মৎস্য খাত বাংলাদেশে স্বর্ণালী অধ্যায় সৃষ্টি করছে: মৎস্যমন্ত্রী

রেজাউল করিম

মৎস্য খাত বাংলাদেশে স্বর্ণালী অধ্যায় সৃষ্টি করছে: মৎস্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৎস্য খাত বাংলাদেশে একটি স্বর্ণালী অধ্যায় সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি।

শনিবার রাজধানীর মৎস্য ভবনে মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ, ২০২১ উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী একথা জানান।

এসময় মন্ত্রী বলেন,“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা হচ্ছে ভাতে-মাছে বাঙালির চিরন্তন বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের মৎস্য খাতকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে বিকশিত করছেন এ ধারাকে অব্যাহত রেখে মৎস্য সম্পদে বিশ্বে আমরা অনন্য-আসাধারণ জায়গায় পৌঁছে যাবো। এ লক্ষ্য নিয়ে মৎস্য খাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এবারের মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন হতে যাচ্ছে। ভাতে-মাছে বাঙালির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জায়গাতে আমরা শুধু পরিপূর্ণতাই আনবো না, বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ হবে দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।”

মন্ত্রী আরো বলেন,“‘বেশি বেশি মাছ চাষ করি, বেকারত্ব দূর করি’এ প্রতিপাদ্যে ২৮ আগস্ট থেকে ০৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন করা হবে। আগামীকাল জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন এবং সংসদ লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ৩১ আগস্ট বঙ্গভবন পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন।”

তিনি বলেন,“করোনার কারণে বিদেশ থেকে আমাদের অনেক প্রবাসীরা বেকার হয়ে দেশে ফিরছেন। স্বল্প আয়ের চাকরি বা ব্যবসা যারা করতেন তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। করোনায় সৃষ্ট বেকারদের পূনর্বাসনের ক্ষেত্রে আমাদের মৎস্য খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মাছ চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব লাঘব হচ্ছে, আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ছে এবং উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হচ্ছে। আবার মাছ রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আমরা দেশে আনতে সক্ষম হচ্ছি। পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে আমাদের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।”

তিনি আরো বলেন,“মৎস্য খাতে একটা আমূল পরিবর্তন এসেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে সরকার প্রধানের সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতা। সরকারের গৃহিত পদক্ষেপে ইলিশের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে, স্বাদ-গন্ধ ফিরে এসেছে, পরিমাণ বেড়েছে। জাটক নিধন বন্ধ করার সুফল আমাদের সামনে দৃশ্যমান। দেশের মানুষের কাছে যে মাছগুলো দুর্লভ ছিল, সেগুলো ফিরে এসেছে। বিলুপ্তপ্রায় ৩১ প্রজাতির দেশীয় মাছকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে আমরা ফিরিয়ে এনেছি এবং সেটা আমরা সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছি। মৎস্যজাত পণ্য তৈরির খাতকেও সরকার উৎসাহিত করছে। দেশের বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় অঞ্চল তথা হাওর অঞ্চল, পাবর্ত্য অঞ্চল, উপকূলীয় অঞ্চলে আমরা ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প নিচ্ছি। মাছকে নিরাপদ রাখার জন্য আমরা অভয়াশ্রম করছি। নদীতে যাতে মাছের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং মাছ বেড়ে উঠতে পারে সে জন্য প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।”

“আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য খাত অভাবনীয় ভূমিকা রাখছে। মৎস্য খাতে উপযুক্ত পদক্ষেপের কারণে আমাদের দেশীয় প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক মাছ ও অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদের বিস্তার ঘটছে। বাজারে পর্যাপ্ত মাছ রয়েছে। ফলে মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে, গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাতৃমৃত্যুর হার শিশু মৃত্যুর হার কমে গেছে।”-যোগ করেন মন্ত্রী।

মন্ত্রী আরো যোগ করেন,“২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মাছের মোট উৎপাদন হয়েছে ৪৫ লাখ ৩ হাজার মেট্রিক টন। মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও স্বীকৃতি। বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ ৩য়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম, ইলিশ উৎপাদনে ১ম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী চাষকৃত মৎস্য উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার ধীরগতিসম্পন্ন হলেও বিগত এক দশকে আমাদের মৎস্য উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির ধারা ৯.১ শতাংশ, যা বিশ্বের মূল উৎপদানকারী দেশসমূহের মধ্যে ২য় অবস্থান।”

মন্ত্রী আরো বলেন,“মৎস্য খাদ্যে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান আছে কীনা তা পরীক্ষার জন্য আমরা আন্তর্জাতিকমানের পরীক্ষাগার করেছি। মাছ রপ্তানির জন্য পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে, যাতে বিদেশে পাঠানো মাছের চালান দেশে ফেরত না আসে। দেশের অভ্যন্তরের বাজারেও নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। মৎস্য সম্পদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সব জায়গায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

“মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির পথে আমরা কেউ যেন ক্ষতিকর ভূমিকায় অবতীর্ণ না হই। বিষাক্ত কোন খাবার দিয়ে মাছ আমরা বাড়াবো না। অপরিকল্পিতভাবে মাছের চাষবাদ করবো না-এসময় আহ্বান জানান জানান মন্ত্রী।

মৎস্য খাতে যারা অবদান রাখছেন, ভালো ভূমিকা রাখছেন তাদের উৎসাহিত করতে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে এ বছর বিভিন্ন খাতে মৎস্য পদক প্রদান করা হচ্ছে বলেও এসময় জানান মন্ত্রী।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, সুবোল বোস মনি ও মোঃ তৌফিকুল আরিফ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ, বিএফআরআই-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের উপপরিচালক শেফাউল করিম, নৌপুলিশের অতিরিক্ত আইজি মোঃ আতিকুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এস