চীনের ড্রোন নিয়ে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর দুঃস্বপ্ন
সাজিদ ইউসুফ শাহ : পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ চীনের তৈরি মনুষ্যবিহীন ড্রোন ত্রুটির কারনে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এতে পাক বিমান বাহিনীর সক্ষমতা গুরুতর সমস্যার মধ্যে পড়েছে।
চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের তৈরি এবং চায়না ন্যাশনাল এ্যারো-টেকনোলজি ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএটিআইসি) এর বিক্রি করা তিনটি অস্ত্র সজ্জিত বা সশস্ত্র ড্রোন পাকিস্তান বিমান বাহিনী ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে আনয়ন করে। বিমান বাহিনীর এই যুদ্ধ ড্রোনগুলো পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে একটা বৃহত্তর চুক্তির অংশ, যার মধ্যে ৫০ টি পাকিস্তানে তৈরি করা হবে।
পাকিস্তান এবং চীনা উভয় সামরিক কর্মকর্তারা গর্ব করেছিলেন যে এই সশস্ত্র ড্রোনগুলি, বায়ু বা স্থলভিত্তিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ ও ধ্বংস করার জন্য লেজার-নির্দেশিত বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম, এটা উঁচু এলাকায় ভরতীয় স্থল গঠনকে দুঃস্বপ্ন উপহার দেবে। কিন্তু এই সশস্ত্র ড্রোনগুলির মারাত্মক ত্রুটি এখন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্য একটা দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীনা ফার্ম প্রদত্ত করুন সেবা ও রক্ষণাবেক্ষণ পাক বিমান বাহিনীর দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। গ্রাউন্ডেড বিকল ড্রোনগুলো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বার বার বলা হলেও চায়না সিএটিআইসি এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়ে আসছে। ফার্মের সরবরাহকৃত যন্ত্রাংশগুলি ছিল নিন্মমানের এবং বেশিরভাগ ব্যবহারের অনুপযুক্ত। বিকল ড্রোনগুলো চালু করার জন্য পাকিস্তানে পাঠানো ইঞ্জিনিয়াররা অদক্ষ বলে প্রমানিত হয়েছে। গুরুতর সঙ্কট দুর করার জন্য পাকিস্তানি কর্মকর্তারা চায়না ফার্মকে উন্নত প্রশিক্ষিত একদল পেশাদার লোক পাঠাতে বলেছে।
গুরুতর ত্রুটিগুলোর একটি হল জিপিএস সিস্টেমে সমস্যা, যা সশস্ত্র ড্রোনের একটি প্রধান উপাদান। তিনটি ড্রোনের দুটির পরীক্ষামুলক উড্ডয়নের সময় বার বার জিপিএস ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়, এজন্য বাধ্যতামুলকভাবে গ্রাউন্ড করতে হয় বা নিচে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়। একটি ড্রোনের ব্যর্থ জিপিএস হল হার্ট ফেইলরের মত। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানতে চেয়েছেন যে স্থানীয় হস্তক্ষেপের কারণে জিপিএস ব্যর্থ হচ্ছে কি না এবং যদি সেটাই হয় তবে তা হবে ড্রোনের জ্যামিং-বিরোধী ক্ষমতার সাথে আপস করা, এটা অপারেশন চলাকালে ড্রোনকে শত্রুপক্ষের একটি সহজ টার্গেট বা লক্ষ্যে পরিনত করবে।
সমানভাবে গুরুতর সমস্যা হল ইউএভি গুলোতে বসানো ইও/আইআর ক্যামেরা থেকে নাইট্রোজেনের লিকেজ, যা ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল/ইনফ্রা-রেড (ইও/আইআর) সিস্টেমগুলিকে অকেজো করে তুলেছে। এই ইমেজিং সিস্টেম বা ব্যবস্থাগুলো রাত ও দিনের এবং কম আলো পরিস্থিতির অবস্থাগত সতর্কতা সরবরাহ করে। এগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা ইও/আইআর পডগুলোর দ্রুত প্রতিস্থাপন চেয়েছে। এই ত্বরিত আহ্বানে এখনও চায়না ফার্ম সাড়া দেয়নি। ড্রোনগুলো চালু করার কয়েক ঘন্টার মধ্যে এগুলোর হাই পারফরম্যান্স সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার (এসএআর) এ গুরুতর ত্রুটি ধরা পড়ে। এই রাডারগুলি ড্রোনের ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার পেলোডের ক্ষমতা দেয়ার পাশাপাশি সবধরনের আবহাওয়ায় উন্নত ভূ-স্থানিক বা ভৌগলিক গোয়েন্দা সক্ষমতা প্রদান করে। ত্রুটিপুর্ণ এসএআর বা রাডারগুলো মনুষ্যবিহীন যানগুলোকে অন্ধ করে ফেলে, অপারেশন বা চলাচলের জন্য অযোগ্য করে তোলে। চালু করা ও উড্ডয়নের সময় এই ড্রোনগুলোর আরেকটি গুরুতর ত্রুটি হল এসএটিসিওএম। স্থলে সাইট এক্সেপট্যান্স টেস্ট (এসএটি) এর সময় এসএটিসিওএম এন্টেনা ব্যর্থ হয়।
অন্যান্য ত্রুটিগুলির মধ্যে রয়েছে ইউএভি -তে পিছনের জ্বালানী পাম্পের ব্যর্থতা। মজার ব্যাপার হলো, চীনা ফার্মের সরবরাহকৃত যন্ত্রাংশ ড্রোনের সাথে মিল পাওয়া যায়নি।
একইভাবে, ড্রোনের সাথে সরবরাহ করা ডিফুয়েলিং সরঞ্জামগুলি দূষণের কারণে অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর প্রতিস্থাপনের জন্য এখনও পাক বিমান বাহিনী অপেক্ষা করছে।
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী চীনা সামরিক হার্ডওয়্যার এবং স্বল্প, নিম্নমানের পরিষেবা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অবিশ্বাস্যতা উপলব্ধি করছে, এটা এই প্রথম নয়। পাকিস্তান বিমান বাহিনী চীন থেকে আমদানিকৃত নিন্মমানের সামরিক হার্ডওয়্যার, যুদ্ধ বিমান এবং সশস্ত্র ড্রোন, অপারেশন বা যুদ্ধের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
এস/এ