`আমি ঘর পেয়ে খুবই খুশি, আগে ছিলাম রাস্তার ভিখারি, এখন লাখপতি’

`আমি ঘর পেয়ে খুবই খুশি, আগে ছিলাম রাস্তার ভিখারি, এখন লাখপতি’

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘর পান শ্রীমঙ্গল উপজেলার বীরাঙ্গনা শিলা গুহ। উপকারভোগী এই শিলা গুহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘আমি ঘর পেয়ে খুবই খুশি। আগে ছিলাম রাস্তার ভিখারি, এখন আমি লাখপতি। শুধু বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য আমি এ পর্যায়ে আসতে পেরেছি। ভগবান তাঁকে দীর্ঘজীবী করুন। কামনা করি, বঙ্গবন্ধু ও আমার মা শেখ ফজিলাতুন্নেছার আত্মা শান্তি পাক।’

রবিবার (২০ জুন) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সারা দেশে ৫৩ হাজার ৩৪০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমির মালিকানাসহ গৃহ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় প্রান্তে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা কুড়িগ্রাম সদর, শেরপুরের ঝিনাইগাতি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা থেকে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। সারা দেশের ৪৫৯টি উপজেলা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারা।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৩০০টি পরিবারের ৬০০ শিশুসহ এক হাজার ৫০০ মানুষ এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের মাইজদিহি গ্রামের শিলা গুহ তার নতুন ঘরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দাওয়াত দেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিলা গুহ বলেন, ‘তারা (একাত্তরের শহীদরা) যেন স্বর্গ থেকে দেখতে পান আমরা সুখী হয়েছি। আমি এখনও আপনার মঙ্গল কামনা করে দুই টাকার বাতি জ্বালিয়ে পুজো করি। প্রতিদিন আমি বাতি জ্বালাই, আমার বোন যেন সুখী থাকে। আমার বোনকে যেন করোনাভাইরাস আক্রান্ত করতে না পারে। আমার বোন যেন হাজার বছর বাঁচে, সেই কামনা করি।’

তিনি বলেন, ‘আমি যুদ্ধের সময়ও ভাবতে পারিনি যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধ বয়সেও আমাকে দেখে রাখবেন। তাই আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমার একটাই দাবি, আমাকে যে ঘর দিয়েছেন সেই ঘরে একবার আসবেন। আমি আপনাকে সাতকড়া দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়াবো।’

আবেগ আপ্লুত শিলা গুহর কান্নায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। কথা বলা শেষে চশমা খুলে চোখ মুছতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকেও।

এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি খুব ভালো বক্তব্য রাখছিলেন, আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা নেবেন। আমি যদি সুযোগ পাই নিশ্চয়ই আসার চেষ্টা করবো। আপনাদের যে অবদান, আপনাদের যে আত্মত্যাগ—এই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই তো আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। আত্মত্যাগ কিন্তু বৃথা যায় না। আপনারা যারা ঘর পেয়েছেন, সবাই ভালো থাকেন এই কামনা করি।’

শেরপুরের ঝিনাইগাতি উপজেলার একজন উপকারভোগী তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘আগে আমার ঘরবাড়ি ছিল না, বাপের বাড়িতে ছিলাম। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা ঘর উপহার দিয়েছেন। সেই ঘর পেয়ে আমি অনেক খুশি হয়েছি। শুধু ঘর নয়, বিদ্যুৎ পেয়েছি, পানি পেয়েছি। পাশে স্কুল-কলেজ আছে, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারবে- অনেক সুবিধা। আমাদের ফল খাওয়ার জন্য গাছও দিয়েছেন। গাছ লাগিয়েছি আমরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের শেরপুর এলাকায় আসবেন, দেখে যাবেন। আপনি এসে দেখে যাবেন কী অবস্থায় আছি। আল্লাহ আপনার হায়াত দারাজ করুন। আপনি ভালো থাকুন, আল্লাহ যেন আপনাকে ভালো রাখেন। আমরা এখানে যারা ঘর পেয়েছি সবাই আপনার জন্য দোয়া করি।’

তিনি বলেন, ‘আপনি আমাদের এলাকায় আসলে আমাদের অনেক ভালো হবে। যে ঘর দিয়েছেন, আমি কখনোই ভাবিনি এ রকম ঘরে থাকতে পারবো। এ রকম ঘর আমি কখনও দিতে পারতাম না। সেই ঘর পেয়ে আমি অনেক অনেক খুশি। আপনার পাশে যেন আমরা থাকতে পারি সব সময়। আমাদের খেয়াল ও খোঁজ-খবর রাখবেন। আমাদের জায়গাও দিয়েছেন আপনি। মানুষের জায়গায় আমাদের আর যেতে হবে না। এমনকি আমরা দলিলও পেয়েছি।’

তাঁর কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি খুব খুশি হলাম আপনারা ঘর পেয়ে ভালো আছেন, আপনারা ভালো থাকেন। ঘরের যত্ন নিয়েন সবাই।’

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার উপকারভোগী জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমি পরিবার পালি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দুঃখের কথা বোঝেন। আমার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাইছি। আপনি আমাকে একখানা ঘর দিছেন, আমি অনেক খুশি হইলাম।’ তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আপনার হায়াত দিন। আগে ছিল কষ্ট, এখন আর নেই।’

এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব খুশি হলাম কথা শুনে। মানুষের মধ্যে যে আনন্দ এটাই তো সব থেকে বড় পাওয়া। সবাই ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন। সবাই দোয়া করবেন দেশটা যেন করোনার হাত থেকে মুক্তি পায়। দেশটা যেন শান্তির দিকে এগিয়ে যায়। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলবো।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন