সাহেবগঞ্জে সাঁওতাল ও বাঙালী কৃষকদের ৪ফসলী জমিদখলের চেষ্টা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার
নিজস্ব প্রতিবেদক : গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মে সাঁওতালদের ভূমি উদ্ধারে শহীদ মিনারে স্মরণ ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত।
সাহেবগঞ্জে সাঁওতাল ও বাঙালী কৃষকদের ৪ফসলী জমিদখলের চেষ্টা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার
হত্যার বিচার ও ভুমি উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে- সমাবেশে বক্তাগণ শনিবার, সকাল ১১ টায় গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জ- বাগদাফার্মের ভূমি উদ্ধার আন্দোলনের ৫ বছরে এবং এই ঘটনার বিচারের দাবিতে ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য প্রদান করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ আসাদের ছোটভাই নুরুজ্জামান, বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক হারুনুর রশীদ, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনিরুদ্দীন পাপ্পু, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আখচাষী নেতা আনসার আলী দুলাল, ভূমিহীন সমিতির সুবল সরকার এবং সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম সংগ্রাম কমিটির সভাপতি আদিবাসী নেতা বার্নাবাস টুডো, রমিলা কিসকু, রাফায়েল হাসদা, আদিবাসী-বাঙ্গালী নেতা জাফরুল ইসলাম প্রধান, আরিফুল হক মিজান, তাজুল ইসলাম, আদিবাসী নারীনেতা মেনা হেমব্রং।
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের লিখিত-সংহতি বক্তব্য পাঠ করেন বিশিষ্ট শিল্পী বীথি ঘোষ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটির অন্যতম সদস্য জাকিয়া শিশির।
সভায় রাজনৈতিক, নাগরিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন- ভাসানী অনুসারী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রিজু ও মোহাম্মদ ইসমাইল, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমÐলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দীপক রায় এবং ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তাফা প্রমুখ। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গোবিন্দগঞ্জের কয়েকশত আদিবাসী এবং বাঙ্গালী।
সমাবেশে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ’২০১৬ সালে গাইবান্ধায় আদিবাসীদের ওপর গুলি চলেছে। এখন মন্দিরে হামলা হচ্ছে। তেলের দাম বাড়ছে, খাদ্যের দাম বাড়ছে। অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলন সহজে থামবে না। গুলিতে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ওই এলাকার আন্দোলনরত সকল নাগরিককে বিশেষ চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার ঘোষণাও দেন তিনি। ২০১৬ সালে যখন সরকারী বাহিনী আপনাদের উপরে গুলি চালালো তখন আমরা ভেবেছি গুলিতো গোবিন্দগঞ্জের মানুষের উপর হয়েছে, উপজাতিদের উপরে হয়েছে। আমার তো কিছু হয়নি।
কিন্তু ২০১৬ সাল গেল, ২০২১ সালে পীরগঞ্জের কাহিনী গেল। কালকে থেকে কি হল? আমরা যারা সুখে ছিলাম তাদের গাড়ি-ঘোড়ায় চলা বন্ধ হয়ে গেছে। তেলের দাম বেড়েছে। খাবার দাম বেড়েছে। এই যে অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন সেটা সহজে থামবে না।
আজকে প্রধানমন্ত্রী বিদেশিদের কাছে আর ভিক্ষা চাইয়েন না। আপনি গোপালগঞ্জে গিয়ে বিশেষ ইকনোমিক জোন করুন। এতে সেখানকার লোক খুশি হবেন এবং বঙ্গবন্ধুও কবরে বসে আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আপনি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেন। তিনি ডাকাতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তাই উপজাতিদের জমি তাদের ফিরিয়ে দিন, তাদের উপর গুলি চালাতে নিষেধ করুন।’
সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর বলেন, ’সরকারের সাথে চুক্তি এবং আইনানুযায়ী আদিবাসীদের জমি ফেরত দিতে হবে।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ’গত ৫০ বছর ধরে সরকারগুলো একটা কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে তা হলো মুসলমানদের হিন্দুদের বিরুদ্ধে, বাঙ্গালীদের আদিবাসীদের বিরুদ্ধে, পাহাড়কে সমতলের বিরুদ্ধে বিভাজিত করার চক্রান্ত করছে। এই বিভাজনের বিরুদ্ধে আদিবাসী-বাঙ্গালী একসাথে মিলে তাদের ভূমি-জমি অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে। ঐক্যের দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছে।’
মোশাররফ হোসেন নান্নু বলেন, ’এই সরকারের উন্নয়ন হচ্ছে অধিকারহীন মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়া।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জ- বাগদাফার্মের মানুষরা যে দাবি এখানে তুলে ধরেছেন তাতে এই সরকারের লজ্জ্বা পাওয়া উচিৎ। এই রাষ্ট্রের লজ্জ্বা পাওয়া উচিৎ- বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লজ্জ্বা পাওয়া উচিৎ। একদিকে উন্নয়নের বুলি, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য মাঠ গরম করা, অন্যদিকে পাহাড়ে জমি দখল করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে রিসোর্ট হোটেল বানাবে, কোথাও ইকোনমিক জোন করবে। তিনি বাগদাফার্ম এলাকার জনগণের জমি সসম্মানে ফেরত দেয়ার জোর দাবি জানান।’
গোবিন্দগঞ্জের আদিবাসী বার্নাবাস টুডো বলেন, ’এতো উন্নয়নের কথা শুনি কিন্তু দেখি নাতো উন্নয়ন! যারা লুটেরা খালি তাদেরই উন্নয়ন হচ্ছে। গরিবরা আরো গরিব হচ্ছে। আমাদের জমি ফেরত না দিয়ে ভাওতাবাজি দেখানো হচ্ছে।’
আদিবাসী নারীনেতা মেনা হেমব্রং বলেন, ’আমরা আমাদের জমি থেকে কোথাও যাব না। আদিবাসীদের কোনো মূল্যান করা হয়না। এখনো পুলিশ আমাদের হয়রানি করে চলেছে। আমাদের বাচ্চারা ভয়ে নানার বাড়ীতে থাকে। এমনতো আমরা কখনো চাইনি। আমরা নিজের জমি চাই, শান্তি চাই।’
সভাপতির বক্তব্যে সমাবেশস্থল থেকে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়ার দাবি তোলেন, ’গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জ- বাগদাফার্মের মানুষরা তাদের পৈত্রিকভূমি নিঃশর্তে ফেরত দিতে হবে। সকল মিথ্যা মামলার প্রত্যাহার করতে হবে। পাঁচ বছর পূর্বে আন্দোলনে শহীদ শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডুর হত্যার অতিসত্বর বিচার হতে হবে এবং এর সাথে সাথে তিনি ওখানকার বসতিতে অগ্নি-সংযোগ, লুটপাট ইত্যাদির বিচার দাবি করেন। বিশেষ ইকোনমিক জোন স্থাপন উদ্যোগ বন্ধ ও আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে।
এস/এ