মাদক নিরাময় কেন্দ্রে যুবকদের যৌণ নিপীড়নকারী ফিরোজার শাস্তির দাবি

মাদক নিরাময় কেন্দ্রে যুবকদের যৌণ নিপীড়নকারী ফিরোজার শাস্তির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: গাজীপুরের ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন একাধিক কিশোর ও যুবককে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে, ‘ধর্ষক’ ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের (৩৫) দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করে মানবাধিকার সংস্থা এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী, এবং এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আহবায়ক মাহিন মুর্তজা অনিক। উপস্থিত ছিলেন এইড ফর মেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খালিদ মাহমুদ। এছাড়াও অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মানববন্ধন কর্মসূচির সাথে ছিলেন এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক খান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক মাহিন মূর্তজা বলেন, একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি যে, গাজীপুরের “ভাওয়াল মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে” আশ্রিত অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরদের উপর পাশবিক যৌন নির্যাতন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফিরোজা নাজনীন ওরফে বাঁধন (৩৫)। এছাড়াও চিকিৎসা দেওয়ার নামে, পছন্দের পুরুষ রোগীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে তাদের সাথে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার এই বিকৃত আচরণ ও জঘন্য অপরাধকে ‘ধর্ষণ’ ব্যতীত অন্যকিছু বলার সুযোগ নেই। একজন ধর্ষক, ধর্ষণের অপরাধের জন্য যেই শাস্তি পান, ফিরোজা নাজনীন বাঁধনকেও একই শাস্তি প্রদান করার দাবি জানাচ্ছি।“

এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম বলেন, “একজন নারী যে একজন পুরুষের উপর যৌন নির্যাতন করতে পারে ও পুরুষকে ধর্ষণ করতে পারে, এই ধারণাটি উন্নত বিশ্বে স্বীকৃত হলেও, বাংলাদেশের বর্তমান আইনে স্বীকৃত নয়। ব্রিটেনের ল্যাংক্যাস্টার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডক্টর সিওভান উইয়ার একটি গবেষণায় দেখান নারী কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণ সম্ভব। বরং অসম্ভব মনে করাটাই একটা মিথ বা কাল্পনিক উপকথা। উক্ত গবেষণাটি ২০১৭ সালে প্রতিবেদন আকারে বিবিসিতে প্রকাশিতও হয়েছে।
একি সাথে ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের মত বিকৃত মানসিকতার নারী কর্তৃক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর ও পুরুষ রোগীদেরকে চিকিৎসা দেওয়ার নামে মাদকাসক্ত করে যৌন নিপীড়ন ও জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করার ঘটনা আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে নারীও ধর্ষণ করতে পারে এবং পুরুষও নারীর দ্বারা ধর্ষিত হতে পারে। এখন সময় এসেছে এই চরম সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার। নাজনীনের মত যৌন নিপীড়নকারী ধর্ষকদেরকে ধর্ষণের চূড়ান্ত শাস্তি প্রদান করতে হবে, আইনে ধর্ষণের লিঙ্গ-নিরপেক্ষ সংজ্ঞায়ন করতে হবে এবং দন্ডবিধি ৩৭৫ ধারার লিঙ্গনিরপেক্ষ সংস্কার করতে হবে।“

এইড ফর মেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খালিদ মাহমুদ বলেন, “চিত্রনায়ক অনিক রহমান অভিসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর বক্তব্য ও র‍্যাবের তদন্তের মাধ্যমে সামনে এসেছে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে ফিরোজা নাজনীন কর্তৃক কিশোর ও পুরুষদের উপর নারকীয় যৌন নিপীড়ন এবং জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনে পুরুষ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরদেরকে বাধ্য করার বর্ণনা, যা অবশ্যই ‘ধর্ষণ’ হিসেবে বিবেচ্য। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এটাই যে, আমাদের দেশের আইন ও দন্ডবিধিতে নারী কর্তৃক পুরুষ ধর্ষণকে ‘ধর্ষণ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় না। ফলে ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের মত একজন ধর্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করা যাচ্ছে না, যা ধর্ষিত কিশোরদের প্রতি চরম অন্যায়। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।

এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক খান মুঠোফোনে যুক্ত হয়ে বলেন, “ধর্ষণের আন্তর্জাতিক ও সর্বজনীন ধারণা ও সংজ্ঞা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি যদি অপর একজন ব্যক্তির সাথে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে সেটাকে ধর্ষণ বলে। ফিরোজা নাজনীন বাঁধন সেই কাজটিই করেছেন, তিনি মাদকাসক্ত কিশোর ও পুরুষদেরকে শারীরিক নির্যাতনপূর্বক তাদের সাথে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। সুতরাং তিনি একজন ধর্ষক এবং ধর্ষণের শাস্তিই তার প্রাপ্য। বাংলাদেশকে মানবাধিকার রক্ষায় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং দেশীয় আইনে ধর্ষণের লিঙ্গ-নিরপেক্ষ সংজ্ঞায়ন করে ফিরোজা নাজনীন বাঁধনের মত ধর্ষককেও ধর্ষণের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।“

এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ ও অধিকার-সচেতন তরুণরাও মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে।

এস/এ