সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ হবে আত্মঘাতি
—মিজানুর রহমান
মনোমুগ্ধকর চট্টগ্রামের ইতিহাস ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হলো সিআরবি। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বীর চট্টলার অগ্নিঝরা সংগ্রামের সূতিকাগার ছিল সিআরবি ও তার পাশের পাহাড়তলী এলাকা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে তৎকালীন ইপিআর বাহিনীর সদস্যদের সংগঠিত করে মেজর রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রথম গেরিলা ঘাঁটি স্হাপিত হয় সিআরবিতে। এখানেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত জিএস শহীদ আবদুর রবের সমাধি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি চর্চার মুক্তাঙ্গন ছিল চট্টগ্রাম ডিসি হিল। নানান অজুহাত ও তালবাহানায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ডিসি হিলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিলে এই সকল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ঠিকানা হয় সিআরবি’র শিরিসতলা।
প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ব্যাপ্তির অপরূপ প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের আধার নয়নাভিরাম এই সবুজারণ্য ৭০ লাখ নগরবাসীর বিশুদ্ধ বাতাসে শরীরচর্চা, প্রাতঃভ্রমণ ও বৈকালিক ভ্রমণ আড্ডার আদর্শস্হান। নগরের নানান প্রান্তের মানুষ একটু স্বস্তির সময় কাটাতে পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে বেড়াতে আসে। শান্তিতে নির্মল বাতাসে বেড়ানোই তাদের আনন্দ।
নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পুরনে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার আর তারজন্য স্হান নির্বাচন করে সিআরবি। এধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ও পরিসেবা সিআরবিতে হলে সমস্ত সবুজ অরণ্য ধ্বংস হয়ে যাবে। মানুষের কল্যাণ করতে গিয়ে পক্ষান্তরে মানুষেরই বড় ক্ষতিকরা হবে। কেউ ব্যক্তিস্বার্থে অতি মুনাফার লোভে এই ধ্বংসের খেলায় মেতেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুতরাং চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত প্রাকৃতিক হাসপাতাল তথা বিরাট অক্সিজেন ফ্যাক্টরি, সাংস্কৃতিক আয়োজনের প্রধানতম স্হান শিরিসতলাসহ সিআরবি রক্ষা করতে হবে। রক্ষা করতে হবে ইতিহাস ঐতিহ্য আর প্রকৃতি।
এখানকার সবুজ বৃক্ষরাজি ঐতিহ্য হিসেবে নগরের বুকে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। এই চত্বর মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, এই চত্বর মুজিবের জয়গানে মুখরিত হয়। এই চত্বর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শান দেয়।
সাগর তীরে পর্বতমেলার সবুজ অরণ্যে নগরায়ণে ইতোমধ্যে প্রকৃতির অনেকক্ষতি হয়েছে। মনে রাখতে হবে প্রকৃতির প্রতিশোধ মোকাবিলা করার সক্ষমতা আমরা এখনও অর্জন করতে পারিনি। তাই এই ধরনের ধ্বংসাতক সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে। সিআরবি তে হাসপাতাল নির্মাণ করা যাবে না।
লেখক : মিজানুর রহমান, সভাপতি বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদি
এস/এ