৫ আগস্ট উপলক্ষে পাকিস্তানের বিদ্বেষপূর্ণ পরিকল্পনা

৫ আগস্ট উপলক্ষে পাকিস্তানের বিদ্বেষপূর্ণ পরিকল্পনা

—ড. আমজাদ আয়ুব মির্জা

টুইটারের হিডেন রুট ইউরোপ এবং এর বাইরে ভারত বিরোধী প্রচার প্রচারণার সম্পূর্ণ পরিসর উন্মোচন করেছে যার পরিকল্পনা করছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৌশলগত যোগাযোগ বিভাগ। এটা ইয়োম-ই-ইসতেহশাল(নিপীড়ন দিবস) হিসেবে আগস্টের ৫ তারিখ শুরু করা হবে। এরইমধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা পাকিস্তানের বিদেশী মিশনগুলোতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ভারত কর্তৃক কাশ্মীর উপত্যকা অবরোধের কল্পনাপ্রসূত প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে পাকিস্তান পশ্চিমা বিশ্বে ভারত বিরোধী (লাল এন্টি হিন্দু/সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতি তত্ত্ব) প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইয়োম-ই-ইশতেহসাল এবং ভারত বিরোধী বিদ্বেষী বা ঘৃণা প্রচারণার সব কাজ সমন্বয়ের জন্য ‘ইন্টারনাশনাল কোয়ালিশন রেড ফর কাশ্মীর’ নামে একটি সংগঠণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

এসব কাজ করার জন্য পাকিস্তানের স্পন্সর করা/সমর্থন করা বেসরকারী সংস্থা বা সংগঠণসমূহ, লবিস্ট, কূটনীতিক, ইউ সংসদ সদস্য, ইউএস কংগ্রেসম্যান এবং বিদেশে বসবাসরত পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতদের সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় জড়ো করা হচ্ছে।

সরোচ্চ সংখ্যক ভারতীয় বিদেশী মিশনের সামনে মোমবাতি প্রজ্বলন ও বিক্ষোভ করা এবং অনলাইন টুইটারে ভারত বিরোধী ঝড় তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। একই নামে একটি টুইটার হ্যান্ডেল এবং একটি ফেসবুক পেজের নামকরণ প্লাস একটি এক্সক্লুসিভ ইমেইল অ্যাড্রেস সেট করা হয়েছে।

উপরে উল্লেখিত নির্দেশনা এরইমধ্যে বিদেশে অবস্থিত পাকিস্তানি সব মিশনে পাঠানো হয়েছে এবং আগস্টের ৫ তারিখে টুইট করার জন্য মেসেজের তালিকা দেয়া হযেছে।

কিছু মেসেজ এরকম থাকবে, “ইয়োম-ই-ইসতেহসাল হল সংগ্রামরত কাশ্মীরীদের সাথে সংহতি প্রদর্শন করার দিন”, “কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ পাকিস্তানের সাথে জড়িত”, এরপর থাকবে “কাশ্মীর হল পাকিস্তানের ঘাড়ের শিরা”।

ইংরেজি এবং রোমান উর্দুতে মোট ২০ টি মানসম্পন্ন মেসেজের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে।

সবার কাছেই উদ্ধতভাবে টুইট করার আহ্বান করা হয়েছে যে, কাশ্মীরে রক্তপাত থামাতে বিশ্বকে এগিয়ে আসা উচিৎ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পাকিস্তান সব ধরনের মানবাধিকার লংঘন এবং পাকিস্তানের দখল করা কাশ্মীরে (পিওকে)ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যাকান্ড অব্যাহত রেখেছে।

পিওকে’র আইন সভার কারচুপির নির্বাচনের একদিন পর ২৬ জুলাই নিলুম উপত্যকার শার্দায় আধাসামরিক বাহিনী কমপক্ষে একজন যুবককে গুলি করে হত্যা করে এবং পিওকের পুলিশ সদস্যসহ ২৫ জনের বেশি লোককে আহত করে।

২১ জুন ভারতের কেন্দ্র শাসিত জে-কে (জম্মু ও কাশ্মীর) তে বসবাসকারী জন্মগতভাবে মুসলিম বুদ্ধিজীবী এবং মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে আন্ত ধর্মীয় সম্প্রীতির অক্লান্ত প্রচারক এবং সনাতন ধর্মের একজন বিখ্যাত বিশ্বাসী পিওকে বংশোদ্ভুত কানাডিয়ান নাগরিক ডক্টর গুলাম আব্বাসের কোটলির বাসভবনের দরজায় বহুবার গুলি করা হয়েছে। পিতার অন্তেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে তিনি কানাডার টরেন্টো থেকে এসেছিলেন।

ভারত কর্তৃক আলাদা প্রদেশ হিসেবে বিশেষ মর্যাদা বাতিল এবং জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করার বিষয়ে ৫ আগস্ট সংক্রান্ত অনলাইনে বিতরনের জন্য চার পাতার দীর্ঘ প্যামফ্লেট লেখা হয়েছে। এর টেক্সটটা শুরুই হয়েছে বিদ্বেষপূর্ণ সাম্প্রদায়িক ভাষায়, এর প্রথম বাক্যেই ভারতীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)কে “হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি” হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে এখন এই দল দুটি ভুলে গেছে যে, সাম্প্রদায়িকতার (দ্বিজাতি তত্ত্ব) উপর ভিত্তি করে হিন্দুস্তানের জীবন্ত শরীরের উপর প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তান রাষ্ট্র খোদাই করা হয়েছে।

৫ আগস্ট লন্ডনের ভারতীয় হাই কমিশনের সামনে বেলা ১.০০ টায় এবং অন্যান্য স্থানে বেলা ২.০০ টায় বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। লন্ডনের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ভুয়া ‘ব্রিটিশ কাশ্মীরীরা যারা জম্মু ও কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ) সমর্থিত বলে দাবি করে, জেকেএলএফ কাশ্মীর উপত্যকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন।

বিভিন্ন বিদ্বেষপূর্ণ বা ঘৃণা প্রদর্শনের বক্তব্য সম্বলিত পোস্টার, প্ল্যাকার্ড এবং ব্যানার তৈরি করেছে তথ্য মন্ত্রণালয় এবং এগুলো ডিপ্লোম্যাটিক লাগেজে করে বিভিন্ন বিদেশী মিশনে পাঠানো হয়েছে।

রেড ফর কাশ্মীরের পেছনে প্রধান যে সংগঠণ তা হল স্ট্যান্ড উইথ কাশ্মীর, কাশ্মীরের বাস্তব অবস্থার ব্যাপারে কিভাবে ভুল তথ্য ও ঘটনা বিকৃত করে প্রচারণা চালাতে হবে সেই বিষয়ে এই সংগঠণ বিশ্বব্যাপী শিক্ষা দিয়ে থাকে।১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর পাকিস্তান যখন জম্মু ও কাশ্মীরে আক্রমণ করেছিল সেই সময়েই এই সংগঠনের জন্ম।

যে আদর্শ পুরো এই প্রচারণা পরিচালিত করছে তা ওহাবি মতবাদের রক্ষণশীল ব্র্যান্ডই প্রকাশ করে এবং সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলো উদারভাবে এতে অর্থ সহায়তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রেরে পেনসিলভানিয়া ভিত্তিক লাফায়েত কলেজের সহকারি অধ্যাপক হাফসসা কানজওয়াল স্ট্যান্ড উইথ কাশ্মীরের বর্তমান মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন।

রেড ফল কাশ্মীরের সমর্থকদের মধ্যে একজন হলেন রিয়ানন। অন্যরা হলেন অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিক অ্যান্ড্রু বার্টলেট, তিনি কুইন্সল্যান্ডের সিনেটার ছিলেন (১৯৯৭-২০০৮, ২০১৭-২০১৮) এবং জেকেএলএফের ইয়াসিন মালিকের স্ত্রী মিশাল মালিক।

কাশ্মীরি হিন্দু পন্ডিতদের সনাক্ত করতে এবং উপত্যকার বিখ্যাত হিন্দুদের হত্যায় জেকেএলএফ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে যা গণহত্যার দিকে নিয়ে যাচ্ছে পরবর্তীতে পন্ডিতরাসহ শত শত হাজার হিন্দু দেশান্তরিত হচ্ছে।

রেড ফর কাশ্মীরের অন্য সমর্থকরা হলেন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার কর্মী মেরি স্কালি এবং স্কটল্যান্ড ভিত্তিক মানবাধিকার কর্মী ক্লেয়ার বিডওয়েল। বিডওয়েল “লেট কাশ্মীর ডিসাইড” সংগঠনের কো-ফাউন্ডার যা তিহার জেল থেকে সন্ত্রাসী ইয়াসিন মালিকের মুক্তির পিটিশন সমর্থন করেছিল।

ইয়োম-ই-ইসতেহসালকে সমর্থনের জন্য প্রভাবশালীদের একটি বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত আছেন মেরি স্কালি, লি রিয়ানন, অ্যান্ড্রু বার্টলেট, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক জেকেএলএফের কূটনৈতিক ব্যুরো প্রধান জাফর খান, তুরস্ক ভিত্তিক গানের শিল্পী তুর্গে এভরেন, আলতাফ ওয়ানি এবং মিশাল মালিক।

কাশ্মীরে ভারতের ভূমিকাকে খারাপভাবে উপস্থাপনের জন্য ১০০০ জিবিপি পুরস্কারের ৩০ সেকেন্ডের শর্ট ভিডিও ফিল্ম তৈরির প্রতিযোগিতার আয়োজনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।সামাজিক মাধ্যমের প্লাটফর্ম জেকেটিভিকে ভারতবিরোধী প্রচারকার্যে আরও জোরদার করা হয়েছে।

জিহাদীদের সেনাদলে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ঠিক রাখতে পদাতিক সৈন্য তৈরিতে পাকিস্তানের ভিত্তি হল খুব অল্প বয়স থেকে মতদীক্ষাদান, শিশুদের জন্য একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার ঘোষনা দেয়া হযেছে। থিম বা বিষয়বস্তু? আপনি ঠিকই ধারণা করেছেন: কাশ্মীরে ভারতীয়দের তথাকথিত নৃশংসতা।

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকেল ৩৭০ ও ৩৫-এ রহিত করা হয় এবং এরপর তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের অভূতপূর্ব যুগের শুরু হয় এবং আনুপাতিক হারে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

এই দিনে নারীদের বিরুদ্ধে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য যে নারীরা অকাশ্মীরিদের বিয়ে করতে পারবেন না তা বাতিল করা হয় এবং কাশ্মীর উপত্যকায় বেসরকারী বিনিয়োগের বন্যা বইতে শুরু করে।

পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী তার ভালবাসার যে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে বলে ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন তা কখনও দিনের আলোর মুখ দেখেনি। বিপরীতপক্ষে, কাশ্মীরের হল মার্ক হিসেবে চিহ্নিত প্রতিদিন যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলত তা দুর হয়ে গেছে।

কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত বিরোধী নৈতিক ও আইনগত যুদ্ধের দুটিই হারিয়ে ফেলেছে পাকিস্তান এবং ৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে দেশটির শোরগোলের কোন মূল্য নেই।
আমাদের এখন পিওকে এবং পাকিস্তান দখলীকৃত গিলগিট-বালতিস্তান (পিওজিবি)কে পুণরায় একত্রিতকরণ এবং পাকিস্তানকে ভারতের এলাকা যা সে গত ৭০ বছর দখল করে আছে তা থেকে বিতাড়নে হিন্দুস্তানি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ওপর জোর দেয়া উচিৎ।

লেখক: লেখক ও মানবাধিকার কর্মী। তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।
এস/এ