২১ আগস্ট নারকীয় ঘটনা দুঃস্বপ্নের মত তাড়িয়ে বেড়ায় অনেককে
বিশেষ প্রতিনিধি: ২১ আগস্টের ঘটনার এত বছর পরও অনেকে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় গ্রেনেডের বীভৎস আওয়াজ, নিহতদের লাশ, আহতদের আর্তচিৎকার আর সহকর্মীদের বিলাপে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী এবং আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ দলের তৎকালীন ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক। যাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।
সাভারের মাহবুবা আকতার। গ্রেনেড হামলার পরদিন পত্রিকায় মৃতদের সঙ্গে যার ছবি ছাপা হয়েছিল। যিনি ছিলেন মৃতদের তালিকায়। ঘটনার পর ৭২ ঘণ্টা অজ্ঞান ছিলেন। মৃত মনে করে তাকে মেডিকেলের মর্গেও নেয়া হয়েছিল। পরে মাহবুবা, বলেন, নেতাদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করছিলাম, বক্তৃতা শুনছিলাম। নেত্রী শেখ হাসিনা জয় বাংলা বলার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেনেডের বিকট আওয়াজ। ঢলে পড়লাম মাটিতে। তারপর আর কিছু মনে নেই। ২৫ দিন পর কলকাতা টিএনএস হাসপাতালে প্রথম স্মৃতিশক্তি ফিরে পান তিনি। ৩০ দিন পর কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সেই সময়ে তার চিকিৎসার খরচ সম্পূর্ণভাবে শেখ হাসিনা বহন করছিলেন।
এডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল শরীরে সাড়ে তিনশ’ ¯িপ্রন্টার নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন। বাম পায়ের পুড়ে যাওয়া অংশে রক্ত সঞ্চালন নেই। শুধু কোমরের এক জায়গায় ৫২টা ¯িপ্রন্টার, পায়েও আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। সারাক্ষণ জ্বালা পোড়া করে। ব্যথায় কুকরে কেঁদে ওঠেন। গ্রেনেড হামলার এত বছর পরেও ঢাকার মোহাম্মদপুরবাসী রাজিয়ার চোখের সামনে সেদিনের প্রতিটি মুহূর্ত ভেসে উঠে। স্বপ্নগুলো সব উধাও হয়ে গেছে বলে হয়তো সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতিটিই বার বার তার চোখের সামনে ঘুরে ফিরে আসে।
আহত আরো একজন নাসিমা ফেরদৌস কয়েক বছর আগে বলেছিলেন, ঘুমের ঘোরে এখনো ২১ আগস্টের মরণঘাতি গ্রেনেডের শব্দ শোনেন তিনি। তার ভাষায় ‘ভয়ে কেঁপে উঠে বুক, ঘুম ভেঙে যায়। বড় কোন আওয়াজ শুনলেই আঁতকে উঠি। মনে হয় আবার বুঝি সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পুনরাবৃত্তি ঘটলো।’ নাসিমা ফেরদৌস জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে থাকাদের মধ্যে একজন। তার প্রতিটি মুহূর্ত কাটে যন্ত্রণায়। গ্রেনেডের আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন দু’টি পা প্রায় পঙ্গু। সর্বাঙ্গে বিঁধে রয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি ¯িপ্রন্টার। যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়েন। ঘুমের ঘোরে সেই বিভীষিকাময় নারকীয় দুর্ঘটনা এখনও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। নিজের এই অভিশপ্ত জীবনের দ্রুত পরিণতি কামনা করেছিলেন তিনি।
গ্রেনেড হামলায় আহতরা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট যে অপশক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল, তারই ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে ও শেখ হাসিনার জীবন নাশের লক্ষ্যে এই হামলা চালানো হয়েছিল।
এস/এ