খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠাবে কি না দ্বিধা দ্বন্দ্বে সরকার

খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠাবে কি না দ্বিধা দ্বন্দ্বে সরকার

বিশেষ প্রতিনিধি: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ফলে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার অসুস্থতা নিয়ে রয়েছে আলোচনা। এ আলোচনা এখন রাজনৈতিক নয়। আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে দাড়িয়েছে মানবিকতার। যদিও বেগম খালেদা জিয়া দন্ডিত আসামি। তারপরেও ফৌজদারি ৪০১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু একজন দন্ডিত আসামি কোনোভাবেই বাইরের দেশে চিকিৎসা নিতে পারেন না। সঙ্গত কারণে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে কি মানবিক দিক বিবেচনা করে ফৌজদারি ৪০১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেবেন কি না?

সরকারের একাধিক সূত্র বলছে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দেবে কি দেবে না, তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে রয়েছে সরকার। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কেউ কেউ মনে করেন, তাকে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা বলে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিলে এটি ইতিহাসের নজির হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে সরকারের আরেকটি অংশ মনে করে, খালেদা জিয়াকে বিদেশ গিয়ে চিকিৎসার সুযোগ দিলে সেটি হিতে বিপরীত হতে পারে। সেখানে গিয়ে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হতে পারে।

এদিকে, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০ দলীয় জোটের ৫টি দলের শীর্ষ নেতারা গত ২১ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর একটি স্মারক দেওয়া হয়। পরে ২৩ নভেম্বর জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে মানবিক দিক বিবেচনা করে বিদেশে পাঠানোয় একটি স্মারক লিপি দেওয়া হয়।

এছাড়া বিএনপি খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আলোচনা সভা, সেমিনার, মানববন্ধনসহ একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কর্মসূচির নামে বিএনপি কোনো সহিংসতা করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারার ক্ষমতা বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত মানবকি। তিনি মানবিকতা দেখাতে জানেন। আমরা মানবিকতা দেখাতে জানি। আমি একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যখন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হয়, তখন কিন্তু ওনার পরিবার যে আবেদন করেছিল, সেটা মানবিক দিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখছেন। তখন কিন্তু কোনো দাবি তুলতে হয়নি, প্রধানমন্ত্রী নিজেই করেছেন। সে ক্ষেত্রে মানবিকতার কমতি আমাদের নেই।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোয় জাতীয়তাবাদি আইনজীবীরা স্মারকলিপি দিয়েছেন। এটা নিয়ে আলাপ আলোচনা করছি। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে, সেটা সবাই জানেন। তাই আমি এটা নিয়ে একটু আলাপ আলোচনা করি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরে তারপর বলবো। আলাপ-আলোচনা করে গুরুত্ব দিয়ে যতটুকু সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, আমরা সেটাই করবো।

আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে ৪০১ ধারা আলোচনায় আমি এখন যেতে চাই না। আমাদের স্বাভাবিক আইনে মত র্পাথক্য থাকবে। আমারও বিএনপির আইনজীবীদের সঙ্গে আইনে মত র্পাথক্য আছে। ওনারা (বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা) যে ৪০১ ধারা, উপধারার কথা বলেছেন, সেখানে তারা বলেছেন ‘কোথাও বিদেশ যাওয়া যাবে না কথাটি বলা নেই’। সেখানে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে বলা না থাকলেও একটা কথা বলা আছে সেটা হলো, শর্তযুক্ত বা শর্তমুক্ত। সেখানে দুটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। তারা যে স্মারকলিপি দিয়েছেন, সেটা আমি অবশ্যই পর্যালোচনা করব। তবে সিদ্ধান্ত ও মতামতের ব্যপারে আলোচনার প্রয়োজন আছে। সেটা আমরা করব।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে তাদের নেতারা রাজনীতি করছেন। সরকার খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিতে বদ্ধ পরিকর। তবে অতীতেও দেখেছি খালেদা জিয়া যখন অসুস্থ হয়েছেন তখনও সবসময় তারা দাবি তুলেছেন তাকে বিদেশ পাঠাতে হবে। হাঁটুতে ও গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও তাকে বিদেশ পাঠাতে হবে কেন? খালেদা জিয়া খুব অসুস্থ হলে দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসকদের দিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা যেতে পারে। তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার আন্তরিক। খালেদা জিয়াকে অসুস্থ রেখে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কিছু হলেই বিদেশ পাঠাতে হবে এই জিকির তোলার কারণ কী? কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তারা খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠিয়ে দিতে চান। তারা খালেদা জিয়াকে পাঠাতে চান লন্ডনে, যেখানে তারেক জিয়া রয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়েও খালেদা জিয়া যাতে সেখান থেকে আবারও রাজনীতি করতে পারেন। তারেক রহমানও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়ে সেখান থেকে রাজনীতি করছেন। খালেদা জিয়াকে পাঠিয়ে দিয়ে তারা সে কাজটি করতে চায়। আসলে খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর দাবি তার স্বাস্থ্যগত কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণে।

এস/এ