বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ধরে রাখতে হবে : নাজিম উদ্দিন আল আজাদ

বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ধরে রাখতে হবে : নাজিম উদ্দিন আল আজাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএলডিপি চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী এম. নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বলেন, বাংলাদেশে যে হাজার বছরের ধর্মীয় সম্প্রীতি রয়েছে তা যে কোন মূল্যে ধরে রাখতে হবে। কোনো একক ধর্মের মানুষই নয়, হিন্দু-মুসলিম সকল ধর্মের মানুষ এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট যেন না হয়।

শনিবার (২৭ নভেম্বর) রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট সেমিনার হলে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-বিএলডিপি উলামা পরিষদ আয়োজিত “অসাম্প্রদায়িক চেতনার আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি ঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ”-শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য। বঙ্গবন্ধুকে বলা হয়েছিল ইসলামী প্রজাতন্ত্র করার জন্য কিন্তু তিনি করেননি। কারণ মুক্তিযোদ্ধটা সব ধর্মের মানুষই করেছে। অথচ সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের জন্য একটি ধর্মের মানুষের ওপর হামলা করা হচ্ছে। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সেইসঙ্গে সামাজিক যোগাাযোগমাধ্যমে যা-ই ঘটে তা যেন কেউ না জেনেই প্রচার না করি।

তিনি বলেন, আমাদের কারণে ভারতের মুসলিমরা যেন হামলার শিকার না হয়। আবার তাদের দেশের কোনো ঘটনার জন্য আমাদের এখানে যেন কেউ হামলার শিকার না হয়। আমাদের যে সম্প্রীতির সম্পর্ক রয়েছে সেটা যেন নষ্ট না হয়। আমরা যেন সম্প্রীতির বন্ধন ধরে রাখি।

বিএলডিপি উলামা পরিষদের আহ্বায়ক মাওলানা মো. সাজেদুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাজনীতিক ও এইচ.এম. কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশিদ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, গণ আজাদী লীগ মহাসচিব মুহম্মদ আতাউল্লাহ খান, খ্রীষ্টিয়ান এসোসিয়েশন বাংলাদেশ যুগ্ম আহ্বায়ক মি. গাব্রীয়েল রোজারীও, বাংলাদেশ কংগ্রেস মহাসচিব এডভোকেট মো. ইয়ারুল ইসলাম, বাগসদ চেয়ারম্যান সরদার শামস আল মামুন, গীত সংঘ বাংলাদেশের প্রকাশনা সম্পাদক গোবিন্দ লাল সরকার, অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম পালি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জিন বোধি ভিক্ষু, স্বাত বক্তব্য রাখেন বিএলডিপি মহাসচিব মনিরুজ্জামান স্বাধীন, বিশেষ বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিএলডিপি উলামা পরিষদের উপদেষ্টা প্রিন্সিপাল মুফতী আরিফ বিল্লাহ।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে এরশাদ কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, হিন্দু-মুসলিম সকল ধর্মের মানুষ এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। দেশটি স্বাধীন করেছিল। এরপরও যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না তারা দেশটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হোক তা চায়নি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ‘গাহি সাম্যের গান’ বিদ্রোহী কবির কবিতার এই লাইনটিতেই রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হলো, যেখানে সব মানুষ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার ভোগ করে। রাজনৈতিক কারণে মতবাদ থাকলেও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ একটি সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িকতার এক স্বর্ণসময় আমরা প্রত্যক্ষ করেছি মুক্তিযুদ্ধে। সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব পেশার মানুষ এক জোট হয়ে আন্দোলন করেছে, যুদ্ধ করেছে। তখন ধর্মীয় ভেদাভেদ ছিল না, আবার ধর্মহীনতাও ছিল না। সব পেশা ও ধর্মের মানুষ যদি এক হয়ে কাজ না করতে পারি তবে এ দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রফেসর ড. জিন বোধি ভিক্ষু বলেন, যে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-ধারার মনোভাবের মাধ্যমেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, যে দেশে কখনোই সাম্প্রদায়িকতা মনোভাবের জন্ম হতে পারে না। একটি স্বাধীন দেশকে টিকিয়ে রাখতে হলে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, বর্তমান বাংলাদেশেও অসাম্প্রদায়িক চেতনা তথা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি লালনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এর মূলে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, এর মূলে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। দেশের হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল।

এস/এ