কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি এলাকায় সমালোচনার ঝড়

কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি
এলাকায় সমালোচনার ঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নবগঠিত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে ঠাঁই পেলেন মাদক, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ নানা অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলার আসামি মো. লিটন সরকার। তিনি জেলার দেবিদ্বার উপজেলার বাগুর গ্রামের মৃত আবদুল মজিদ সরকারের ছেলে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ কমিটির অনুমোদন দেন। এদিকে কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পাওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ এলাকার বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। এ নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা যায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। ৩ বছরের জন্য গঠিত এ কমিটিতে মো. সুমন সরকারকে (জি.এস) সভাপতি ও মো. লিটন সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আগামী এক মাসের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা প্রদানের জন্য তাদের নির্দেশ দেয়া হয়।

এদিকে কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে লিটন সরকারকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার শুরু হয়।
স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম নেতাকর্মীদের মাঝেও এ নিয়ে দেখা দেয় চাপা ক্ষোভ। দলের স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, আমাদের প্রত্যাশা ছিল, নতুন কমিটিতে ক্লিন ইমেজধারী নেতৃবৃন্দের ঠাঁই হবে। কিন্তু যাকে (লিটন সরকার) সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। সে রাজনীতিকে পুঁজি করে এলাকায় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগে হাফ ডজনাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে। জেলার দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি থেকে হঠাৎ করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে লিটন সরকারকে দায়িত্ব দেয়ায় দলের স্থানীয় এলাকার ত্যাগী নেতাকর্মীরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় তারা অবিলম্বে কমিটিতে ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৯ জুন পাঁচ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট ও অস্ত্রসহ ডিবি পুলিশের অভিযানে ক্রসফায়ারে নিহত হন লিটনের চাচাতো ভাই রুবেল সরকার ওরফে বোতল রুবেল। ওইদিন লিটন সরকার পালিয়ে জীবন রক্ষা করে। তার অপর চাচাতো ভাই সাদ্দাম সরকার ২০১৭ সালে মাদক মামলায় পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হয়ে কারাভোগ করেন। প্রায় ডজনখানেক মামলার আসামী এই বাঘা লিটন কখনও নিজকে পরিচয় দেয় সরকার মো. লিটন (আবরার) নামেও।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তানজির আহমেদ তুহিন বলেন, একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক সরবরাহকারী ও গত উপজেলা নির্বাচনে ও বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করার পরও কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মতো পরিচ্ছন্ন সংগঠনের জেলার সাধারণ সম্পাদক করে উল্টো তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাদের হেনস্থা এবং আওয়ামী লীগ অফিসে ভাংচুর ও হামলা করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দেবিদ্বার উপজেলার নবিয়াবাদ গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে মীর্জা বাহাদুর, আবু ছালাম ওরফে বাচন মিয়ার স্ত্রী আসমা বেগম থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন। তার বিরুদ্ধে চান্দিনা থানায় উপজেলার খাদঘর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী তাসলিমা বেগমের মামলা রয়েছে। এমন ব্যক্তিকে কেন এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেয়া হলো তা বোধগম্য নয়।

এস/এ