ডিম ছেড়েছে মা মাছ, নৌকা নিয়ে হালদায় জেলেরা

ডিম ছেড়েছে মা মাছ, নৌকা নিয়ে হালদায় জেলেরা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে পূর্ণমাত্রায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ। নমুনা ডিম ছাড়ার এক দিনের মাথায় বুধবার (২৬ মে) দিবাগত রাত ১টার দিকে মা মাছ পূর্ণমাত্রায় ডিম ছাড়ে বলে জানিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারীরা।

হালদা নদীর হাটহাজারীর গড়দুয়ারা এলাকায় ডিম সংগ্রহ করছেন মোহাম্মদ ইলিয়াস। তিনি বলেন, রাত ১টার দিকে মা মাছ পূর্ণমাত্রায় ডিম ছাড়ে। এরপরই আমরা ডিম সংগ্রহ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ৪ থেকে ৫ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছি।’

শুধু মোহাম্মদ ইলিয়াস নয়, তার মতো আরও অনেকে নৌকা নিয়ে হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম সংগ্রহ করছেন। স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন, হালদা নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের আজিমের ঘাট, অংকুরি ঘোনা, কাগতিয়ার মুখ, গড়দুয়ারা নয়াহাট, বিনাজুরী সোনাইর মুখ, রাম দাশ মুন্সির ঘাট, মাছুয়া ঘোনা, সত্তার ঘাট নাপিতের ঘাট অংশে কয়েক ৩৮৩টি নৌকার মাধ্যমে ডিম সংগ্রহ করছেন জেলেরা।

হালদা নদীর মদুনাঘাট পয়েন্টে আছেন চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক বিক্রম জিৎ রায়। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ওই পয়েন্টে ৭৪টি নৌকা নিয়ে জেলেরা ডিম সংগ্রহ করছেন। এখন পর্যন্ত ওই পয়েন্ট থেকে ৭৭ বালতি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে।’

এ সম্পর্কে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, রাত আনুমানিক ১টার দিকে হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছ ডিম ছাড়া শুরু করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গত কয়েকদিন ধরে অপেক্ষায় থাকা জেলেরা নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করা শুরু করেন। ৩৮৩টি নৌকা নিয়ে প্রায় এক হাজার জেলে ডিম সংগ্রহ করছেন। কী পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করা হচ্ছে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত আমরা যতদূর খবর পেয়েছি, তাতে বিভিন্ন পয়েন্টে একেকজন জেলে ৪/৫ কেজি করে ডিম পাচ্ছেন।

সাধারণত বর্ষা মৌসুমের শুরুতে (এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে) হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। ওই সময় পূর্ণিমা বা অমাবস্যার তিথি বা জোতে যখন নদীতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় তখন মা মাছ ডিম ছাড়ে। বিশেষ করে পূর্ণিমা অথবা অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয় এবং এর সঙ্গে পাহাড়ি ঢল নামে তখন মা মাছ ডিম ছাড়ে।

এবার ডিম সংগ্রহ কম হলেও গত এক দশকের মধ্যে গত বছর ২০২০ সালে সর্বোচ্চ ডিম সংগ্রহ করা হয়। গত বছর হালদা থেকে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি। এর আগে ২০১৯ সালে গত বছর ২৫ মে রাতে ডিম ছাড়ে মা মাছ, সংগ্রহ করা হয় ২৬ মে সকালে। প্রায় ১০ হাজার কেজি ডিম থেকে রেণু মিলেছিল ২০০ কেজি। ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়, যা থেকে রেণু মিলেছিল ৩৭৮ কেজি। ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল ১৬৮০ কেজি ডিম পাওয়া যায় হালদায়। তার আগের বছর ২ মে নমুনা ডিম মেলে ৭৩৫ কেজি। ওই বছর তিনবার নমুনা ডিম দিলেও আর ডিম ছাড়েনি মা মাছ। ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল ও ১২ জুন দুই দফায় মোট ২ হাজার ৮০০ কেজি; ২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল ৪ হাজার ২০০ কেজি এবং ২০১২ সালে ২১ হাজার ২৪০ কেজি ডিম মেলে হালদায়।