টাঙ্গাইলে নদীর ভাঙন থামছেই না, শতাধিক ভিটেবাড়ি যমুনার গর্ভে

টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর ভাঙন থামছেই না

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর ভাঙন থামছেই না। ইতোমধ্যে শতাধিক ভিটেবাড়িসহ মসজিদ, হাট-বাজার, তাঁত কারখানা, স’মিল, আবাদি জমি ও রাস্তাঘাট যমুনার গর্ভে চলে গেছে।

ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা জিও ব্যাগও কাজে আসছে না। ফলে চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন যমুনা তীরবর্তী বাসিন্দারা।

যমুনা নদীর কোলঘেঁষা টাঙ্গাইল সদর উপজেলা, কালিহাতী, নাগরপুর ও ভূঞাপুর উপজেলায় ভাঙন শুরু হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্প্রতি ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। সদর উপজেলার চরপৌলী, মাকরকোল, কেশবমাইঝাইল, তিতুলিয়া, নয়াপাড়া, কুকুরিয়া, বারবাড়িয়া, দেওরগাছা, রশিদপুর, ইছাপাশা, খোশালিয়া, চানপাশা, নন্দপাশা, মসপুর, কালিহাতী উপজেলার আলীপুর, ভৈরববাড়ী, ভূঞাপুর উপজেলার ভালকুটিয়া, নাগরপুর উপজেলার পাইকশা মাইঝাইল, খাষঘুণি পাড়া, খাষতেবাড়িয়া ও চর সলিমাবাদ এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেশি।

সরেজমিন দেখা যায়, সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের চরপৌলী গ্রামে এক সপ্তাহে দেড় শতাধিক ভিটেবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া যমুনার পেটে চলে গেছে মসজিদ, হাটখোলা, তাঁত কারখানা ও স’মিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড হাটখোলাটি রক্ষার জন্য জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ৩০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলেছিল। পরে ব্যাগগুলোও যমুনার তীব্র স্রোতে তলিয়ে গেছে।

চরপৌলী গ্রামের বাসিন্দা তাঁত শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এক দিনেই আমার ভিটেবাড়িসহ দুইটি ঘর গিলে খেয়েছে। এক সপ্তাহের ভাঙনে আমার ২৪ শতাংশ জমির মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ চলে গেছে নদীতে। এখন আমার থাকার জায়গাটুকুও নেই। পরিবার নিয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছি।’

চরপৌলী ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আল আমিন মোল্লাহ বলেন, ‘এক সপ্তাহের ভাঙনে শতাধিক ভিটেবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছরই অসংখ্য ভিটেবাড়ি এভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলছে।

তবে জিও ব্যাগ না ফেলে শুকনো মৌসুমে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তা না নিলে ধীরে ধীরে এ ইউনিয়নের অস্তিত্ব থাকবে না।’

চরপৌলী ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম বাদশা বলেন, ‘এক সপ্তাহে এই ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি ভিটেবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। থাকার জায়গা না পেয়ে গাছতলায় আশ্রয় নিচ্ছে অনেকে।
ভিটেবাড়ি হারিয়ে তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেললেও কাজ হচ্ছে না। প্রায় ৩০ বছরের ভাঙনে একাধিক গ্রাম একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে। শুকনো মৌসুমে স্থানীয় বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন।

এভাবে ভাঙতে থাকলে এ ইউনিয়নও হারিয়ে যাবে।’

সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘কয়েক বছরের ভাঙনে একাধিক গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে যমুনা নদীর পেটে চলে গেছে এ ইউনিয়নের দুই শতাধিক ভিটেবাড়ি।

এছাড়া হাট-বাজার ও মসজিদ ছাড়াও বহু স্থাপনা নদীর পেটে চলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলছে কিন্তু তাতে কোনও কাজ হচ্ছে না।’

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকা প্রতিবছরই ভাঙনের শিকার হয়। ভাঙনরোধে তিন বছর আগে একটি স্থায়ী বাঁধের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

প্রকল্পটি অনুমোদন হয়নি। জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এস/এ