রোহিঙ্গা সঙ্কট বিশ্ব নেতাদের জন্য লজ্জার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রোহিঙ্গা সঙ্কট বিশ্ব নেতাদের জন্য লজ্জার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্কট নিরসনে বিশ্ব নেতারা এগিয়ে আসছে না, যা লজ্জার বলে গতকাল উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ঢাকায় অবস্থিত সুইজারল্যান্ড দূতাবাস, আর্ন্তজাতিক মানবতাবাদি সংস্থা আইসিআরসি এবং ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত ‘মানবিক নীতি: এখানে এবং এখন’ শীর্ষক সমকালীন শিল্প প্রদর্শনী ও উপস্থাপনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল এমন মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল বলেন, ‘বিশ্বে প্রতিদিনি জলবায়ু সঙ্কটসহ একাধিক কারণে প্রচুর মানুষ বসত-ভিটা হারাচ্ছে, দুঃখ-দুর্দশায় পড়ছে। আমাদের প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারে, তাদের নাগরিকরা, রোহিঙ্গারা নির্যাতন-নিপিড়নের শিকার হয়ে এখন বাস্তুচ্যূত। বাংলাদেশ মানবিক কারণে ১১ মিলিয়নেরও বেশি মিয়ানমারের নাগরিক, রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু বিশ্বনেতারা এই সঙ্কট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যা বিশ্ব নেতাদের জন্য লজ্জার।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড অনুষ্ঠানে বলেন, ‘মানবিক নীতিগুলি সুইস জনগণ হৃদয় দিয়ে অনুভব করে এবং এই অসামান্য মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতেই ১৯৭০ সালের গোড়ার দিক থেকে বাংলাদেশের সাথে সুইজারল্যান্ডের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সুইজারল্যান্ড এবং বাংলাদেশ যখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে, তখন যৌথভাবে আয়োজিত এই প্রদর্শনী আমাদের জন্য বিশেষ গুরত্ব বহন করে।’

বাংলাদেশে আইসিআরসি প্রতিনিধি দলের প্রধান কাটজা লরেঞ্জ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আইসিআরসি মানবিক সহায়তা নিয়ে বাংলদেশের পাশে ছিল। আমরা শত-হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সুরক্ষা ও সহায়তা দিয়েছি। সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আমরা সহায়তা করা চালিয়ে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক আইনের ভিত্তিতে আমরা বন্দিদের অধিকার সুরক্ষা, শারিরিকভাবে নির্যাতিতদের পরিসেবা প্রদান করে থাকি। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাথে যৌথভাবে আমরা পারিবারিক সম্পর্ক পুন:স্থাপন করার চেষ্টা করি, যেখানে নানা কারণে আত্মীয়দের মধ্যে যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের সাথে পুনর্মিলনে কাজ করি। আমরাকক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের কাছাকাছি বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিকদের নানাভাবে সহায়তা দিয়ে থাকি।’

‘মানবিক নীতি: এখানে এবং এখন’ শীর্ষক সমকালীন শিল্প প্রদর্শনী ও উপস্থাপনা’র আয়োজকরা জানান, মানবিক সংঙ্কট বিশ্বজুড়ে মানুষের দুর্দশার কারণ। এমনকি যারা এই সংকট দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত নয়, তারাও অসহায় বোধ করে। কিন্তু মানুষ কীভাবে এই সঙ্কটে হতাশাগ্রস্তদের সাহায্য করতে পারে? সমকালীন শিল্প প্রদর্শনী ও উপস্থাপনা ‘মানবিক নীতি: এখানে এবং এখন’ এই মানবিক ও ব্যক্তিগত আবেগ এবং অনুসন্ধানের উত্তর খুঁজতে সাহায্য করে। মানবতা ন্যায়পরায়নতা, নিপেক্ষতা ও স্বাধীনতা হলো মানবিক নীতির মূল ভিত্তি। যত্নসহকারে নির্বাচিত ভিডিও ও আলোচিত্রের মাধ্যমে দর্শকদের মধ্যে মানবিক নীতির তাৎপর্য ও দৈনন্দিন জীবনের এর গুরত্ব তুলে ধরাই এই প্রদর্শনীর লক্ষ্য।

প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত ছবিগুলোতে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং বিগত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশে আইসিআরসি-এর কর্যক্রমের প্রতিফলন এবং পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের মানবিক কার্যক্রমের প্রতিফলন ঘটেছে। এছাড়াও ১০ জন সুইস আলোকচিত্রির লেন্সের মধ্য দিয়ে দেখা দৈনন্দিন জীবনে মানবিক নীতিমালার প্রতিফলন ঘটেছে তাদের নির্মিত ১০টি শর্ট ফিল্মে। পুরস্কারপ্রাপ্ত ৬টি আলোকচিত্রও রয়েছে প্রদর্শনীতে। এই প্রদর্শনী সরাসরি এবং অনলাইনে দর্শকদের ব্যক্তিগত মতামত, অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ৫ম তলায় আয়োজিত এই প্রদর্শনী আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।

এস/এ