বাজেট বাস্তবায়নে আমাদের এখন প্রয়োজন দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা: কৃষিমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষা, মাতৃমৃত্যু হ্রাস, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ ভারত থেকে এগিয়ে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিকে ছুঁতে পাকিস্তানের আরও কমপক্ষে ১২ বছর সময় লাগবে। বাজেট বাস্তবায়নে আমাদের এখন প্রয়োজন দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেট’ নিয়ে ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রান্তিক মানুষের দারিদ্র্য হ্রাস এবং জীবনমান উন্নয়নে অবদান রাখছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়ে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। তবে জাতির এই সূর্য সন্তানদের জন্য এই বরাদ্দকে সামাজিক সুরক্ষা খাতের বাইরে আলাদা ক্যাটাগরি রাখা যেতে পারে। সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সামাজিক সুরক্ষার আওতায় থাকাটাই যুক্তিযুক্ত। ধানক্ষেতে আগুন লাগিয়ে যারা নাটক করেছে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। দেশ এখন দানা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিখাতে দেওয়া সাবসিডি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অর্জিত সাফল্য টেকসই করতে সহায়ক হবে।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, এবারের বাজেটে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন প্রদানে নিশ্চিয়তাসহ স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশকে অগ্রাধিকার দিয়েছে যাতে স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোক্তা তৈরি হয় এবং গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান করা যায়। কৃষি আধুনিকীরণ ও কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। এক্ষেত্রে সরকার নানামুখী ভুর্তকি দিচ্ছে। বর্তমানে কোথাও খাদ্যের জন্য হাহাকার নেই বরং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, করোনার অতিমারিতে দেশে ৬ কোটি মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্রের শিকার। যার মধ্যে নতুন দরিদ্র হয়েছেন আড়াই থেকে তিন কোটি। নতুন এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও নগদ সহায়তা প্রদানে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা থাকা দরকার ছিলো প্রস্তাবিত এ বাজেটে। করোনায় যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ও আওতা অপ্রতুল। এ বাজেটকে জীবন-জীবিকার বাজেট বলা হলেও গণটিকা প্রদানের মাধ্যমে ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে না পারলে জীবন বাঁচিয়ে জীবিকা রক্ষা করা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সরকারি কর্মকর্তা, ছাত্র-শিক্ষক, ডাক্তার, পেশাজীবীসহ সকল স্তরের মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার ব্যাপারে সবাই সোচ্চার। কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে করোনার ভ্যাকসিন প্রদানে নীতি নির্ধারকদের তেমন জোরালোভাবে ভয়েস রেস করতে দেখা যাচ্ছে না। অথচ এই প্রান্তিক কৃষকরাই করোনাকালে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলো। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে টিকা প্রদানের মাধ্যমে জীবন বাঁচিয়ে প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ সহায়তা, কর্মসংস্থান, ঋণ প্রদান করা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ নিয়ে নানা প্রশ্ন থেকে যাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা ৫০০ টাকা, প্রতিবন্ধী ভাতা ৭৫০ টাকা, হিজরা ভাতা ৬০০ টাকা, মাতৃত্বকালীন ভাতা ৮০০ টাকা প্রদান করা হলেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই ভাতার পরিমাণ ১২০০ টাকা। অথচ বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ভারতের সমান বা বেশি বলে আমরা গর্ব করছি। সরকারি কর্মচারীদের পেনশান ভাতা, উপবৃত্তি, সঞ্চয়পত্রের সুদ ইত্যাদি সামাজিক সুরক্ষা খাতে অন্তর্ভূক্ত করে এই খাতের বরাদ্দকে বড় করে দেখানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশের সূর্যসন্তান। তাদের এই সম্মানজনক ভাতাকে সামাজিক সুরক্ষায় অন্তর্ভূক্ত করা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার যে কয়টি খাতে ভাতাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে তা থেকে পেনশান, উপবৃত্তি, সঞ্চয়পত্রের সুদ ইত্যাদি বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মূল বরাদ্দ ৩০%-৩৫% কমে যায়।
ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা আরও বৃদ্ধিকল্পে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা সুপারিশ প্রদান করেন। সুপারিশগুলি হচ্ছে- সামাজিক সুরক্ষা খাতে নগদ ভাতাভোগী হতদরিদ্রদের বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ১৫০০ টাকা করা। প্রস্তাবিত বাজেটে ১ কোটি ২২ লাখ ৮১ হাজার জনগোষ্ঠীকে নগদ ভাতা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। যা বাড়িয়ে কমপক্ষে ২ কোটিতে উন্নীত করা। অতি দরিদ্রদের জন্য ঘোষিত নগদ সহায়তার পরিমাণ ২৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করোনার এই অতিমারির সময় প্রতি ৩ মাসে অন্তত ৭ হাজার টাকা করে প্রদান করা। ৫০ লাখ হতদরিদ্রদের জন্য ঘোষিত নগদ প্রণোদনার আওতা বাড়িয়ে ১ কোটিতে বৃদ্ধি করা। স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক বিবেচনা না করে নগদ সুবিধাভোগীদের তালিকা স্বচ্ছতার সাথে তৈরি করা। করোনার কারণে যারা নতুন দরিদ্র হয়েছে নগদ ভাতা প্রদানে তাদেরকে বিবেচনায় আনা। জাতির সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা সামাজিক সুরক্ষা খাত থেকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা’ নামে আলাদা খাতে নেওয়া। সরকারি কর্মচারীদের পেনশনের অর্থ বাজেটে পৃথকভাবে ব্যয় দেখানো। অতি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণের সুদ মওকুফ, ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো, নারী কৃষকদের প্রনোদনায় অন্তর্ভূক্ত করা, কৃষি পেনশন প্রবর্তনসহ শক্তিশালী কৃষি কমিশন গঠন করা। প্রান্তিক কৃষকদের জন্য স্বল্পমূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান ও প্রকৃত কৃষকদের কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড এর আওতা বাড়ানো।
প্রতিযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে পরাজিত করে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি চ্যাম্পিয়ান হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-সাংবাদিক মাইনুল আলম, চ্যানেল আই এর বার্তা সম্পাদক-ড. সাকিলা জেসমিন, একাত্তর টিভির অর্থনৈতিক বিষয়ক সাংবাদিক-কাবেরী মৈত্রেয়, উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ- ড. এস এম মোর্শেদ ও সাবেক বিতার্কিক ও যুগ্ম কর কমিশনার- মেহেদী হাসান তামিম। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ক্রেস্ট, ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।