ক্ষুব্দ হলেও কৌশলগত কারণে এখনই ব্যবস্থা নয় জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিভিন্ন সময়ের কর্মকান্ড ও দলের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের “ম্যানেজ” করে চলার কারণে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই ক্ষুব্দ গাজীপুরের মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এর উপর। তবে দলের বৃহত্তর স্বার্থে এখনই তার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থার পরিবর্তে সতর্ক-বার্তাকেই গ্রহণযোগ্য সমাধান হিসেবে দেখছেন তারা। ঢাকার পার্শ্ববর্তী আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গাজীপুরে এই মুহূর্তে সাংগঠনিক ভাঙ্গন তৈরি হলে তা বিরোধী পক্ষের জন্য বড় সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারকরা। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কর্মকাণ্ড এবং অডিও আলাপকে ঘিরে সড়ক অবরোধের মতো জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধেও দলের কঠোর হওয়া উচিত বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন, গাজীপুর মেয়র তার সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক বিভাগের একটি কাজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতা মেয়র বিরোধীপক্ষকে উস্কে দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছেন। গাজীপুর মেয়র এর সাথে আওয়ামী লীগের ওই নেতার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে থাকলেও গত কয়েক মাসে তাতে বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এমনকি প্রভাবশালী সেই মন্ত্রীর ফোন কল পেও গাজীপুরে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নি সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তাই সুযোগ বুঝে এখন জাহাঙ্গীর আলমকে একহাত নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের ওই শীর্ষনেতা। এমনটাই দাবি জাহাঙ্গীর আলম সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট গাজীপুর মহানগরে বিভক্তি চায় না কেন্দ্র। তাই এ যাত্রায় রক্ষা পাচ্ছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বক্তব্য নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ক্ষুব্দ হলেও কৌশলগত কারণে এখনই জাহাঙ্গীরকে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করেন সিটি মেয়র হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমের গাজীপুরবাসীর কাছে একটি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের বিভক্তিকে আরও প্রকট আকার না দিয়ে সতর্কবার্তাতেই আপাতত সংকট মোকাবেলা করতে চায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
দলের একাধিক নীতিনির্ধারণী নেতা মনে করেন, ঘরোয়া পরিবেশে কথা বলার মধ্য থেকে খণ্ডিত অংশ নিয়ে কারো বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে সরাসরি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা আদর্শ পরিপন্থী মন্তব্য বলা যাবে না। আনুষ্ঠানিকভাবে যদি কেউ কোন সভা সেমিনারে জাতির পিতাকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করেন বা দলের শৃঙ্খলা বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড করেন তাহলে তাকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের যে মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে তা একটি খন্ডিত অংশ। তাছাড়া দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের স্বার্থেও জাহাঙ্গীর আলমের বিরোধী শক্তি এটিকে ব্যবহার করেছে। পুরো ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের বিরোধী শক্তি বিষয়টি নিয়ে যতটা না সুবিধা নিয়েছে তার চেয়ে বেশি সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছে জাহাঙ্গীর বিরোধী ঘরোয়ানার আওয়ামী রাজনীতিবিদরা।
আগামী ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবার সকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী সারাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে ওই বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের ভিডিও দলের নীতিনর্ধারণী সর্বোচ্চ ওই ফোরামে সিদ্ধান্ত হবে।
একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, জাহাঙ্গীরকে সংগঠন থেকে বাদ দিয়ে এই মুহূর্তে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এলাকায় দলের বিভক্তি চায় না কেন্দ্র। জাহাঙ্গীর আলম আমি লীগ নেতার পাশাপাশি গাজীপুরের নির্বাচিত সিটি মেয়র। তাই তাকে এই মুহূর্তে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হবেন। জনসমাগমসহ যে কোন বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে জাহাঙ্গীর দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে নির্ভরযোগ্য।আসন্ন জাতীয় ও সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করতে ঢাকার পড়ে গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জ ইউনিটকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী রাখতে হবে।
এস/এ