বীরগঞ্জে পলাশবাড়ী ইউএসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য, আদালতে মামলা, পরীক্ষা বর্জন

বীরগঞ্জে পলাশবাড়ী ইউএসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য, আদালতে মামলা, পরীক্ষা বর্জন

দিনাজপুর প্রতিনিধি, মো. নাজমুল ইসলাম (মিলন): দিনাজপুরের বীরগঞ্জের পলাশবাড়ী ইউএসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে চারটি পদের নিয়োগে চলছে বানিজ্য, কমিটির সদস্য কর্তৃক আদালতে মামলা, আয়া পদের ৪ প্রার্থীর পরিক্ষা বর্জন, ৯ দিনেও নিয়োগ পরিক্ষার রেজাল্ট দিতে ব্যর্থ হয় কমিটি।

উপজেলার পলাশবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটার, অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতা কর্মি, আয়া সহ ৪টি পদে প্রধান শিক্ষক ফশিউল আলম চৌধুরী লিটন কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে ২/১ জন মনোপুতদের নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। তারই প্রতিবাদে নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য পিয়ারে আলম বাদী হয়ে বিজ্ঞ বীরগঞ্জ সহকারী জজ আদালত দিনাজপুরে মামলা দায়ের করেন। যার নং ২১৯/২০২১ অন্য (বীরগঞ্জ)। আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়।

আদালতে অভিযোগকারী বিদ্যালয় কমিটির নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য পিয়ারে আলম ১১ সেপ্টেম্বর শনিবার জানায়, প্রধান শিক্ষক ফশিউল আলম চৌধুরী লিটন ২/১ জন সদস্যদের নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তার মনোপুত প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে। আমার জানামতে সরকারী বিধি মতে পরিক্ষা সংক্রান্ত নিয়োগ বিজ্ঞাপন বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় (ঢাকা) ও একটি স্থানীয় (দিনাজপুর) পত্রিকায় প্রকাশের সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে বগুড়া হতে প্রকাশিত আঞ্চলিক করতোয়া পত্রিকা প্রকাশ করে এবং গত ২ সেপ্টেম্বর বীরগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধু মাত্র লোক দেখানো পরিক্ষার আয়োজন করে। ৪টি পদে ৩১ জন প্রার্থী আবেদন করলেও টাকার মাধ্যমে তাদের মনপুত ৪ জনকে নিয়ে ফেলে। আয়া পদে প্রধান শিক্ষকের মনোপুত প্রার্থী শাপলা আক্তারকে টাকার মাধ্যমে নিয়োগের সংবাদ পেয়ে বাকি ৪ জন প্রার্থী পরিক্ষা বর্জন করে এবং একটি পদে ৩ জনের কাছে টাকা নেওয়ার কারনে ২ সেপ্টেম্বর হতে ১১ সেপ্টেম্বর অদ্যাবধী রেজাল্ট দিতে ব্যর্থ হয়। আদালত মামলাটির কোন সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় আমি উচ্চ আদালতে আপিল করি।

সরজমিনে গেলে মৃত সোনা মিয়ার পুত্র আজিজুল ইসলাম জানায়, ১১ নং মরিচা ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি ও বিএনপি নেতা প্রধান শিক্ষক লিটন চৌধুরী সুনামধন্য এই বিদ্যালয়ে যোগদানের পর হতে বিদ্যালয়ের সুনাম ও পরিবেশ নষ্ট করছে। গাছ বিক্রি, নিয়োগ বানিজ্য তার জন্য কোন সমস্যা নয়। যারা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দিয়েছে, দাতা সদস্য হয়ে আছে প্রধান শিক্ষকের কাছে তাদের কোন মুল্য নেই।

জমিদাতা মৃত মিয়া হোসেনের নাতী অফিস সহায়ক পদের প্রার্থী নাহিদ ইসলাম জানায়, প্রধান শিক্ষক আমার কাছে ১০ লক্ষ টাকা দাবী করে। আমি দিতে অপারগতা স্বীকার করলে টাকার বিনিময়ে অন্যকে নেওয়া হয়। ৩ জনের কাছে টাকা নেওয়ার কারনে আজো তারা রেজাল্ট দিতে পারে নাই।

দাতা সদস্য মঙ্গলু বর্মন জানায়, মাঝে মধ্যে প্রধান শিক্ষকের চায়ের দাওয়াতে আমরা উপস্থিত হলে তিনি মিটিং এর নামে ফাঁকা স্বাক্ষর নিয়ে থাকে। আমার জানামতে নিয়োগ সংক্রান্ত কোন মিটিং হয় নাই।

বিদ্যালয়ের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা খাজা নাজিম উদ্দিন শাহা জানায়, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে ফাঁকা স্বাক্ষর চাইলে আমি বিশ্বাস করে দেই। নিয়োগ সহ সকল বিষয়ে সে আমার সঙ্গে পরামর্শ করে। ২ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরিক্ষা হলেও একটু জটিলতার কারনে অদ্যাবধী রেজাল্ট প্রকাশ করা হয় নাই।

প্রধান শিক্ষক ফশিউল আলম চৌধুরী লিটন জানায়, নিয়োগ সংক্রান্ত কোন বানিজ্য হয় নাই। সরকারি বিধি মতে ও সুষ্ঠ পরিক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে আসছে। যা আদৌ সত্য নহে। আদালত নিয়োগের মামলাটি খারিজ করে দেয়।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি মামলা সংক্রান্ত বা নিয়োগ বানিজ্যের ব্যপারে কোন তথ্য জানে না বলে জানায়।

উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার কন্দর্প নারায়ন রায় বলেন, ২ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরিক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। কি কারনে নিয়োগ বোর্ড ফোলাফল ঘোষনা করছে না আমি জানিনা।

এ ব্যপারে ডিজির প্রতিনিধি বীরগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম (উজ্জল) জানায়, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটার-১১, অফিস সহায়ক-১২, পরিচ্ছন্নতা কর্মি-৩ প্রার্থী পরিক্ষায় অংশগ্রহন করেছিলো। আয়া পদে শুধুমাত্র শাপলা আক্তার উপস্থিত ছিলো, বাঁকি ৪ জন প্রার্থী পরিক্ষায় অংশগ্রহন না করায় ঐ পদের পরিক্ষা স্থগিত রয়েছে।

ইউনিয়ন আ’লীগের সহ-সভাপতি জতিস চন্দ্র রায় বলেন, বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করে যে নিয়োগ বানিজ্য চলছে তা কারো জন্য শুভকর নয়। আমি এর তিব্র নিন্দা জানাই। নিয়োগ বানিজ্য নিয়ে এলাকায় মিশ্র পতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যে কোন মহুর্তে বড়ধরনের আন্দলন হতে পারে। তাই উর্দ্ধতন মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি সহ এলাকাবাসী।

এস/এ