ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সবচেয়ে বৃদ্ধি করেছেন সত্যেন বোস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সবচেয়ে বৃদ্ধি করেছেন সত্যেন বোস

——-অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সবচেয়ে বৃদ্ধি করেছে যেই মানুষটি সেই হলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু যাকে সত্যেন বোস বলেও অনেকে ডাকে। উনি প্রমান করে গিয়েছেন কার্জন হলের মত জায়গায় বসে, পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ারম্যানের সেই অফিস কক্ষে বসে একা একা বিশ্বমানের না শুধু বিশ্বখ্যাত অমর কাজ করা সম্ভব। কল্পনা করা যায় যে ওই রুমে কোয়ান্টাম স্ট্যাটিস্টিক্সের জন্ম হয়েছে। আমরা সব সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবের কথা উঠলে সত্যেন বোসের এই কাজের কথা বলি। বিশ্বের যেখানেই কোন সেমিনারে বক্তৃতা দিতে গেলে গর্ব করে বোসের কথা বলি।

কিন্তু তাকে সম্মান জানানোর জন্য কি করেছি? যেই ভবনে বিশ্ব খ্যাত কোয়ান্টাম স্ট্যাটিস্টিক্সের জন্ম সেই ভবনের নাম কি বোসের নামে রেখেছি? সেখানে কি বোসের ভাস্কর্য বানিয়েছি? যদি করতাম তাহলে নতুন প্রজন্ম উৎসাহিত হতো। বোসের নামে একটি সেন্টার বানানো হয়েছে অনেক বছর আগে। সেই সেন্টারের নেই কোন নিজস্ব ভবন, নাই সেখানে নিজস্ব গবেষক। বলতে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে অবহেলিত একটি সেন্টারের নাম এটি। অনেকবার বিভিন্ন মিটিং-এ বলেছি কিন্তু কেউ তেমন গুরুত্ব দিয়ে শুনেনা। কলকাতায় বোসের নামে একটি সেন্টার আছে। বিশাল জায়গাজুড়ে মনোরম পরিবেশে তৈরী সেই সেন্টার। ২০ থেকে ৩০ জনের মত পোস্ট-ডক, অনেক পিএইচডি ছাত্র এবং বিশ্বমানের অনেক গবেষক। প্রতিদিন ভালো ভালো গবেষণা হচ্ছে। আমরা কেন পারলাম না? কেন বোসের উচ্চতার সমানুপাতিক সেন্টার করতে পারলাম না?

আমাদের বাংলাদেশে বিজ্ঞানীদের আসলে মূল্যই নাই। ভারতে বিজ্ঞানীদের জন্য রাষ্ট্রীয় নানা পুরস্কার আছে যেমন Shanti Swarup Bhatnagar পুরস্কার, India Science Award, Vigyan Gaurav Award ইত্যাদি। এছাড়া পুদ্মভূষণ অ্যাওয়ার্ডতো আছেই। আমাদের এগুলো কিছুই নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতগুলো আবাসিক হলের নাম বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের নামে হয়েছে? আমাদের কুদরত-ই-খুদা, জামাল নজরুল ইসলাম, কাজী মোতাহার হোসেনসহ অনেকেই ছিলেন।

আমাদের নতুন প্রজন্মের কতজন জানে মেঘনাদ সাহার নাম? এই মেঘনাদ সাহা ঢাকার কালীগঞ্জে জন্ম, ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন। সত্যেন বোসের সহপাঠী ছিলেন। তিনিও বড় পদার্থবিদ। এস্ট্রোফিজিক্সে সাহা সমীকরণ নামে একটি সমীকরণ আছে। কলকাতায় উনার নামে বিশাল একটি রিসার্চ সেন্টার আছে যাকে বলে “সাহা ইনস্টিটিউট”! আমরা কেন করতে পারিনি? ঢাকা কলেজ কি তাকে স্মরণ করে? আমরা ছোটবেলায় জগদীশ চন্দ্র বসুকে নিয়ে গল্প পড়েছি। শুনেছি এখন আর নাই এইসব। এইগুলো যদি না থাকে তাহলে অনুপ্রেরণা আসবে কোথা থেকে? চোর গুন্ডা বদমাশদের কার্যক্রমকে আড়াল করতে এদেরকে সামনে আনা উচিত।

আগামীকাল আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। আশা করি এই না পারাগুলো করার প্রতিজ্ঞা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করা উদ্যোগ নেওয়া হবে। ফেসবুক থেকে নেওয়া