নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয়লিঙ্গের প্রতি বৈষম্যমূলক হিন্দু আইন পরিবর্তনের দাবি

নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয়লিঙ্গের প্রতি বৈষম্যমূলক হিন্দু আইন পরিবর্তনের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ’বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. ময়না তালুকদার। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটক।

ময়না তালুকদার বলেন, দেশে প্রচলিত প্রথানির্ভর হিন্দু আইনে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয়লিঙ্গের মানুষ সুদীর্ঘকাল ধরে নানাভাবে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। এ আইনগুলো শতাব্দিকাল ধরে অসংশোধিত রয়েছে। কোডিফাইড না হওয়ায় আদালতে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যাঘাত ঘটছে। এই আইন বৃটিশ আমলে গৃহিত এবং সনাতন হিন্দুধর্মের সঙ্গে অসঙ্গতিপূণ। বৌদ্ধ, জৈন ও বিভিন্ন আদিবাসী গোত্রের মানুষ আলাদা ধর্মের অনুসারী হলেও তাদের সবাইকে একই হিন্দু আইনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। ধর্মের নামে এই আইন প্রচলিত হলেও বাস্তবিক অর্থে এর সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক নামেমাত্র। এসব আইন মূলত প্রথাগত।

তিনি বলেন, বৃটিশ সরকার তাদের ২০০ বছরের শাসন আমলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রথাগুলোকে আইন হিসেবে গ্রহণ করেছিল। বৃটিশ আমলেই এসব আইন বহুবার সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্জন ও পরিমার্জন হয়েছিল। বৃটিশ সরকার বিদায় নেওয়ার পর স্বাধীন ভারত, নেপাল ও মরিশাসেও হিন্দু আইন সংশোধন হয়েছে। বৈষম্যমূলক আইনসমূহ তুলে দিয়ে সেসব দেশে নারী-পুরুষ সমঅধিকার ভিত্তিক সুষম আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও হিন্দু আইন সংশোধনের কাজে হাত দেয়নি সরকার। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারেও নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনের অঙ্গিকার রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়েই শতাব্দির এই কালো অন্ধকার দুরীভূত হবে বলে ভরসা রাখছি।

ড. ময়না তালুকদার বলে, প্রচলিত হিন্দু আইন অনুযায়ী বাবা-মায়ের সম্পত্তিতে ছেলে সন্তানের উপস্থিতিতে কন্যার অধিকার নেই। পুত্র সন্তান না থাকলে কন্যা সন্তানপ্রয়াত পিতার সম্পত্তি ভোগ-দখল করতে পারে মাত্র। শুধু পিতার কেন, স্বামীর সম্পত্তিতেও নিরঙ্কুশ উত্তরাধিকার নেই স্ত্রীর। তাদের অধিকার কেবল ভরণ-পোষণ লাভ। অর্থাৎ আশ্রিত হয়ে থাকা, কিংবা বড়জোর সম্পত্তি শুধু জীবনস্বত্বভোগ করা। কেবল নারী নয়, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষও উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয় অন্ধ, বোবা, কালা এবং দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও। এই বিধান অমানবিক। তাই আমরা এক নম্বরে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
এস/এ