মাতুয়াইল ভাগাড়ে সৃষ্ট গ্যাস পরিমাপে দক্ষিণ সিটিকে জাইকা’র গ্যাস এনালাইজার ও ড্রোন প্রদান

মাতুয়াইল ভাগাড়ে সৃষ্ট গ্যাস পরিমাপে দক্ষিণ সিটিকে জাইকা’র গ্যাস এনালাইজার ও ড্রোন প্রদান

নিজস্ব প্রতিবেদক : মাতুয়াইলে অবস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) কেন্দ্রীয় ভাগাড়ে উৎপন্ন হওয়া গ্যাসের সঠিক পরিমাপ নির্ণয়ে সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় গ্যাস এনালাইজার, ড্রোন ও লিচেট পরিমাপক যন্ত্র হস্তান্তর করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এর প্রতিনিধিবৃন্দ। 

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে জাইকা’র প্রতিনিধিবৃন্দ দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদের কাছে এসব যন্ত্রপাতি হস্তান্তর করেন।  

এসব যন্ত্রপাতি পরিচালনায় দক্ষতা অর্জনে জাইকা দক্ষিণ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের দুই জন কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করবে বলে জানানো হয়। 

জাইকা মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে উৎপন্ন গ্যাসের পরিমাণ সঠিকভাবে পরিমাপ করতে দক্ষিণ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগকে এই গ্যাস এনালাইজার কিট প্রদান করেছে। ল্যান্ডফিল ও পার্শ্ববর্তী জমিতে সৃষ্ট গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ নিরূপণ, গ্রিনহাউজ গ্যাসের স্থানিক তথ্য কোষ সংরক্ষণ করা হবে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে মিথেন(CH4), কার্বন ডাই অক্সাইড(CO2), হাইড্রোজেন সালফাইড(H2S), কার্বন মনো অক্সাইড(CO) ইত্যাদি গ্যাস প্রবাহের পরিমাপ নির্ণয় করা হবে।

সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতির মধ্য Phantom 4 Pro মডেলের ড্রোনটি অপারেশন পয়েন্ট হতে ১০ কি.মি. ব্যাসার্ধে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। পাশাপাশি এই ড্রোনের সাহায্যে ল্যান্ডফিলের মেয়াদ নির্ধারণ, ল্যান্ডফিলের উচ্চতা নির্ধারণের মাধ্যমে সেটেলমেন্ট এর হিসাব রাখা, ল্যান্ডফিল থেকে সৃষ্ট দূষিত পানি প্রবাহের হটস্পট চিহ্নিত করা, দখলকৃত খালসমূহের অবস্থান চিহ্নিত করা, ল্যান্ডফিল ও আশে পাশের বায়ুদূষণের (গ্রীণ হাউজ গ্যাসসহ) উৎস চিহ্নিত করা এবং নির্ধারিত স্থানের বাইরে ময়লা ফেলার অনুমোদনহীন স্থান চিহ্নিত করা যাবে। 

লিচেট পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট দূষিত পানির বিভিন্ন Parameter এর মাত্রা, যেমন – pH, DO (Dissolved Oxygen) এবং EC (Electric Conductivity) নিরূপণ করা যাবে। 

জাইকা’র ৩ জন কর্মকর্তা এই গ্যাস এনালাইজার, ড্রোন ও লিচেট পরিমাপক যন্ত্র পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ঢাদসিক’র ২ জন কর্মকর্তাকে ৩ মাস কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করবে।  

কিট হস্তান্তর পরবর্তী এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাদসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, “দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। প্রতিদিনকার সেসব বর্জ্য আমরা সংগ্রহ করে মাতুয়াইল কেন্দ্রীয় ভাগাড়ে নিয়ে যায়। সেসব বর্জ্যের একাংশ হতে নানা ধরনের গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন হয়। ফলে আমরা প্রতিদিন সেখানে কি পরিমান গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে তা মনিটরিং করতে পারব। এতে করে আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয়তা সাপেক্ষে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব। শুধু তাই নয়, পর্যবেক্ষণ হতে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তও আমরা বিশ্লেষণ করতে পারব। এর ফলে আরও কার্যকর ও যথোপযুক্তভাবে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারব। 

একটি বিদেশী গণমাধ্যম ‘মাতুয়াইল কেন্দ্রীয় ভাগাড়ে আশঙ্কাজনক হারে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন’ হওয়ার অপপ্রচার চালিয়েছে উল্লেখ করে ঢাদসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, “কিন্তু আমরা দেখলাম, সেই গণমাধ্যমের তথ্য সঠিক নয়। তারা প্রতিবেদনে মিথেন গ্যাস উৎপত্তিস্থল হিসেবে যে স্থানকে চিহ্নিত করেছে, বস্তুত সেই স্থান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার অন্তর্গত নয়। যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যতে আর কোনো বিদেশি গণমাধ্যমে এমন আজগুবি ও ভিত্তিহীন খবর প্রচার করার সুযোগ পাবে না।”

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ঢাদসিক এর প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর সিতওয়াত নাঈম, “প্রজেক্ট ফর স্ট্রেন্থ্যাদানিং অব সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইন ডিএসসিসি” প্রকল্পের প্রকল্প প্রধান মাসাহিরো সাইতো (Masahiro Saito), জাইকা’র প্রধান কার্যালয়ের প্রতিনিধি মাতসুমোতো ডাইকি (Matsumoto Daiki) এবং ঢাদসিক’র বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।   

এস/এ