ইয়াসে প্রভাবে দেশের উপকূলীয় ৯ জেলার ২৭ উপজেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল, ভেসে গেছে মাছের ঘের, মারা গেছেন ৩ জন
সাথী রায়: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ভারতের উপকূল অতিক্রম করায় বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণ মুক্ত। তবে এর প্রভাবে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের ২-৩ ফুট জলোচ্ছাস ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। লণ্ডভণ্ড হয়েছে উপকূলের ঘরবাড়ি। ভেঙে পড়েছে গাছাপাল। এতে খাদ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ নানা সংকট দেখা দিয়েছে। ভোলায় গাছের ডাল ভেঙে চাপা পড়ে মো. আবু তাহের (৪৫) নামে একজন মারা যান। ফেনীর সোনাগাজীতে জোয়ারের পানিতে ডুবে হাদিউজ্জামান (২৬) নামে একজন মারা যান। মোরেলগঞ্জের খাউলিয়ায় পানিতে ডুবে জিনিয়া আক্তার (৪) নামে এক শিশু মারা গেছে।
পদ্মায় ঢেউয়ের তোড়ে শিমুলিয়া দুই নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুন দুই ভাগ হয়ে ভেসে গেছে। ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গে তাণ্ডব শেষে ঝাড়খন্ড অভিমুখে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। পশ্চিমবঙ্গেই ৩ লাখ বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড, নিহত ৩। সতর্ক বাতায় বলা হয়, ইয়াসের প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট , ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাগুলো এবং তার আশপাশের দ্বীপ ও চরগুলোতে দমকা হাওয়াসহ ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে এসব এলাকার ওপর দিয়ে ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৬ ফুটে বেশি উচ্চতার জোয়ারের শঙ্কা রয়েছে।
ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে মূল আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। স্থানীয় সময় বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা এবং সাড়ে ১১টার মধ্যবর্তী সময়ে ঘূর্ণিঝড়টি বালাসোরের ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ দিয়ে উত্তর উড়িষ্যার উপকূল অতিক্রম করে। এসময় বাতাসের গতিবেগ ছিলো ১৩০-১৪০ কিলোমিটার। কিছু সময়ের জন্য গতিবেগ ১৫০ কিলোমিটারে উঠে যায়। বেলা দেড়টার দিকে শক্তি হারিয়ে ইয়াস শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। সন্ধ্যা নাগাদ এটি সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে নেমে আসে। তবে এর প্রভাবে প্রচুর গাছপালা উপড়ে গেছে। ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায় কলকাতার সুভাষ চন্দ্র বসু ও ভুবনেশ^রের বিজু পট্টনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এতে উড়িষ্যায় ২ জন মারা গেছেন। দিঘায় সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে একজন মারা গেছেন। শহরটিতে প্রায় দোতলা বাসের সমান উঁচু জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ে।
উড়িষ্যার ক্ষতিগ্রস্থ জেলাগুলো হলো-বালাসোর, ভদ্রক, জগৎসিংপুর ও কেন্দ্রপাড়া। পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দক্ষিণ ও উত্তর চব্বিশ পরগণা, দিঘা, পূর্ব মেদনিপুর এবং নন্দিগ্রাম। কলকাতার ১৩টি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।