আমাদের পায়ে পায়ে শত্রু, বাধা ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আরো বলেন, জিয়া সেক্টর কমান্ডার কিন্তু পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে গুলি চালানোর নজির নেই। পঁচাত্তরের পরে যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেখানে, আমাদের দলেরও কিছু বেঈমান-মোনাফেক-মীরজাফর ছিল। যেমন খন্দকার মোশতাক গং। আর তার শক্তিটা ছিল জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে একটা সেক্টর কমান্ডার। সেখানে খালেদ মোশাররফ আহত হলে জিয়াকে সেক্টর কমান্ডার করা হয়েছিল। এখনো যুদ্ধাপরাধী, পরাজিত শক্তি এবং ১৫ আগস্টের খুনি, যাদের ফাঁসি হয়েছে তারা তো বটেই, তাদের ছেলেপেলে, দোসর বা বংশধররা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। পদে পদে বাধা, আমাদের চলার পথ মসৃণ না, কন্টকাকীর্ণ। তাই সতর্ক থাকতে হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময় যারা স্থানীয় দালালচক্র, যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর‑ তারা কোনো দিন চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক। তারপরও যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। বিজয় অর্জন করলো। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজিত হলো। তখন সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল তারা। এরপরে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামটা সম্পূর্ণ মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল।
তিনি বলেন, জয় বাংলা স্লোগান, যে স্লোগান দিয়ে লাখো শহীদ রক্ত দিয়েছে। সেই স্লোগান নিষিদ্ধ করলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের সব কিছু ধ্বংস করা হয়েছিল। ভাবখানা এমন হয়েছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। আবার পাকিস্তানের একটা প্রদেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেন সৃষ্ট। পাকিস্তান এসে আবার খবরদারি করবে‑অনেকের এমন আকাক্সক্ষা ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোশতাক বা রশীদ-ফারুক বিবিসিতে ১৫ আগস্টের পর যে ইন্টারভিউতে তারা সব স্বীকার করেছে। শুধু তাই না অনেক পত্রিকায়ও তাদের বক্তব্য এসেছে। যে জিয়াউর রহমান এই খুনিদের সঙ্গে সব সময় ছিল এবং জিয়াউর রহমানই ছিল মূল শক্তির উৎস। সে-ই বেঈমানিটা করেছিল। অথচ জিয়াউর রহমান ছিল একটা মেজর। স্বাধীনতার পর মাত্র তিন বছরের মধ্যে মেজর থেকে একটা প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করা হয়েছিল। সেটা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব‑সমস্ত সেনাবাহিনী যখন তিনি পুর্নগঠন করেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে ভূমিকা নেওয়ার কথা ছিল‑কেউ নেয়নি। জাতির পিতাসহ সবার লাশ ১৬ তারিখ পর্যন্ত ওই বত্রিশ নাম্বারের বাড়িতেই ছিল। কাফন-দাফনের ব্যবস্থাটুকু পর্যন্ত করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, জিয়াউর রহমান মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র, অর্থ, মাদক তুলে দিয়ে তাদেরকে বিপথে নিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি, শিক্ষার কোনো পরিবেশ ছিলো না। তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও একই কাজ করেছে। আমি ছাত্রলীগের হাতে খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম‑লেখাপড়া শিখতে হবে। ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি‑এই আদর্শ নিয়ে ছাত্রলীগকে তৈরি হতে হবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া তারা ছাত্র সমাজকে ধ্বংস করতে চেয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও ১৫ আগস্টের শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এতে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান।
ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের বাৎসরিক প্রকাশনা ‘জন্মভূমি’ এবং ‘জয় বাংলা-ম্যাগাজিনের (২য় সংস্করণ) মোড়ক উন্মোচন করেন।
এস/এ