কর্নেল রশিদ ও ডালিম ২১ আগস্ট ঢাকায় এসেছিল, খালেদা ও তারেকের তত্ত্বাবধানে ছিল: প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি: শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার জন্য তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এটা হতে পারে না। আলামত ধ্বংস, খুনীদের পালাতে সহায়তা ও বিচারকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা তাতেই এটি স্পষ্ট হয়।
তিনি বলেন, ২১ আগস্ট রাত ১১টার দিকে ৪ জনকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে খালেদা জিয়ার সরকার দেশ থেকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়। তাদের মধ্যে তাজউদ্দিন ছিল, একজন কারারক্ষী এবং শোনা যায় কর্নেল রশিদ এবং ডালিম সে সময় ঢাকায় এসেছিল এবং খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার তত্ত্বাবধানে ছিল। ডিজিএফআই, এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ সবাই এরমধ্যে জড়িত ছিল। কাজেই তারাই এদের রক্ষা করে এবং দেশ থেকে বাইরে যেতে সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। কারণ, যখন তারা জানলো যে আমি মরি নাই বেঁচে আছি তখন তারা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
শনিবার বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে গণভবন থেকে ভিডিওি কনফারেন্সে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রেনেড হামলার সময় ডিজিএফআই-এর এক অফিসার সেখানে ছিলেন, তিনি ফোন করে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। পুলিশের ২/৩ জন অফিসার হেডকোয়ার্টারে ফোন করেছিলেন। তাদের ধমক দেওয়া হয়েছিল, বলা হয়, তোমরা সরে যাও। একটি আর্জেস গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিল। একজন আর্মি অফিসার ওটাকে আলামত হিসেবে সংরক্ষণ করতে চেয়েছিলেন, তাকে ধমক দিয়ে সেটি নষ্ট করে ফেলা হয়। তারা গণতন্ত্রের কথা বলে, এটা কোন ধরনের গণতন্ত যে একটা জনসভায় আর্জেস গ্রেনেড মারতে পারে? একজন কারারক্ষী এরমধ্যে জড়িত ছিল। জেলখানার ভেতর গ্রেনেড পাওয়া গেল (২১ আগস্ট ব্যবহৃত গেনেডের ন্যায় আর্জেজ গ্রেনেড) এরা অনেকগুলো ক্রিমিনাল জোগার করেছিল, তার মধ্যে কিছু জেলখানা থেকে বের করে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু প্রত্যেকের হাতে যে গ্রেনেডগুলো ছিল প্রত্যেকে সেগুলো মারতেও পারেনি। রমনা হোটেলের সামনের গলিতে সেই গ্রেনেড পরিত্যক্ত পাওয়া যায় এবং কয়েকটি জায়গায় পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, আহতদের সাহায্যে পুলিশ এগিয়ে আসেনি। পুলিশ তাদের ওপর টিয়ারগ্যাস, লাটিচার্জ করলো। সরকারের যদি সহযোগিতা না থাকে তাহলে গ্রেনেড হামলা সম্ভব হতে পারে না। বিএনপির ডাক্তাররা কেউ হাসপাতালে ছিল না। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আহতদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আত্মীয় স্বজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপতাল থেকে লাশ নিয়ে যেতে দেবে না। আমরা সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম মুক্তাঙ্গনে কিন্তু সরকার করতে দিল না। আগের দিন গভীর রাতে বলা হলো মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করা যাবে না। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে করার অনুমতি দিল। এত রাতে কেন পারমিশন দিল তখন সন্দেহ ছিল। কিন্তু গ্রেনেড হামলা হবে বুঝতে পারিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা হলো। আমরা সেটার প্রতিবাদ করলাম। সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ডাকলাম। মুক্তাঙ্গনে সভা হওয়ার কথা ছিল, অনুমতি দেয়নি। মধ্যরাতে পার্টি অফিসের সামনে করার অনুমতি দিলো। তখনই সন্দেহ হল কেনো এতো রাতে অনুমতি দিলো। প্রকাশ্যে দিবালোকে এভাবে গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যা করবে, তা কখনো ভাবিনি।
সমাবেশ শেষ করে ট্রাক থেকে নামব এই সময় একজন সাংবাদিক বললেন, একটা ছবি নেব। আমি মাইক হাতে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই চারিদিক থেকে বিস্ফোরণের শব্দ। আমার চশমাটা ছিটকে পড়ে গেলো। শুধু দেখলাম আমার গায়ে রক্ত। হানিফ ভাই আমাকে ধরে আছেন, তার গায়ে গ্রেনেডের স্পিøন্টার লেগে রক্ত ছিটকে আমার গায়ে পড়ছে। আমার গায়ে একটা স্পিøøন্টারও লাগেনি। দেখলাম আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী আহত। আমি গাড়িতে উঠবো তখনই গুলি। ওই গুলিতে মাহবুব মারা গেলো, গাড়িতে আরও গুলি লাগলো।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, একটা তদন্ত কমিটি করা হয়। সেই কমিটি রিপোর্ট দিয়েছিল, পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এটা করেছে। পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এসে যদি এটা করে তাহলে সরকার-প্রশাসন কী করলো? জোট সরকার এরা অনেকগুলো ক্রিমিনাল যোগাড় করেছিল।
তার ওপর বিভিন্ন সময় হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আসার পর থেকে যখন যেখানে গেছি, বোমা হামলা হয়েছে। মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছিল, একশো বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বলেছিল, আমি প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবো না। তিনি নিজেই বিরোধী দলের নেতাও হতে পারেননি। এ দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছি। বার বার বোমা-গুলি, অনেক কিছুই তো চোখের সামনে দেখেছি। মৃত্যুকে চোখের সামনে দেখেছি, বার বার আমার সামনে মৃত্যু এসে দাঁড়িয়েছে। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
২১ আগস্টের ক্ষেত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আগস্ট মাস আসেই শোক ব্যথা-বেদনা নিয়ে। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা, আমার ভাই-বোনসহ সবাইকে হারালাম। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট চরম যন্ত্রণা ও কষ্টের। বিএনপির অত্যাচারটা শুরু হয়েছিল ২০০১ সালের ১ অক্টোবর থেকেই। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতোই নির্যাতন শুরু করেছিল।
বিএনপির সমালোনা করে তিনি আরো বলেন, তারা গুম-খুনের কথা বলে। তাদের হারিস চৌধুরী, সালাউদ্দিন আরও কে কে গুম হয়েছে বলে বেড়ায়। পরে বিদেশে খোঁজ পাওয়া যায়। কেউ ভারতে, লন্ডনে বা আমেরিকায়। আসলে তারা নিজেরা নিজেদের গুম করে রাখে। এটাও এ দেশে ঘটে, দুর্ভাগ্য।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পদক এসএম কামাল হোসেন, সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সভা পরিচালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহিদ, ১৫ আগস্টের সকল শহিদ এবং মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং সম্ভ্রমহারা দু’লাখ মা-বোন স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
এস/এ