সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক : সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে আজ রোববার অভিযোগ গঠন করা হয়। আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, সিনহা হত্যা মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন বিজ্ঞ আদালত। এর মাধ্যমে আলোচিত এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি জানান, অভিযুক্ত ৬ জন আসামীর পক্ষে আদালতে জামিন চাওয়া হয়েছিল। সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আদালত। তিনি জানান- আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।

পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম জানান, সাবেক ওসি প্রদীপ ও সাবেক এসআই নন্দ দুলালের জামিন চেয়ে গত ১০ জুন আদালতে আবেদন করা হয়। কিন্তু ওইদিন আদালতে নথি উপস্থাপন না হওয়ায় শুনানীর দিন ধার্য্য করা হয়নি। গত ১৩ জুন এ নিয়ে পুনরায় আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে শুনানীর জন্য ২৭ জুন দিন ধার্য করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত কনস্টেবল সাগর দেব ১০ মাসেরও বেশি সময় পলাতক থাকার পর গত ২৪ জুন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন প্রার্থনা করেন। এছাড়াও আরো ৩ আসামী আদালতে জামিন আবেদন করেছেন। আদালত তার জামিন আবেদনের শুনানি শেষে নাকচ করেছেন।

গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেক পোস্টে গুলিতে নিহত হন সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনায় ৫ অগাস্ট তার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী এবং টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ সহ পুলিশের নয় সদস্যকে আসামি করে মামলা করেন। আদালত মামলার তদন্তভার দেয় র‌্যাবকে। পরদিন ৬ অগাস্ট প্রদীপ কুমার দাশ সহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

পরে শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকারী আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) তিন সদস্য এবং সিনহা হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের মামলার সাক্ষী স্থানীয় তিনজন বাসিন্দাকে আসামি দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে সাবেক ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অপর ১২ জন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে ওসি প্রদীপ সহ ১৫ জনের নামে অভিযোগপত্র দেন। এতে টেকনাফ থানার সাবেক দুই পুলিশ সদস্য কনস্টেবল সাগর দেব ও কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে নতুন করে আসামি করা হয়। পরে কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করলেও কনস্টেবল সাগর দেব পলাতক ছিলেন দীর্ঘদিন। গত ২৪ জুন মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণেরপর বর্তমানে ১৫ আসামীই কারাগারে রয়েছেন।

মামলায় কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলো : বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, তার দেহরক্ষী বলে পরিচিত কনস্টেবল রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

আজ শুনানীতে রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম, বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এর পক্ষে এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ও এডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা। অন্যদিকে আাসামী পক্ষে ছিলেন এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, এডভোকেট দিলীপ দাস, এডভোকেট প্রতিভা দাশ, এডভোকেট চন্দন দাশ, শহীদুল আলম, শফিউল আলম সহ ২১/২২ জন আইনজীবী।

আদালতে শুনানীকালে চার্জশীট ভুক্ত ১৫ জন আসামী আদালতের কাটগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। চাঞ্চল্যকর এই মামলার ধার্যদিন উপলক্ষে সকল আসামীকে আদালতে আনায় এদিন সকাল থেকেই আদালত অঙ্গনে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। সূত্র: বাসস