পণ্যের মূল্য বাড়ালেই ব্যবস্থা:তথ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যেসব অসাধু ব্যবসায়ী আছেন করোনা বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে পণ্যের মূল্য ইচ্ছেকৃতভাবে বাড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতার ৫০ বছরে সাংবাদিকতায় নারী শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব পন্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এটি বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই সুযোগ নিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়, তাদের বিরুদ্ধেও সরকার ব্যবস্থা নেবে। কোন সৎ ব্যবসায়ী কাজ নয় এটি।
তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যে কথা বলছেন, বাংলাদেশে কোন মানুষ না খেয়ে থাকে না। কোথায় অনুসন্ধান করে এটি পেলেন। ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে, গ্রামগঞ্জে কোথাও শুনতে পাওয়া যায়না, মা আমাকে একটু ভাত দেবেন। আমাকে একটু বাশি ভাত দেবেন। এক মুষ্টি চাল ভিক্ষা দিবেন। সেই দিনও চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ আগের তুলনায় ভালো আছে। ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা যখন সরকারের ছিলেন, তখন কৃষকের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। আজকে প্রতিটি মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নের পেছনে নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। শেখ হাসিনা সরকার মনে করে নারীর অগ্রগতি হলেই দেশের অগ্রগতি সম্ভব। তাই আমি বলবো, এই ধরনের বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও তারেক জিয়ার শাস্তির মধ্যেই আপনাদের রাজনীতি রাখেন।
তিনি বলেন, গত ১৩ বছরে নারীদের অগ্রযাত্রা হয়েছে সেটি লক্ষনীয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একজন নারী হবেন, এটি সাংবাদিকরাও ভাবতে পারেননি। আমাদের দেশের নারীরা কোন অংশে পিছিয়ে নেই। এখন নারী হাইকোর্টের জজ, নারী এসপিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এটি আগে কখনো মানুষ ভাবেনি, একজন নারী এত বড় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী। বিরোধী দলীয় নেতা নারী। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত ১৩ বছরে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানি বেড়েছে। এর পিছনেও নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। গার্মেন্টসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ নারী কাজ করেন। যারা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনছেন। এটি অর্থনীতির দিকে তাকালে বোঝা যায়। বাসন মাজা, ভাত রান্না করা নারীরা করেন। আবার অফিস চালানো এই কাজটিও নারীরা করেন। পৃথিবীতে যত কাজ হয় তার ৭০ ভাগই করেন নারী। একজন কর্মজীবী নারী তিনি অফিসে কাজ করেন, সংসারের জন্য উপার্জন করেন, ঘরে ফিরে আবার রান্না ঘরের খবর রাখেন। বাচ্চার খবর রাখেন। বাচ্চা বড় হয়ে গেলে তাদের স্কুলে আনা-নেওয়ার কাজটিও করেন। আর স্বামী কিন্তু অফিস থেকে এসে পত্রিকা নিয়ে বসেন। অথবা এক কাপ চা নিয়ে বসে অথবা শরীরটা এলিয়ে দিয়ে একটু রেস্ট নেন। কিন্তু সেটি নারী পক্ষে সম্ভব হয়না। এটি আমার পরিবার থেকেও আমি দেখেছি। নারী উন্নয়ন অগ্রগতি মধ্যেই দেশের উন্নয়ন, সমাজের উন্নয়ন অগ্রগতি হয়। মানব উন্নয়ন সূচকে, সামাজিক সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছি। আমাদের দেশের নারীরা শিক্ষিত। নারীরা কর্মক্ষেত্রে অনেক বেশি পরিশ্রমী। আমাদের দেশের সমাজের দৃষ্টিকোণ এবং পাকিস্তানী সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পার্থক্য আছে।
সাংবাদিকতায় নারীদের অবদান প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি যখন দেখি একজন নারী সাংবাদিক কিভাবে ছোটাছুটি করেন। কত কষ্ট করে কত দক্ষতার সঙ্গে কাজগুলো করছেন। নারীর সাংবাদিকতার পিছনে প্রাইভেট চ্যানেল না হলে এটি সম্ভব হতোনা। পত্রিকায় নারী সাংবাদিকরা অনেক ভালো কাজ করেন। রিপোর্টিংয়ে কাজ করেন। সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাইভেট টেলিভিশনগুলো দেওয়ার কারনে। রেডিওতে প্রচুর নারী কাজ করেন। নারী সাংবাদিকরা এগিয়ে গেছেন। অনেক বড় পত্রিকার সম্পাদকও নারী। নারীরা সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, নারীকে পিছনে রেখে দেশ উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিএনপি জোট সরকারের আমলেও নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি যখন নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন কয়জন নারী মন্ত্রী ছিলেন। আমরা হিসাব করে দেখি, তার মন্ত্রিসভার তার বড় বোন ও আর একজন ছাড়া কেউ নারী মন্ত্রী ছিলেন না। কোথাও কোন নারীর ডিসি, এসপি ছিলেন না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার সমস্ত ক্ষেত্রে নারীদেরকে উৎসাহ দিচ্ছে। কাজগুলো কিন্তু বিএনপির সময় হয়নি। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় গত ১৩ বছরে সাড়ে চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতা দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেমিনারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন (বিএফইউজে) বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাইনুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা মিনু প্রমুখ।
এস/এ