে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে। দেশের যুবসমাজ যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল, এটি যুব মহাসমাবেশে প্রমাণ হবে। যুবলীগ মিডিয়া ট্রায়ালে নয়, সত্যিকার অর্থে প্রমাণ করবে রাজপথ বিএনপির নয়, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের।
এ সম্পর্কে আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমান পবন বলেন, ইতোমধ্যে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা এসেছেন রাজধানী ঢাকায়। আর যারা বাকি রয়েছে আজ সকালের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে পৌছেবেন। আশা করছি সমাবেশে ১০ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিত হবেন। এরমধ্যে দিয়েই আমরা জানান দিতে চাই শেখ হাসিনার প্রতি কর্মীদের আস্থা ও বিশ্বাস। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতকে বোঝানো ভবিষ্যতে দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা করলে আর রেহাই নেই। আমরা আজ ১১ নভেম্বর থেকে আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবো। বিএনপি-জামায়াতকে আর কোনো সহিংসতা করার সুযোগ দেবো না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল বলেন, আজ ১১ নভেম্বর যুবলীগের ৫০তম সুবর্ণজয়ন্তীতে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কমপক্ষে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটাবে। আজ থেকেই যুবলীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত। আমাদের শক্তি সামর্থ জানান দেবো। আমরা বুঝিয়ে দিতে চাই আমাদের সঙ্গে জনগণ আছে। আর বিএনপি-জামায়াতের কোনো ষড়যন্ত্র এদেশে বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না। তবে তারা যদি সমাবেশের নামে কোনো ষড়যন্ত্র করে, যুব সমাজকে নিয়ে কঠোর জবাব দেবো।
এদিকে, যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সমাবেশের কারণে রাজধানীতে যাতে কোনো ভোগান্তি পোহাতে না হয়, সে জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ট্রাফিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি সামনে রেখেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থাও নতুন করে ঠিক করা হয়েছে।
সমাবেশস্থলে ঢোকার পাঁচটি প্রবেশপথ: ভিআইপি গেট বাদে সমাবেশে প্রবেশের গেট থাকবে পাঁচটি। এগুলো হলো– টিএসসির রাজু ভাস্কর্য-সংলগ্ন গেট, মেট্রোরেল স্টেশন গেট, রমনা কালীমন্দির গেট, মেট্রোরেল গেট-১ (মাজার গেটের পরের গেট) ও মাজার গেট। সমাবেশে প্রবেশের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সবুজ কার্ডধারী অতিথিরা ৩ নম্বর গেট (রমনা কালীমন্দির গেট) দিয়ে প্রবেশ করবেন। রংপুর বিভাগ, রাজশাহী বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগ ও ঢাকা মহানগর উত্তর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলা উত্তরের নেতাকর্মীরা প্রবেশ করবেন ১ ও ২ নম্বর গেট দিয়ে। বৃহত্তর ফরিদপুর, খুলনা বিভাগ, বরিশাল বিভাগ, সিলেট বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগ, ঢাকা জেলা দক্ষিণ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতাকর্মীরা প্রবেশ করবেন ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গেট দিয়ে।
যুবলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফরিদপুর ও খুলনা বিভাগ থেকে যারা পদ্মা সেতু হয়ে মহাসমাবেশে আসবেন, তারা হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে না এসে বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে আসবেন। কারণ, সিলেট বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগ, ফরিদপুর ও খুলনা বিভাগের নেতাকর্মী একই সঙ্গে হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহার করলে টোল প্লাজায় দীর্ঘ লাইন পড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া সাংবাদিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মোতাবেক ভিআইপি গেট, অর্থাৎ শিখা চিরন্তনী গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন।
বিভিন্ন জেলা থেকে গাড়ি আসার রুট: চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ থেকে যারা আসবেন, তারা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট, হাইকোর্ট, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার, পলাশী হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাড়ি নিয়ে আসবেন। ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল বিভাগ থেকে যারা বাসে আসবেন, তারা পদ্মা সেতু হয়ে বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে গুলিস্তান, নগর ভবনের সামনের রাস্তা, বঙ্গবাজার-সংলগ্ন রাস্তাগুলো এবং জিরো পয়েন্ট ওসমানী উদ্যান-সংলগ্ন এলাকা দিয়ে প্রবেশ করবেন। ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে মহাখালী, মগবাজার ফ্লাইওভার, কাকরাইল চার্চের বামে মোড়-সংলগ্ন রাস্তা হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসবেন। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ থেকে গাবতলী, মিরপুর রোড, সায়েন্স ল্যাব ক্রসিং, নিউ মার্কেট ক্রসিং, বামে মোড়; অথবা গাবতলী, মিরপুর রোড সায়েন্স ল্যাব ক্রসিং বামে মোড়, কাঁটাবন ক্রসিং ডানে মোড়, নীলক্ষেত ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসবেন।
এস/এ