সবজি রপ্তানি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস হবে: কৃষিমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক: সোমবার বিকালে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) চত্বরে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন তিনি।
এসময় মন্ত্রী বলেন, দানাদার খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। এখন নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের নিশ্চিত করতে কাজ করছি। পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে শাকসবজি ফলমূল উৎপাদনে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। ফলে গত ১২ বছরে সবজির উৎপাদন বেড়েছে সাত গুণ, আর বর্তমানে ১ কোটি ৯৭ লাখ টন সবজি উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সবজির বিপণনে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। পরিবহণ চাঁদাবাজি, মধ্যস্বত্ত্বভোগীসহ ঁঅনেক সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যা সমাধান করতে পারলে সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে। সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সবাইকে কাজ করতে হবে যেন সবজির দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে।
মন্ত্রী আরও বলেন, দেশে সবজি রপ্তানির সম্ভাবনা অনেক। রপ্তানি বাড়াতে আমরা কাজ করছি। অচিরেই সবজি রপ্তানি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎসে পরিণত হবে।
এসময় মেলায় অংশ নেয়া বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন মন্ত্রী। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল, বিএআরসি নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো. বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজির আলম, বিভিন্ন সংস্থা প্রধান এবং বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে মন্ত্রী কেআইবি অডিটরিয়ামে ‘পুষ্টি নিরাপত্তা ও কৃষি রূপান্তরে সবজির অবদান’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
এসময় মন্ত্রী বলেন, সামনে রোজা আসছে। শাকসবজির দাম বৃদ্ধি পেতে আশঙ্কা রয়েছে। তবে আমি আশ্বস্ত করতে পারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমাদের সবজির যে উৎপাদন হয়েছে, তাতে রোজায় পণ্যের দাম বাড়বে না।
কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে
বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএআরসি নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ অনুবিভাগ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র (সবজি বিভাগ) এর সিএসও ড. ফেরদৌসি ইসলাম। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল মুঈদ ও কার্নেল ইন্টারন্যাশনাল এর চেয়ারম্যান ডক্টর মো. সালেহ আহমেদ।
উল্লেখ্য, কৃষি মন্ত্রণালয় ৬ষ্ঠবারের মতো আয়োজন করেছে এই মেলা যা আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে সবজি মেলা। তিন দিনব্যাপী জাতীয় সবজি মেলায় ৫২টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টল অংশ নিয়েছে।
মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হরেক রকমের সবজি দেখার পাশাপাশি এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। এ মেলার উদ্দেশ্য হলো দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার ও জাতের শাকসবজির সাথে সাধারণ মানুষের পরিচিতকরণ, ভবিষ্যৎ সবজি উৎপাদনে প্রেরণা প্রদান, সবজি উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন প্রকার উৎপাদন প্রযুক্তি ও কলাকৌশল প্রদর্শন, সবজি উৎপাদনে ও সম্প্রসারণে গবেষণা প্রতিষ্ঠান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বীজ ব্যবসায়ী, রপ্তানিকারকদের কার্যক্রম ও সফলতা তুলে ধরা, সবজি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, পুষ্টিমান ও গ্রহনের বিষয়ে বিভিন্ন প্রকার পুস্তিকা, লিফলেট, পোস্টার, সিডি, ম্যাগাজিন, পত্রিকা প্রদর্শন ও বিতরণ, সবজির ওপর সেমিনার ও আলোচনা সভার মাধ্যমে সবজি চাষ ও বাজারজাতকরণের সমস্যা ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
ডিএইর তথ্যমতে, বিগত ১২ বছরে সবজি উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৭ গুন। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়, চীন ১ম ও ভারত ২য় অবস্থানে রয়েছে। কৃষি হচ্ছে আমাদের অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক খাত, এ খাত থেকে জিডিপির ১৩.২৯ শতাংশ আসে। দেশে প্রায় ১০০ টির মতো সবজি চাষ হয়ে থাকে।
২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কাটি ৯৭ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের পরিমান ছিলো ১ কাটি ৮৪ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন।
মেলা উদ্বোধনের পর থেকে বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণা দেখা গেছে। মেলায় সবজির পাশাপাশি মধু, মাশরুম, মাশরুমের রকমারি খাবারসহ নানাকিছু বিক্রি ও প্রদর্শন হচ্ছে।
এস/এ