প্রয়াত সাংবাদিক নির্মল সেন কি অস্পৃশ্য হয়ে গেলেন?

প্রয়াত সাংবাদিক নির্মল সেন কি অস্পৃশ্য হয়ে গেলেন?

———-সমীরণ রায়

প্রয়াত সাংবাদিক নির্মল সেন মারা যান ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি। সেই থেকেই একটা যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি। নির্মল সেন মারা গেছেন। এটি যেমন সত্য। তেমনি এটাও সত্য মানুষ তাকে অবহেলা করে ভুলে গেছেন।

তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন সাংবাদিক ছিলেন, এ বিষয়ে কেউ না করবেন না। কিন্তু আমি বুঝতে অক্ষম। কেন যেন তিনি অস্পৃশ্য হয়ে গেলেন? আমি যতটুকু জানি তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। যদিও ইউনিয়ন এখন দুই ভাগে বিভক্ত। ফলে দুই ইউনিয়নের বোর্ডে নির্মল সেনের নামটি ওপরে রয়েছে। এটি শুধু মাত্র রাখার জন্য রাখা বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।

নির্মল সেনের জন্ম ১৯৩০ সালের ৩ আগস্ট। আর মৃত্যু ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি। অথছ ৮জানুয়ারি তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে না বিএফইউজে ও ডিইউজে। এখন যারা বড় বড় সাংবাদিক নেতা তারা কিন্তু বিএফইউজে ও ডিইউজে থেকেই নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ সংগঠন দুটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির মৃত্যুবার্ষিকীটা পালিত হয় না। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবেরও আজীবন সদস্য ছিলেন।

নির্মল সেন বাম রাজনীতি করতেন এটি দেশের আপামর জনসাধারণ জানেন। তার দলের নাম শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল। দলটির তিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি অসুস্থ অবস্থায় আরও তিনটি দলের সঙ্গে মিলে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি করেছিলেন। ওই পার্টির তিনি সভাপতি ছিলেন। পরে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি রিমুভ করে আবার শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলে ফিরে যান।

আওয়ামী মুসলিম লীগ থাকা অবস্থায় তৎকালীন ছাত্রলীগের নির্মল সেন দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী সুমলিম লীগের ‘মুসলিম’ শব্দটি না রাখা পক্ষে ছিলেন নির্মল সেন। তাতে অনেকে রাজি না হওয়ায় তিনি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন। এখনকার অনেক নেতারাই এই খবরটি জানেন না। তাছাড়া তার বড় পরিচয় ছিলো তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

নির্মল সেন আওয়ামী লীগ রাজনীতি না করার কারণে অনেকে অনেক কথা বলেন। যদি তিনি হিন্দু না হতেন, হয়তো জামায়াত-শিবিরও বানিয়ে দিতেন। আমার কষ্ট হয়, সাংবাদিকদের মধ্যে একটি আওয়ামী ফোরাম রয়েছে। সেখানে নির্মল সেনের নামটি উচ্চারণ করা হয় না। এমনকি যারা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি থেকে এসেছেন তাদের সেখানে বড় নেতা বানানো হয়। তাহলে কি বাম রাজনীতি করার কারণে নির্মল সেন সাংবাদিকদের কাছে অস্পৃশ্য?

নির্মল সেনের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী গোপালগঞ্জের কোটালী পাড়ায় দীঘির পাড় গ্রামে তার বাড়িতে ‘নির্মল সেন স্কুল এণ্ড কলেজ’ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যা নির্মল সেন জীবীত থাকা অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটালী পাড়া গেলে তার ইচ্ছেটা প্রকাশ করেন। এতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দেন। পরে তৎকালীন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান কোটালী পাড়া গিয়ে ‘নির্মল সেন স্কুল এণ্ড কলেজ’ প্রতিষ্ঠায় সব ধরণের সহযোগিতা করবেন, এমন আশ্বাস দিয়ে আসেন। কিন্তু নির্মল সেন জীবীত থাকতে কলেজটি আর হয়নি। পরবর্তীকালে তার ভাইপো কংকন সেন (রতন) অনেক কষ্ট করে স্কুলটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখনও পাঠ অনুমোদন পর্যন্ত পায়নি।

সর্বশেষ কথা হলো-মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি অন্তত পক্ষে নির্মল সেনের শেষ ইচ্ছেটা পূরণে এগিয়ে আসবেন। কারণ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন কিন্তু হয়তো অনেকেই জানেন না, আপনার পরিবার ও পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নির্মল সেনের সম্পর্ক কেমন ছিলো। আশা করি প্রধানমন্ত্রী আপনার তত্ত্বাবধানে ‘নির্মল সেন স্কুল এণ্ড কলেজ’টি খুব শিগগিরই পাঠ অনুমোদন ও এমপিও ভূক্ত হবে।
এস/এ