উইঘুরদের মুসলিম নিধনের বিশ্ব নীরব কেন : বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক
নিজস্ব প্রতিবেদক : চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর চীনা কর্তৃপক্ষের অব্যাহত নির্যাতন ওই এলাকার ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বিরাট হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে মন্তব্য করে বিচাপতি শামসুদ্দিন মানিক বলেন, প্রদেশটির কাশগড় এবং উরুমকি শহরের প্রধান মসজিদগুলো জনশূন্য হয়ে পড়েছে। সেখানে নামাজ আদায়সহ ধর্মকর্ম পালনের জন্য তেমন কাউকে দেখা যায় না। পুরো প্রদেশটিকে এক ধরনের জেলখানায় পরিণত করেছে কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) বাংলাদেশ সোস্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের চীন সরকার কর্তৃক উইঘুঁর মুসলিম নিধনের প্রতিবাদের দিনব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খা মিলনায়তনে আয়োজিত “চীন সরকার কর্তৃক উইঘুঁর মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর চরম নৃশংস নির্যাতন গণহত্যা এবং বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে আমাদের করণীয়” শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অত্যাচারসহ মুসলিম উইঘুরদের অমানবিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও এযাবৎ মুসলিম বিশ্বের নেতাদের জোরালো কোনো প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়নি। যে মুসলিম বিশ্ব প্রতিরোধ-প্রতিবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিনিদের ওপর অত্যাচার, রোহিঙ্গা নিধনের বিষয়ে; উইঘুরদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচারের ঘটনায়ও তাদের মুখ খুলতে দেখা যায়নি। কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকেও এ ব্যাপারে জোরালো উচ্চবাচ্য করতে আজ পর্যন্ত শোনা যায়নি।
সংগঠনের উপদেষ্টা প্রফেসর ড, নিম চন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে প্রধান সমন্বয়ক মুফতী মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ীর সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আতাউর রহমান মিয়াজী, আলোচনায় অংশগ্রহন করেন সিনিয়র সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান, সিনিয়র সাংবাদিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মুস্তফা ভূঁইয়া, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ধর্মীয় আলোচক আল্লামা মহিউদ্দিন খাঁন ফারুকী, সাংবাদিক এড শাহেদুল আলম রেজভী, সাংবাদিক যুবনেতা মানিক লাল ঘোষ, আবু হেনা মোস্তফা সাদেক সংগঠনের সমন্বয়ক শেখ জনি ইসলাম, সমীরণ রায়, মাওলানা ইউসুফ হাসান মাহমুদী প্রমুখ।
প্রফেসর ড. আতাউর রহমান মিয়াজী বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মূল শিক্ষা মানুষকে ভালোবাসা, সব মানুষের কল্যাণ সাধন এবং যেকোনও সৃষ্টির ক্ষতি থেকে বিরত থাকা। ইসলাম সব মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তির ধারক-বাহক। কোনও মুসলিমই সন্ত্রাসী নয়, কোনও রাষ্ট্রের জন্য হুমকি নয়। আমরা চীনে উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে সব রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বন্ধ করে নাগরিক হিসেবে মুসলিমদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।
বক্তারা বলেন, চীন সরকার গোপনে বহু উইঘুর মুসলিম স্কলারের একপক্ষীয় বিচার করেছে। বিশিষ্ট উইঘুর ব্যক্তিত্বদের গত কয়েক বছরে আটক বা গুম/খুন হয়ে গেছেন শিনজিয়াং হতে। ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান রাইটস বিষয়ক কমিটি ২০১৮ সালের শেষে এক প্রতিবেদনে বলেছে,১০ লাখ উইঘুরকে চীনের ‘সন্ত্রাসবাদ সংশোধন’ সেন্টারগুলোতে আটক রাখা হয়েছে। আর ২০ লাখ মানুষকে ‘রাজনৈতিক ও দীক্ষাদান কেন্দ্রে’ থাকতে ও ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করা হচ্ছে। অর্থাৎ নারী-শিশু ছাড়া কেউ বাদ নেই। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, যে সব লোকজনের ২৬টি বাইরের দেশে আত্মীয়-স্বজন আছেন তাদের এ সব ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে।
তারা বলেন, চীন মনে করেছিল বিশ্ববাসীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সোনা-রুপার খনি সমৃদ্ধ উইঘুর মুসলিম জাতির নিজস্ব মাটি থেকে উৎখাত করে বা তাদের নিজেদের ‘হান’ জাতিতে রূপান্তর করে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণকে আরও নিখুঁত করবে। কিন্তু শত মাইল উপরের সেটেলাইট ক্যামেরাকে ফাঁকি দিতে পারেনি ।
এছাড়াও সংগঠনটি সকালে শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন,পথসভা ও পথনাটক প্রদর্শনের মাধ্যমে উইঘুরদের মুসলিম নিধনের প্রতিবাদ জানান।
উল্লেখ্য, পূর্ব তুর্কিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের ৭৭ তম এবং ৮৮ তম বার্ষিকী ১২ নভেম্বর ২০২১ সারা বাংলাদেশে পালিত হয়েছে। চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘুদের উপর চীনা নৃশংসতা, বিশেষ করে উইঘুর মুসলিমদের উপর গণহত্যা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে সেই বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে। চীনের উইঘুরদের উপর নিপীড়নের অভিযোগ এনে মানবাধিকার গোষ্ঠী, এনজিও এবং অন্যান্য সংস্থা ১২ নভেম্বর সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
ঢাকায় দিবসটি উপলক্ষে, উইঘুরদের ওপর চীনা নিপীড়ন তুলে ধরতে বাংলাদেশ সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাব এর সেমিনার হলে আলোচনা সভা করেন দেশের প্রখ্রাত ওলামা ও ইমামরা। বক্তারা চীনে উইঘরদের উপর চীনা নপিীড়ন বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন।
শাহবাগে বাংলাদেশ সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের ব্যানারে অনন্য উইঘুর মুখোশ এবং পতাকা ব্যবহার করে চীনকে নিন্দা করে অনেক দর্শকের উপস্থিতিতে একটি পথনাটক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনটি জাতীয় জাদুঘরের সামনে ব্যানার, পোস্টার ধারণ করে একটি মানববন্ধনেরও আয়োজন করেছিল, যেখানে মানুষ মানববন্ধনে অংশ নিতে/দেখতে জমায়েত হয়েছিল। দিবসটি উপলক্ষে দেশের দক্ষিণাঞ্চল খুলনায় পৃথকভাবে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে।
এস/এ